চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ব্রেক্সিটই বাঁচাবে সাউথ আফ্রিকার ক্রিকেট

নিজ দেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিধিনিষেধ মেনে চলা নিয়ে বেশ নাখোশ অনেক ব্রিটিশ নাগরিক। যুক্তরাজ্যে অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়েও তাদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। এ অবস্থায় ইইউ ও বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ব্রিটেন। যাকে বলা হচ্ছে ব্রেক্সিট। যদিও নানা জটিলতায় পদে পদে খাবি খাচ্ছে দেশটির সরকার। তারপরও ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বেরিয়ে যেতে হবে তাদের।

ইইউ’র বিবেচনায় ব্রিটেনের সঙ্গে দূরতম সম্পর্কও নেই সাউথ আফ্রিকার। তারপরও ব্রেক্সিট হয়ে গেলে লাভবান হবে আফ্রিকান দেশটি। বিশেষ করে দেশটির ক্রিকেট। প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিস তো বলছেন, ধসের প্রান্তে থাকা সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেটকেই বাঁচিয়ে দেবে ব্রেক্সিট।

ক্রিকেট এখন নিছকই ব্যবসা। শুধু খেলা হিসেবে আর দেখা হয় না। সদ্যসমাপ্ত ভারত-সাউথ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম টেস্টে ধারাভাষ্য দেয়ার সময় এমনই মন্তব্য করেন শন পোলক। প্রোটিয়া সাবেক অধিনায়কের প্রধান চিন্তা তার দেশের অনেক খেলোয়াড় দেশের হয়ে খেলার বদলে ইংলিশ কাউন্টি বেছে নিচ্ছেন।

সাউথ আফ্রিকার অনেক ক্রিকেটার কলপ্যাক চুক্তি সই করে ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলছেন। এই চুক্তির ফলে একজন ক্রিকেটার দেশের হয়ে না খেলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের যেকোনো দেশে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে পারেন। সেদেশে আর বিদেশি হিসেবে বিবেচিত হবেন না। আর যে কাউন্টি দল কলপ্যাকের খেলোয়াড় নেবে তারা সুবিধা পাবে বাড়তি বিদেশি খেলানোর।

এবছরই শুরুর দিকে কলপ্যাক চুক্তি সই করে ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ডুয়েন অলিভার। যিনি সাউথ আফ্রিকার হয়ে ১০টি টেস্ট খেলেছেন। বছর দুয়েক আগে একই কাজ করেছিলেন পেসার কাইল অ্যাবোট। সবশেষ সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন হাশিম আমলা।

শেষ কয়েকবছর ধরে কলপ্যাক চুক্তির কারণে টালমাটাল সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট। প্রতিবছর এ চুক্তির আওতায় দেশকে বিদায় দিয়ে ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে চলে যাচ্ছেন একাধিক প্রোটিয়া ক্রিকেটার। কেবল ২০১৭ সালেই কলপ্যাকের কারণে ৫ জন ক্রিকেটারকে হারিয়েছে সাউথ আফ্রিকা, ২০১৮ সালে যার সংখ্যাটা ৩।

শুরুটা হয়েছিল ক্লাউডে হ্যান্ডারসনকে দিয়ে। ২০০৩ সাল থেকে কলপ্যাক চুক্তিতে ৬০ জন সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটার দেশকে পর করে দিয়েছেন! এই চুক্তি যেভাবে প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের দেশ থেকে বিমুখ করছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই জাগছে শঙ্কা যে, নিকট ভবিষ্যতে প্রোটিয়াদের পথ দেখানোর মতো ক্রিকেটার অবশিষ্ট থাকবে তো!

যারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই আবার জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। অফফর্মের খেলোয়াড়ও যেমন আছেন, তেমনি জাতীয় দল মাতানো ক্রিকেটারও আছেন তালিকায়। শন পোলক, আন্দ্রে অ্যাডামস, জাস্টিন ক্যাম্প, আন্দ্রে নেইলদের মতো ক্রিকেটাররাও কলপ্যাকের আওতায় কাউন্টিতে খেলেছেন।

যদিও পোলক-অ্যাডামস জাতীয় দলের হয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করে তবেই দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু রাইলি রুশো, কলিন ইনগ্রাম, রিচার্ড লেভি, কাইল অ্যাবোটদের মতো তরুণদের যখন এই সর্বনাশা চুক্তির কারণে হারাতে হয়, তখন আর কিইবা করার থাকে।

মঙ্গলবার ভারতের কাছে তৃতীয় টেস্টে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে সাউথ আফ্রিকা। তিন ম্যাচের সিরিজে ভারতীয়দের কাছে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশও হয়েছে। এই তিন ম্যাচে একবারের জন্যও স্বাগতিকদের বিপক্ষে চুল পরিমাণ প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। যেটাকে ‘মুণ্ডহীন মুরগির’ ছোটাছুটির সঙ্গে তুলনা করেছেন দুই প্রোটিয়া সাবেক ক্রিকেটার।

ভারতের কাছে ভরাডুবির পর স্বাভাবিকভাবেই চরম হতাশ অধিনায়ক ডু প্লেসিস। হতাশার মধ্য তাকে আলোর রেখা দেখাচ্ছে ব্রেক্সিট। তার আশা, ব্রেক্সিট হয়ে গেলে অভিবাসী নীতিতে কড়াকড়ি আনবে ব্রিটেন, তাতে সাউথ আফ্রিকা থেকে ক্রিকেটারদেরও সেদেশে স্থায়ী হওয়া কঠিন হবে। তখন দেশের হয়েই খেলবেন ক্রিকেটাররা। ব্রেক্সিট কার্যকর হলে ২০২১ সালের মধ্যেই কলপ্যাক পদ্ধতিও শেষ হয়ে যাবে।

ডু প্লেসিস নিজেও একসময় কলপ্যাক চুক্তির অধীনে খেলেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত দেশের হয়েই খেলছেন। তিনি বলছেন, ‘সেরা খেলোয়াড়দের বিকল্প না পাওয়া সাউথ আফ্রিকার ক্রিকেটের জন্য দুঃখজনক। তবে আশা করি, ব্রেক্সিট হয়ে গেলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।’