শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশেও মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস (কালো ছত্রাক) রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে এই রোগের উপসর্গ নিয়ে দেশে প্রথম কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিন দিন আগে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা আজকে স্বীকার করেছে। তাদের দাবি, বিস্তারিত রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং চিকিৎসকদের অনেকেই নিশ্চিত করে বলছেন, দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগ চলে এসেছে। আমরা এরই মধ্যেই জেনেছি, করোনায় বিধ্বস্ত প্রতিবেশী দেশ ভারতে নতুন ধরনের এ রোগটি ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। বেশ কিছু মানুষের মৃত্যুও হয়েছে সেদেশে। এছাড়াও চোখসহ শরীর অন্যান্য অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছে আরও কিছু মানুষ।
প্রতিবেশী দেশের এমন পরিস্থিতি দেখে গত ১১ মে ‘ভয়ঙ্কর ‘কালো ছত্রাক’: আমাদের সাবধান হতে হবে’ এমন শিরোনামে চ্যানেল আই অনলাইনে প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয়তে রোগটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। বিশেষ করে ভারতের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী এবং সুদীর্ঘ সীমান্ত থাকার কারণে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ উঠে এসেছিল ওই সম্পাদকীয়তে। তবে শেষ রক্ষা হলো না। আমরা জেনেছি আরও এক ব্যক্তি বারডেমে চিকিৎসাধীন আছেন এই রোগের উপসর্গ নিয়ে। গত ১৬ মে সাতক্ষীরার কমলনগর থেকে এই রোগী চিকিৎসার জন্য বারডেমে আসেন।
এই দুটি ঘটনার বাইরে আরও কোনো ব্যক্তি এমন রোগে আক্রান্ত কি না; তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্ত জেলাগুলোতে নজরদারী জোরদার করা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনের পর ব্ল্যাক ফাঙ্গাসও চলে আসায় আমরা চিন্তিত।
আমরা আগেই জেনেছি, করোনাভাইরাসের সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিরাই মূলত ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এই রোগের শিকার হচ্ছেন। এর ভয়াবহ সংক্রমণ মানুষের সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে আক্রমণ করে।
এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কারণীয় কি? যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজকেই এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ব্লাক ফ্যাঙ্গাস রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে ভয়ের কোনো কারণ নেই। কেননা তা এখনো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েনি। আগাম সতর্কতা হিসেবে ব্লাক ফ্যাঙ্গাসেন প্রতিষেধককের উৎপাদন বাড়াতে বলা হয়েছে। অন্য প্রস্তুতিও আছে।’
কিন্তু সেই প্রস্তুতি নিয়ে আর কিছু জানাননি স্বাস্থমন্ত্রী। আমরা দেখেছি করোনাভাইরাস দেশে আসার আগেও এমন ধরনের কথা বলা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত বাস্তবক্ষেত্রে তার মিল পায়নি মানুষ।
আমরা মনে করি, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে এখনই জরুরি প্রস্তুতি নিতে হবে। করোনার মতো জাতীয় কমিটি গঠন করে এর চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে তৈরি থাকতে হবে।