চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘ভাইজান আমার আজকের সাফল্য দেখে যেতে পারলেন না’

দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ার মনিরা মিঠুর। ছোটপর্দার দর্শকদের কাছে তিনি অতি প্রিয় মুখ। নানামাত্রিক চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। গেল ঈদুল আযহায় প্রায় ২০টির মতো নাটকে অভিনয় করেছেন মনিরা মিঠু।

এরমধ্যে তার বেশ কিছু নাটক দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়েছে। জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী ঈদ অবসর কাটিয়ে আবার নেমেছেন শুটিংয়ে। ঈদের কাজগুলোতে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ও অভিনয়ে এদিক-সেদিক নিয়ে মনিরা মিঠু কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে…।

ঈদুল আযহায় আপনার অভিনীত কাজগুলো থেকে কেমন সাড়া পেলেন?
এবার আমার অভিনীত কাজগুলো থেকে একবারে সঠিক সাড়া পেয়েছি। অন্যবার বেশি পাওয়ার কথা থাকলেও কম পেয়েছি। ইউটিউবের কল্যাণে কাজগুলো মানুষের কাছে বেশি পৌঁছেছে। পরিচালকরাও তাদের কাজের প্রতি যত্নশীল ছিলেন। এজন্য ভালোলাগা অনেক বেশি কাজ করছে। আগেও অনেক ভালো কাজ করেছি। এবারের নাটকগুলোর চেয়ে মন্দ নয়। সেগুলোও আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। তবে এবার আমার কাজগুলো সবার কাছে বেশি ফোকাস পেয়েছে।

‘২১ বছর পরে’, ‘আপন’, ‘শোকসভা’ কাজগুলো বেশি আলোচিত হয়েছে। এগুলো প্রসঙ্গে বলুন…
হিমির ‘২১ বছর পরে’ কাজটি নিয়ে তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়। গল্পের প্রতি মুগ্ধ হয়ে কাজটি করেছিলাম। অমির ‘আপন’ নাটকের সময় ‘চাপাবাজ ২’ নাটকে কাজের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু কমিটমেন্টের জায়গা থেকে চোখ বন্ধ করে না করেছি। এর আগে সঞ্জয় সমাদ্দারের মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘অমানুষ’ ওয়েব ফিল্ম করেছি। তিনি যখন একটি দৃশ্যের বিবরণ দিয়েছিলেন, ওই একটি দৃশ্য করে আমি আনন্দিত হয়েছি। গভীরে গিয়ে দৃশ্যটি করেছি। আমার ছেলে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। পরিচালককে জানিয়েছিলেন, অন্য কাউকে দিয়ে করাতে পারবে কিনা! কিন্তু আমাকেই চেয়েছিলেন। পরে এক দৃশ্য করতে গিয়ে বুঝেছি পুরো গল্প জুড়ে আমি আছি। সেখান থেকে সঞ্জয়ের প্রতি আমার বিশ্বাস জন্ম নেয়। ‘শোকসভা’র আগে জেনেছিলাম দৃশ্য মাত্র দুটি। দর্শক কাজটি খুব সানন্দে গ্রহণ করেছেন।

মাঝেমধ্যে ছোট চরিত্রে অভিনয় করেও মূল চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রী মতো আপনার কাজ আলোচনায় আসে। বিষয়টি কেমন লাগে?
দর্শকদের কাঁদানো এতো সহজ নয়। সংলাপ ছাড়া এক্সপ্রেশন দিয়ে মাত্র দুটো দৃশ্যে অভিনয় করে মানুষকে ভালো লাগানো কঠিন কাজ। প্রতিটি দৃশ্য ধরে ধরে যখন মানুষ লিখছে এটা দেখে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। নিজেকে তখন সফল মনে হয়। আল্লাহ আমাকে ইমোশনাল দৃশ্যে অভিনয়ের ক্ষমতা দিয়েছেন এজন্য তার কাছে সবসময়্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।

এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে যেতে মানসিক প্রস্তুতির ব্যাপার থাকে। সেই সময়টুকু পান?
আমাদের দেয়া হয়, কিন্তু আমরাই নেই না। ঈদের আগে এতো এতো ভালো কাজের প্রস্তাব থাকে কাকে রেখে কাকে না করবো! সবাই আমার আপন। যাদের সঙ্গে কাজ করি প্রত্যেকের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক। একটা পর একটা চরিত্রে যাওয়া বেশ কঠিন। তবে যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, আর চিত্রনাট্য যদি পছন্দ হয় আগের দিন মধ্যরাতে শুটিং থেকে ফিরে কস্টিউম গুছিয়ে পরদিন নতুন মানুষ হয়ে সেটে যাই। এক্ষেত্রে আমার সততা কাজ করে। নিজের সবচেয়ে গর্বের বিষয় হচ্ছে আমি সৎ মানুষ। আমার পেশায় শতভাগ সততা নিয়ে কাজ করি। হয়তো এজন্য কষ্ট করে হলেও প্রতিটি চরিত্রে নিজেকে তৈরি করতে পারি।

প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ার আপনার। যদি পিছনে ফিরে তাকান, কোন জিনিসটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়?
আমার ভাই (প্রয়াত অভিনেতা চ্যালেঞ্জার) এর হাত ধরেই অভিনয়ে আসা। খুব কাছের মানুষের কাছে তিনি বলতেন, ‘আমার বোন আমার চেয়ে বেশি মেধাবী। সে চিত্রনাট্য ছাড়াই অভিনয় সুনিপুণভাবে করতে পারে। কিন্তু আমি পারি না।’ ভাইজান আমার আজকের সাফল্য দেখে যেতে পারলেন না। বিষয়টি আমার কাছে অনেক বেশি আফসোসের বিষয়। যদি দেখতেন হয়তো শিশুর মতো অঝরে কাঁদতেন। তিনি অসুস্থ থাকাকালীন যখন কথা বলতে পারতেন না, তখন রেদওয়ান রনির পরিচালনায় ‘জননী সাহসিনী ১৯৭১’ নাটকে আমার আশি বছরের অন্ধ বৃদ্ধার চরিত্র দেখে ভাইজান শুধু আঙুল দিয়ে দেখাতেন আর কাঁদতেন। কিভাবে আমি এমন চরিত্র করতে পারলাম ওটাই বোঝাতেন! সেই ১২ বছর আগে কথা, তখন আমার বয়স ছিল অল্প, অভিনয়েও ছিলাম নতুন। তবে ২০০৮ সালে ‘মেরিল-প্রথম আলো’ সেরা সমালোচক পুরস্কার পেয়েছিলাম; সেই সাফল্য ভাইজান দেখেছিলেন। কিন্তু আজকের এতো এতো সাফল্যে তিনি দেখে যেতে পারলেন না।

সমসাময়িক অভিনেত্রীদের চেয়ে আপনার ‘ইয়াং ফ্যানবেইজ’ একটু বেশি। বিষয়টি খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই!
ভীষণ ভীষণ গর্ববোধ করি। পুরাতন নতুন সব পরিচালকদের সঙ্গে আমি কাজ করি। পিচ্ছি অমির কাজ করেছি। তবে এখন সে পরিচালক হিসেবে অনেক পরিপক্ক। বান্নাহও একসময় ছোট্ট ছিল, এখন সে পরিপক্ক। রাজ আমার অনেক ছোট। তার সঙ্গে কাজ করেছি। সেও আমার অনেক স্নেহের। তারাই আমাকে বিভিন্নভাবে অভিনয় করাচ্ছে। তারা আমাকে একঘেঁয়েমিভাবে উপস্থাপন করছে না। আমিও তাদের নির্মাণের ধরণ ও ইয়াং দর্শকদের চাহিদা বুঝে অভিনয়ের চেষ্টা করি। তাই অটোম্যাটিক আমার ইয়াং ফ্যান তৈরি হচ্ছে। এজন্য আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবতী মনে করি।