গাজীপুরে মাল্টিফ্যাবস পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ শ্রমিকের মৃত্যুর পর কারখানাটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়ের ইস্যু করা জরিমানার নোটিশে কারখানাটির বিরুদ্ধে দুই অভিযোগে দুটি খাতে ১০ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযোগগুলো হচ্ছে- অনুমোদনের চেয়ে বেশি চাপে এবং প্রধান বয়লার পরিদর্শকের ছাড়পত্র ছাড়া বয়লার চালানো।
গত ২৪ জুন কারখানাটির বয়লারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তা চালু রাখায় ৩ জুলাই তাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর মোট ১৩ জন নিহত হয়।
১৩ জনের মৃত্যুর পরেও এই লঘু দণ্ডের বিষয়ে প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় বলছে, আইন অনুযায়ী জরিমানা করা ছাড়া তাদের আর কিছু করার নেই।
এছাড়া এ ঘটনায় নিহত তিন শ্রমিককে আসামী করে মঙ্গলবার রাতে চক্রবর্তী পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আব্দুর রশীদের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ৩ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শ্রমিকরা বয়লার ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে চালু করেন। বয়লার চালুর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিস্ফোরিত হয়ে ভবনের একাংশ ধসে পড়ে ও মেশিনপত্র দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ১৩ নিহত এবং ৪০ জন আহত হন।
বয়লার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একাধিক তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে জেলা প্রশাসক ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।
বয়লার পরিদর্শক প্রকৌশলী মোঃ শরফত আলী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: গত ২৬ এপ্রিল বয়লারের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়ে মাল্টিফ্যাবস কারখানাকে প্রধান পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়। কিন্তু তারা এতদিন যোগাযোগ না করে ৩ জুলাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেদিন রাতেই দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বয়লারের মেয়াদ শেষ হওয়ার একমাস আগে তা নবায়নের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রধান পরিদর্শকের কার্যালয়ে আবেদন করতে হয়। আবেদনের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক সরেজমিন পরিদর্শন করে নবায়ন করেন। কিন্তু মাল্টিফ্যাবকে দুই মাস আগে জানানো হলেও তারা সময় মত এ ব্যাপারে আবেদন করেনি।
‘সারাদেশের বয়লার পরিদর্শনের জন্য ৭ পরিদর্শক’
সারাদেশে ৫ হাজারেরও বেশি বয়লার ঠিকমত পরিদর্শন, নজরদারি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে পরিমাণ লোকবল দরকার তা কার্যালয়ে নেই বলে জানিয়েছে প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়। সারাদেশের বয়লারগুলো পরিদর্শনের জন্য মাত্র ৭ জন পরিদর্শক রয়েছেন। পুরো কার্যালয়ে সবমিলিয়ে জনবল মাত্র ৩০ জন। এ অবস্থায় নির্ধারিত কাজ করতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হিমশিম খেতে হয়।
প্রকৌশলী শরফত আলী বলেন: আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের লোকবল সঙ্কট। যার ফলে আমরা যথাযথভাবে কাজ করতে পারছি না। একেকজন পরিদর্শকের দায়িত্বে হাজারেরও ওপরে বয়লার। যেগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করে নবায়ন করতে হয়, সনদ দিতে হয়। আমরাও তো মানুষ।
লোকবল বাড়ানোর ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে বললেও সে ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট ৫ হাজার ৩৯টি বয়লার পরিদর্শন এবং চালানোর অনুমতি দেয় প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়। নতুন রেজিস্ট্রেশন দেয় ৬৯৭টি, স্থায়ীভাবে তৈরি বয়লার পরিদর্শন করে সদন দেয় ৩২৩টিকে এবং বয়লার পরিদর্শকগন ১০৪১টি পরীক্ষা গ্রহণ করে।
এসব কাজই পরিচালিত হয় ওই ৭ জন পরিদর্শক দিয়ে।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য মালটিফ্যাবস পোশাক কারখানাটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক কাজ করেন এখানে। এই কারখানা মূলত ইউরোপের লিনডেক্স, আলদি, টম টেইলর, স্ক্যানওয়্যারসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরি করে।