চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ব্লগার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার করুন: অজয় রায়

লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় সহ মুক্তমতের চর্চাকারী যুবকদের হত্যাকাণ্ডগুলোর মূল পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি করেছেন অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়। এছাড়া এসব হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়া কোন অবস্থায় আছে তা জানতে চেয়ে গোয়েন্দা সংস্থা, সরকার ও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছেন তিনি।

ছেলের হত্যার দুই বছরেও পুলিশ অভিযোগপত্র জমা না দেয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সাবেক সেনাসদস্য মেজর জিয়াকে দ্রুত গ্রেফতার করে পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ছেলে হারানো এই অধ্যাপক বলেন,’সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশকে মিনি পাকিস্তান বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ তাই দেখাচ্ছে। অসাম্প্রদায়িকতা-সহিষ্ণুতা শেখানো বইগুলো হেফাজতের প্রভাবে তুলে নেয়া হলো।’

নিহত আরেক ব্লগার রাজীব হায়দার শোভনের বাবা ডা. নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘রাজীবের পর একে একে এতোগুলো যুবককে হত্যা করা হলেও সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে লুকোচুরি চলছে। এসব খুনে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় জড়িত কিনা তা নিয়েই এখন প্রশ্ন জাগছে।’

সরকারের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের মত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আঁতাত হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন,”আপনারা বিএনপিকে জামাত ছাড়তে বলেন, আর আমরা আপনাদের বলছি হেফাজত ছাড়ুন।”

অভিজিৎ হত্যার দুই বছর পূর্তিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে ‘ মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও সামাজিক ন্যায়বিচার: কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ?”

নামের এই আলোচনায় দেশে আবারও সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা। এমনকি সরকারও এখন হেফাজতে ইসলামের মতো গোষ্ঠীগুলোর কাছে হীন স্বার্থে মাথানত করছে বলে অভিযোগ তাদের।  অন্ধকারের শক্তি বিজ্ঞানকে ভয় পায়। অথচ বর্তমান সরকার জিয়া, এরশাদের মত এই শক্তির সঙ্গে আঁতাত করছে ক্ষমতার লোভে।

মুক্তমনা লেখক-ব্লগারদের হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার নিয়ে কালক্ষেপণ এবং পাঠ্যপুস্তকে একটি গোষ্ঠীর মন রক্ষা করা দেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রের পথে নিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বেশিরভাগ আলোচক।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন,’ ১৬ বার সময় নিয়েও এখনো অভিজিৎ হত্যার  চার্জশিট দেয়া হয়নি। খুনি আর খুনের পরিকল্পনাকারীদের কোনো এক অদৃশ্য কারণে ছাড় দেয়া হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে সব সম্ভব।’

কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলের আন্তরিকতা নেই অভিযোগ করে তিনি বলেন,’ যে যত খারাপ শাসক সে ধর্মকে ততো বেশি ব্যবহার করে। এমপি লিটনের খুনিকে দ্রুত গ্রেফতার করা গিয়েছে। তাহলে ব্লগারদের হত্যাকারীরা কেনো একই আন্তরিকতায় গ্রেফতার হচ্ছে না তা প্রশ্ন জাগাচ্ছে। এখন দেশের স্বাধীনতার ইশতেহারে বলা সামাজিক ন্যায়বিচার থেকে বাংলাদেশ হাজারো মেইল দূরে সরে যাচ্ছে।’

আলোচনা সভায় দেশের সকল পর্যায়ে সাম্প্রদায়িকীকরণ হচ্ছে বলে এখনই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা। আলোচনায় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত, ভাস্কর রাশা প্রমুখ।

আলোচনা সভার আগে অস্থায়ী বেদীতে অভিজিতের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে তাকে স্মরণ করেন অধ্যাপক অজয় রায় এবং গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন।

আলোচনা সভা শেষে হাতে মোমবাতি নিয়ে আলোর মিছিল করে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের কাছে অভিজিত চত্বরে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর পর থেকে বিভিন্ন মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর হাতে তাদের ২২ জনেরও অধিক কর্মী নিহত হয়েছেন। জাফর মুন্সী, রাজিব হায়দার থেকে শুরু করে সর্বশেষ নাজিমুদ্দিন সামাদ পর্যন্ত দীর্ঘ হয়েছে এই লাশের মিছিল।

তিনি বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় একদিকে যেমন নিহতদের পরিবার ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছে, অন্যদিকে খুনিরা হয়েছে বেপরোয়া। তারা নির্বিঘ্নে একের পর এক নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে। যদি দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা যেত, তাহলে লাশের মিছিল এত দীর্ঘ হতো না। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরে এসেও তাই মুক্তবুদ্ধির চর্চা অরক্ষিত, উপেক্ষিত সামাজিক ন্যায়বিচার।

দেশের এমন অবস্থা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকারকে বেশি নজর দেওয়ার আহ্বান জানান  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক এ অধ্যাপক। এ সময় তিনি অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে অাইনের আওয়তায় আনার  দাবি জানান।

উল্লেখ্য, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ একুশের বইমেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বইমেলা প্রাঙ্গনের অদূরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে খুনিদের অতর্কিত হামলার শিকার হন প্রগতিশীল লেখক অভিজিৎ রায় এবং তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান অভিজিৎ, গুরুতর আহত হন বন্যা।

এদিকে  ২৬ ফেব্রুয়ারি রোববার মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়সহ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত গণজাগরণ মঞ্চের সকল কর্মী ও ব্লগারদের স্মরণে দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করে গণজাগরণ মঞ্চ।