‘জীবিত মানুষটারে দেখতে চাইলাম, দিলেন না। মৃত মানুষটারেও দেখতে দিলেন না। কবর কোথায় সেটাও বলতেছেন না। আমরা কবর জিয়ারতও করতে পারবো না? এটা কোন বিচার, স্যার?’
আনিসুল হকের উপন্যাস ‘আয়েশামঙ্গল’ অবলম্বনে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় ‘আয়েশা’-নাটকের সংলাপ এটি। যে সংলাপটি ইতিমধ্যে অনেককেই স্পর্শ করে গেছে। যে সংলাপে উঠে এসেছে সময়ের ইতিহাস। তিশা ও চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত ‘আয়েশা’ নামের টেলিফিল্মটি চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হয় ঈদের দ্বিতীয়দিন। দুই পর্বে। চ্যানেল আইয়ে প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবার এল চ্যানেল আইয়ের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে।
টেলিফিল্মটি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় কথা বলছেন অনেকে। প্রশংসা করছেন এমন সাহসী নির্মাণের। কিন্তু ‘আয়েশা’ নিয়ে কী বলেন ফারুকী?
প্রচুর মানুষের প্রশংসা পাওয়ার পর ‘আয়েশা’ নিয়ে ফারুকী তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে যা বলেন তা হুবুহু তুলে ধরা হলো:
‘ফিল্মমেকার হিসাবে আমরা কি করি আসলে? সময়ের চিহ্নটা ইতিহাসের বুকে এঁকে যাই। যে রকম করে আদিম মানুষেরা যে রাস্তা দিয়ে পার হতো সেখানে একটা চিহ্ন এঁকে যেতো। যেনো ইতিহাসের কাছে সাক্ষ্য দেয়া, এই সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা এসেছি। যে সময়টাতে আমরা বাস করছি, বাস করতাম, অথবা করবো, তার উপর একটা মার্কার পেনের চিহ্ন রেখে আমরা সবাই হারিয়ে যাবো। এইতো খেলা।
বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার সময়ের আনন্দ, বেদনা, অসহায়ত্ব এসব যেনো আমাদের গল্পে উঠে আসে, বিনীত ভাবে আমরা সেই চেষ্টাই করি।
“আয়েশা”-ও এরকমই একটা চেষ্টা। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ যারা কাজটার প্রশংসা করে কিছু লিখেছেন, লিখছেন।
তার মধ্যে ছোট করে হলেও একটা অভিযোগও আসছে। এটার একটা উত্তর রেকর্ডের জন্য দিয়ে রাখছি। আয়েশার সময়কাল সাতাত্তর। ফলে কেউ কেউ লিখেছেন, আজকেতো কত মানুষ গুম হচ্ছে। সেই গল্প না বলে, “পুরান আমলের গীত” গাওয়ার কি কারন?
প্রথম কথা হচ্ছে, এই সময়ের গুম নিয়ে কয়েক বছর আগে ছবিয়াল চ্যানেল আইয়ের জন্য “পুরাঘটিত বর্তমান” নামে একটা টেলিফিল্ম বানিয়েছে যেটা পরিচালনা করেছে গোলাম কিবরিয়া ফারুকী।
দ্বিতীয় কথা, মার্ক টোয়েন বলেছে (যদিও অনেকেই বলে থাকেন মার্ক এটা বলেছেন এমন প্রমান নাই, তবুও এটা তার নামেই প্রচলিত) ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় না, তবে ইতিহাস কখনো কখনো একই সুরে বাজে পুনরায় । তেমনি এক সময়ের গল্পওতো অন্য সময়ের সুরে বাজতে পারে যদি সেই সময়ে একই অন্যায় বিরাজ করে। প্রিয়জন হারানোর আর্তনাদ সাতাত্তরেও যেমন, এখনও তেমনি। ফলে এই গল্প এখনকারও, এমনকি আগামীরও যদি একই আর্তনাদ সমাজে বিরাজমান থাকে।
শিল্পী একটা রাজনৈতিক সত্তা। কিন্তু তার মানে সেটা কোনো দলের সত্তা, তাতো না। কোনো রাজনৈতিক দলকে সুবিধা-অসুবিধায় ফেলা শিল্পীর কাজ না। তার কাজ মানুষের আর্তনাদটা উপলব্ধি করা, অন্যকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করা ।
সবাইকে ধন্যবাদ।
বি:দ্র: অনেকে লিখেছে, ভাই, আপনি এইরকম কাজই করবেন সবসময়। বিনয়ের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, সেটাও কিন্তু সম্ভব না। এর পরেই আমাকে পাবেন, কমেডি আর স্যাটায়ারে। সো, গেট রেডি ফর সাম ডার্ক কমেডি। ওহ, তার আগে অবশ্য আসবে, শনিবার বিকেল। যেটাকে হার্ড হিটিং পলিটিক্যাল ড্রামা বলা যাইতে পারে।’’
দেখে নিন আলোচিত ‘আয়েশা’: