চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ব্যারিস্টার জুম্মানের হাইকোর্টে আইনপেশা পরিচালনার রায় স্থগিত

নিউজিল্যান্ডে আইনপেশা পরিচালনা করা ব্যারিস্টার জুম্মান সিদ্দিকীকে আমাদের হাইকোর্টে সরাসরি আইনপেশা পরিচালনা করতে দেওয়ার রায় স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

জুম্মান সিদ্দিকীর বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেন। সেই সঙ্গে রিটকারি আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসানকে হাইকোর্টের দেওয়া ১শ টাকা করে ‘কস্ট’ স্থগিত করা হয়। নিয়মিত লিভ-টু- আপিল (সিপি) ফাইল করা পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

আজ আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার অনিক আর হক। আর জুম্মান সিদ্দিকীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার তানিয়া আমির।

এর আগে নিউজিল্যান্ডে আইনপেশা পরিচালনা করা ব্যারিস্টার জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টে আইনপেশা পরিচালনার (প্রাক্টিসের) সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও আইনজবী ইশরাত হাসান। এরপর ওই রিট শুনতে অপরাগতা প্রকাশ করেন হাইকোর্টের কয়েকটি বেঞ্চ। একপর্যায়ে এই রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি তারিকুল হাকিম ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ জুম্মান সিদ্দিকীর বিষয়ে বার কাউন্সিলের নেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেন।

করোনাভাইরাস

পরবর্তীতে বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রুল শুনানি শুরু হয়। শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও আইনজবী ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। এরপর রুল খারিজ করে জুম্মান সিদ্দিকীর বিষয়ে বার কাউন্সিলের দেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল রেখে গত ৮ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ে রিটকারি দুই আইনজীবীকে ১শ টাকা করে ‘কস্ট’ কর হয়। বিচারপতির ছেলে জুম্মান সিদ্দিকীর বিষয়ে হাইকোর্টের এই রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন আলোচনা হয়।

অন্যদিকে, হাইকোর্টের রায়ের পর প্রধান বিচারপতি বরাবর একটি পত্র দেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সে পত্রে বলা হয়, ‘দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বার ও বেঞ্চের মধ্যে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। আইনজীবী ও বিচারকের মধ্যে পারস্পপারিক শ্রদ্ধাবোধ থাকলেই শুধুমাত্র আদালত সুষ্ঠুভাবে তার মহান দায়িত্ব পালন করতে পারেন। দেশের বিজ্ঞ আইনজীবীরা আইন ও আদালতের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেদেরকে আইন পেশায় নিয়োজিত করেছেন। এই অন্যান্য ভুমিকার জন্য আইনজীবীদেরকে আদালতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা হয়ে থাকে। আদালত সহনশীলতার সাথে তার উপর অর্পিত মহান দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অথচ ইদানিং দুই একটি আদালতে মামলার শুনানি চলাকালে সুপ্রিমকোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীদেরকে বিভিন্নভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই অনাকাঙ্খিত ব্যবহারের জন্য যুগ-যুগ ধরে গড়ে তোলা বার ও বেঞ্চের মধ্যে সু-সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে বলে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মনে করে।’

প্রধান বিচারপতি বরাবর পাঠানো ওই পত্রে বলা হয়, ‘গত ৮ নভেম্বর ১৩১৪২/২০১৯ নম্বর রিট পিটিশনের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুইজন বিজ্ঞ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এবং ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে ১০০ টাকা করে জরিমানা এবং আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়েছে। শুনানিকালে আইনজীবীদের সাথে অসৌজন্য মুলক আচরণ করা হয়েছে। যা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মামলা দায়ের কিংবা পরিচালনার কারনে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য কিংবা আদালত অবমাননার রুল জারির ক্ষেত্রে মহামান্য আদালতের কাছে সমিতি আরো সহনশীলতা প্রত্যাশা করে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীরা যেমন আদালতের মর্যাদা রক্ষায় বদ্ধ পরিকর। তেমনই আইনজীবীদের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্বও আদালতের উপর বর্তায়। এ অবস্থায় দেশের আইনের শাসন বজায় রাখার স্বার্থে বার এবং বেঞ্চের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ সৃষ্টি না হয়, এবং উভয়ের মধ্যে সু-সম্পর্ক বিনষ্ট যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আপনাকে (প্রধান বিচারপতি) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।’