চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বড় বউ হিসেবেই আফরোজা আব্বাসের সাংগঠনিক দক্ষতা

২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র যদি হয়ে থাকেন নির্বাচনের কেন্দ্রে থাকা রিটার্নিং অফিসার জেসমিন টুলি, এবার তিন সিটির নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে কোথাও না থেকে সবচেয়ে আলোচিত আরেক নারী, আফরোজা আব্বাস।

শিক্ষাজীবন থেকেই ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও আফরোজা আব্বাস এর আগে কখনও লাইমলাইটে আসেননি। কিন্তু সিটি নির্বাচনে স্বামী মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারে নেতৃত্ব দিয়ে সবার নজর কেড়েছেন। তার কারণেই অনুপস্থিত থেকেও পিছিয়ে ছিলেন না মির্জা আব্বাস।

মেয়র নির্বাচনে স্বামীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে জনপ্রিয় হয়ে আফরোজা আব্বাস কি বিএনপির কঠিন সময়ে রাজনীতিতে জোরালোভাবে সক্রিয় হওয়ার আগাম সংকেত দিলেন? অথবা স্বামীর নির্বাচনে প্রচারে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে এখন কি এরকম কিছু ভাবছেন? অনেকেরই এখন এ প্রশ্ন।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি জানালেন, রাজনীতিতে তিনি আছেন ছাত্রজীবন থেকেই। এখনও যুক্ত আছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির মহিলা দলের সহসভাপতি। কিন্তু ভবিষ্যতে বড় কোনো নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না তা নিয়ে আপাতত: ভাবছেন না। এখন স্বামীর জন্যই কাজ করে যাবেন। যদি কখনও সেরকম পরিস্থিতি আসে তখন সেটা মোকাবেলা করবেন।

সাধারণ মানুষ এবার তাকে প্রথম দেখলেও তার সাংগঠনিক দক্ষতা আগেই দেখেছেন ঢাকা ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। ওই ব্যাংকের ভাইস চেয়ারপার্সন ছিলেন তিনি।এবারের নির্বাচনে দলীয় কর্মীদের সংগঠিত করে প্রচারণা চালানো, মিডিয়াতে তার উপস্থিতি সবাইকে চমকে দিয়েছে।ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্রী হয়ে কিভাবে তিনি রাজনীতির মতো কঠিন বিষয়ে এমন সাংগঠনিক ক্ষমতা অর্জন করলেন? জবাবে আফরোজা আব্বাস বললেন, ঘর থেকেই মূলত: তার এ যাত্রা।

ঘরে তিনি সবার বড় বউ। সবাই তার মতামতকে গুরুত্ব দেয়। বাড়ির নুন কেনা থেকে শুরু করে কারো বউ বা বর পছন্দের ক্ষেত্রেও তার মতামতকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। ফলে পরিবারের মঙ্গলও নির্ভর করে তার হাতেই। তিনি বলেন, পরিবারের এই ভালোবাসা এবং সমর্থন, তার উপর স্বামীর আস্থা এবং অগাধ ভালোবাসা সবই তাকে প্রেরণা যোগায়। আর নির্বাচনে এর সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন নিজের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম। স্বামীর ব্যস্ততার কারণে তার পক্ষ হয়ে বছরের পর বছর সমাজসেবামূলক কাজের অভিজ্ঞতাও তাকে প্রত্যয়ী করেছে বলে জানালেন আফরোজা আব্বাস।

পুরো ঢাকা এবং পুরো দেশ এবারই প্রথম দেখলেও মির্জা আব্বাসের নির্বাচনী এলাকায় স্বামীর পক্ষে তিনি আগেও প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রতিটি নির্বাচনের আগে প্রত্যেক কর্মীর বাড়ি গিয়েছেন, প্রত্যেক ভোটারের কাছে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে যেহেতু একটি আসনের উপর মিডিয়ার ফোকাস থাকে না তাই তিনি সেভাবে আলোচিত হননি। এবার সেটা পেরেছেন পরিসরটা বৃহত্তর হওয়ার কারণে। আর স্বামী অনুপস্থিত থাকাটাও নজরে আসার কারণ বলে তিনি মনে করনে।

আফরোজা আব্বাস বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করেছেন তিনি স্বামীর পক্ষে প্রচারণা না করে নিজেই মেয়র নির্বাচনে দাঁড়ালেন না কেনো? কিন্তু তিনি তা মনে করেন না। বরং স্বামীর জন্য যা প্রয়োজন, যতোটুকু প্রয়োজন তাই তিনি করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। বললেন, সংসার থেকে শুরু করে রাজনীতির সকল সিদ্ধান্ত স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলেই ঠিক করেন।

সিটি নির্বাচনে সাংগঠনিক দক্ষতায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আফরোজা আব্বাস বলেন, বেগম জিয়া তার ভূয়সি প্রশংসা করেছেন, অনেক আদরও করেন তিনি তাকে। নতুন কোনো দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব না দিলেও সামনে আবার যদি নির্বাচন আসে তবে তাকে (আফরোজা আব্বাস) সবাই পাবলিক ফিগার হিসেবে আবারো দেখতে পাবে বলে জানালেন আফরোজা আব্বাস।

মির্জা আব্বাসের সাথে তার বিয়ে হয় ১৯৮৩ সালের ১৩ জানুয়ারি। একে অপরকে পছন্দ করেই বিয়ে করেন তারা। এজন্য ১৩ জানুয়ারিকে তারা তাদের ‘লাকি ডে’ হিসেবে পালন করেন। অনেক ভালোবাসা তাদের মধ্যে, বোঝাপড়াটাও অনেক বেশি।ঘরে তিন সন্তান। বড় ছেলে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ করেছেন। এমবিএ করেছেন সিঙ্গাপুর থেকে। ছেলে বিয়েও করেছেন এবং এখন দেশেই ব্যবসা কাজে নিয়োজিত। একমাত্র মেয়ে পড়ালেখা করেছেন বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে। সেখানেই স্বামীসহ সেটেল্ড। আর সবচেয়ে ছোট ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ছে।

বয়স তো কম হয়নি। তারপরও তাঁর সৌন্দর্য, স্নিগ্ধতা এতোটুকু কমেনি। কারণ কী জানতে চাইলে আফরোজা আব্বাস তার পরিচিত মিষ্টি হাসি দিয়েই বললেন, তিনি সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করেন, সবসময় হাসি-খুশি থাকেন এবং সবাইকে আনন্দে রাখতে চান। নিজেকে নিয়ে চিন্তা করেন না বরং সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করেন। ভবিষ্যতে কী হবে না হবে তা নিয়ে কোনো আগাম চিন্তা করেন না।

মামলার কারণে তাদের সময়টা এখন একটু খারাপ যাচ্ছে। তবে তিনি আশাবাদী খারাপ দিন বেশিদিন থাকবে না।