চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভবিষ্যতের পাঁচ বিশ্বকাপ তারকা

দেখতে দেখতে বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের লিগপর্বের খেলা শেষ হয়ে গেছে। রাত পোহালে সেমিফাইনালের রোমাঞ্চ, অপেক্ষায় ফাইনালের পথরেখা। চলতি বিশ্বকাপে তারকা খেলোয়াড়রা ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়িয়েছেন। পাশাপাশি তরুণ উদীয়মান খেলোয়াড়রাও নজর কেড়েছেন।

ইংল্যান্ড আসর যেখানে অনেকেরই শেষ বিশ্বকাপ, সেখানে অনেকেরই প্রথম বিশ্বকাপ। প্রথম বিশ্বকাপেই আবার বাজিমাত করেছেন কয়েকজন। যাদের শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা। ভবিষ্যতে চোখ রেখে এমন পাঁচ ক্রিকেটারকে খুঁজে নিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো, যাদের কথা তুলে ধরতেই এই আয়োজন।

নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
উইন্ডিজের তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের একজন নিকোলাস পুরান। বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে কেমন করেন দেখার ছিল। খুব একটা হতাশ করেননি এ উদীয়মান তারকা। দ্বাদশ আসরে উইন্ডিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী তিনিই।

বিশ্বকাপের আগে নিজের অভিষেক ম্যাচে ‘ডাক’ মেরে শুরু করেছিলেন পুরান। তবে বিশ্বকাপে ৫২.৪২ গড়ে ৩৬৭ রান করে উইন্ডিজের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবার উপরে থেকে প্রমাণ করেছেন অনেকটা পথ যেতে তৈরি তিনি।

উইন্ডিজের সহকারী কোচ রোডি এস্টউইক পাঁচ বছর আগে পুরানকে খুঁজে বের করেছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪৩ রানের ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রাডারে আসেন পুরান।

ইস্টউইক পুরানের ব্যাপারে বলেন, ‘নিকোলাসের ওপর আমার সবসময় বিশ্বাস ছিল। আমি তার প্রতিভা দেখে বিস্মিত নই। তবে যেটি আমায় বিস্মিত করেছে সেটি হল, তাকে পেতে এতো দেরি লেগেছে।’

শাহিন শাহ আফ্রিদি (পাকিস্তান)
চলতি আসরে যে কয়জন নবাগত খেলোয়াড় আলো কেড়েছেন, শাহিন শাহ আফ্রিদি তাদের মধ্যে অন্যতম। দুর্দান্ত গতি-সুইং মিশেলের বোলিং নৈপুণ্যে ওয়াসিম আকরামদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

লিগপর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে তো রেকর্ডই গড়ে বসেন শাহিন আফ্রিদি। ৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হয়ে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটি এখন তরুণ পেসারেরই।

বিশ্বকাপে সবচেয়ে তরুণ বোলার (১৯ বছর ৯০ দিন) হিসেবে ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তিও গড়েন শাহিন। সবমিলিয়ে ৫ ম্যাচে ১৬ উইকেট নেন। নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই ভবিষ্যতের তারকা হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তার প্রশংসা করে পেস বোলিং গ্রেট ওয়াসিম আকরাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই শাহিন ভবিষ্যতের তারকা। পরবর্তী প্রজন্মের পেস বোলারদের বাতিঘর।’

মুজিব-উর রহমান (আফগানিস্তান)
বিশ্বকাপটা মোটেই ভালো কাটেনি আফগানিস্তানের। ৯ ম্যাচের নয়টিতেই হেরেছে তারা। তবে দলের বাজে সময়েও দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্য দিয়ে নজর কেড়েছেন তরুণ মুজিব-উর রহমান।

পরিসংখ্যান দিয়ে মুজিবের পারফরম্যান্স স্পষ্ট করা সম্ভব নয়। টুর্নামেন্টে মাত্র ৭ উইকেট নিয়েছেন এ স্পিনার। তবে দুর্দান্ত ফ্লাইট ও বোলিং বৈচিত্র্য দিয়ে ব্যাটসম্যানদের যেভাবে বিপদে ফেলেছেন, তাতে ভবিষ্যতের তারকার হয়ে ওঠার পরিষ্কার ছাপ রয়েছে।

আভিষ্কা ফার্নান্দো (শ্রীলঙ্কা)
দলীয় পারফরম্যান্সে হতাশা লেগে ছিল শ্রীলঙ্কার সমর্থকদের চোখেমুখে। তাতে এক পশলা বৃষ্টি এনে দিয়েছেন আভিষ্কা ফার্নান্দো। আসরে মাত্র চারটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন, ২০৩ রান করেছেন তাতে। যেটি পরিসংখ্যানের বিচারে হয়তো তেমন বড় কিছু নয়, তবে উইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৪ এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৯ রানের ইনিংস দুটি দিয়ে দলকে জয় এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যা তাকে ভবিষ্যতের তারকা বানিয়ে দিয়েছে।

শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে দলের তরুণ তারকা ফার্নান্দোর ব্যাপারে বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বকাপ থেকে খুব কম ইতিবাচক দিকই পেয়েছি, অভিষেক তার মধ্যে অন্যতম। সে সত্যিই দারুণ খেলেছে। সে দেখিয়েছে কী করতে পারে। শ্রীলঙ্কার জন্য রান করেছে। সে ভবিষ্যতের তারকা খেলোয়াড়দের একজন।’

জফরা আর্চার (ইংল্যান্ড)
তাকে দলে নিতে গত দুবছরের পরীক্ষিত পারফর্মারকে শুরুতে ঘোষিত স্কোয়াড থেকে বাদ দিতে হয়েছে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড-ইসিবিকে। সেই আস্থার প্রতিদান দিতে বেশি সময় নেননি জফরা আর্চার। নিজের প্রথম মেজর টুর্নামেন্টেই বোলিংয়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন বার্বাডোজে জন্ম নেয়া ইংল্যান্ডের এ পেসার।

চলতি বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত আর্চার। পেসারদের প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভা নিয়ে জন্মেছেন ডানহাতি তারকা। গতি, বাউন্স, সুইং, ইয়র্কার ও নিখুঁত লাইন-লেন্থ, পেসারদের সব অস্ত্রই রয়েছে তার ভাণ্ডারে। টানা চার ম্যাচে তিন বা ততোধিক উইকেট নিয়েছেন আর্চার।

সবমিলিয়ে বিশ্বকাপের এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ১৭ উইকেট নিয়েছেন আর্চার। ভবিষ্যতে ইংল্যান্ডের ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বকাপ জেতা থেকে আসন্ন অ্যাশেজ, আলো ছড়ানোর ভালো সুযোগ থাকছে আর্চারেরও।