মাসব্যাপী বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উন্মাদনায় মেতেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। মাঠের লড়াইয়ের উত্তাপ ছড়িয়েছে খাবার টেবিল, গলির মাথা হয়ে চায়ের টং দোকানের আড্ডায়। ব্যাট-বলের ২০ ওভারের অ্যাকশনে সাকিবের ফরচুন বরিশালকে ১ রানে হারিয়ে নিজেদের তৃতীয় ট্রফির স্বাদ নিয়েছে ইমরুলের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
শুক্রবার পর্দা নামা এবারের আসরের খেরোখাতায় এসেছে পরিবর্তন। রেকর্ড বইয়ের কাটাকুটিতে যুক্ত হয়েছে সেরাদের নাম। ছিল চার-ছক্কার ছড়াছড়ি। ছিল কোয়ালিটি বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনী।
আসরে দাপট দেখিয়েছেন বোলাররা। ব্যাট হাতেও কম যাননি ব্যাটাররা। রান সংগ্রহের তালিকায় অবশ্য দেশিদের ঘাটতি। সেরা দশের নিচের দিকের চারজনই বাংলাদেশের। শীর্ষ পাঁচে আছেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। তালিকায় আছেন সাকিব আল হাসানও।
এক নজরে রানে সেরা দশে যারা-
উইল জ্যাক (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স): চ্যালেঞ্জার্সদের দ্বিতীয় কোয়ালিফাই খেলার নেপথ্যে বড় ভূমিকা রেখেছেন ইংলিশম্যান। বন্দরনগরীর দলটির হয়ে শুরুতে নেমে ভিত গড়ে দেয়ার পাশাপাশি অবদান রেখেছেন প্রায় সব জয়ে। আসরে ১১ ম্যাচ খেলে করেছেন ৪১৪ রান। দেড়শ ছাড়ানো স্ট্রাইকরেটে গড়ে তুলেছেন ৪১.৪০ রান করে। তামিমের সঙ্গে যৌথ সর্বোচ্চ চারটি ফিফটিও জ্বলজ্বল করছে ডানহাতি ব্যাটারের পাশে। অপরাজিত ৯২ রানের ইনিংস তার সর্বোচ্চ।
আন্দ্রে ফ্লেচার (খুলনা টাইগার্স): মুশফিকের দলের হয়ে আসরে দুর্দান্ত কাটিয়েছেন ক্যারিবিয়ান তারকা। ১১ ম্যাচে ব্যাট হাতে খুলনার জয়ে রেখেছেন বড় ভূমিকা। চারবার নটআউট থাকার সঙ্গে হাঁকিয়েছেন শতক, পেয়েছেন তিনটি ফিফটির দেখাও। মেহেদী হাসানের সঙ্গে গড়েছেন ১৮২ রানের বড় জুটির রেকর্ড। ১১ ইনিংসে ৫৮.৫৭ গড়ে তুলেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১০ রান, ১৩৮.৯৮ স্ট্রাইকরেটে।
তামিম ইকবাল (মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা): বিপিএলের অষ্টম আসরে তামিম যতটা দুর্দান্ত ছিলেন, বিপরীত ছিল তার দল। জাতীয় দলের টি-টুয়েন্টি সংস্করণ থেকে সাময়িক বিরতিতে যাওয়া বাঁহাতি আসরে ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ঢাকার ইনিংসের গোড়াপত্তন করে দেয়ার পথে তুলেছেন ৪০৭ রান। একটি শতক ও চারটি অর্ধশতক হাঁকানো আসরে সেরা পাঁচ ব্যাটারদের মধ্যে তিনিই একমাত্র দেশি। ব্যাটিংয়ে সমালোচিত হওয়া স্ট্রাইকরেটও বাড়িয়ে নিয়েছেন। ১৩২.৫৭ স্ট্রাইকরেটে প্রতি ম্যাচে তুলেছেন গড়ে ৫৮.১৪ রান।
কলিন ইনগ্রাম (সিলেট সানরাইজার্স): আসরের লিগপর্বে বাদ পড়ে যাওয়া সিলেটের অন্যতম ভরসার নাম প্রোটিয়া এ হার্ডহিটার। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও বাকিদের পারফর্মে দল ছিল জয় খরায়। লিগপর্বের ৯ ম্যাচে সাউথ আফ্রিকান হাঁকিয়েছেন তিনটি ফিফটি। ১৩৭.৫৭ গড়ে করেছেন ৩৩৩ রান। ৪১.৬২ গড়ে ব্যাট করা কলিনের আছে ৯০ রানের একটি ইনিংস।
ফ্যাফ ডু প্লেসিস (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স): সাউথ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটের অন্যতম নাম ডু প্লেসিস বিপিএলেও দেখিয়েছেন নামের স্বকীয়তা। প্রোটিয়া ব্যাটার ১২ ম্যাচে দলকে এনে দিয়েছেন ২৯৫ রান। আসরে একটি অর্ধশতকের পাশাপাশি খেলেছেন ১০১ রানের ইনিংসও। কুমিল্লার শিরোপা জয়ের অন্যতম কারিগরও তিনি।
সাকিব আল হাসান (ফরচুন বরিশাল): বরিশালকে ফাইনালে ওঠানোর পেছনে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছেন টাইগার অলরাউন্ডার। দলটির অধিনায়ক বল হাতে ক্যামিও দেখানোর পাশাপাশি দেখিয়েছেন অধিনায়কত্বের গুণও। ব্যাট হাতেও কম যাননি। ১১ ম্যাচে নেমে আসর সেরা ব্যাটারদের তালিকায় জায়গা করেছেন সেরা ছয়ে। ব্যাট হাতে তিনটি ফিফটি হাঁকিয়ে করেছেন ২৮৪ রান। ২৮.৪০ গড়ে, ১৪৪.১৬ স্ট্রাইকরেটে।
আসর সেরা ব্যাটারদের তালিকায় সেরা পাঁচে একজন থাকলেও সেরা দশে রয়েছেন আরও চার বাংলাদেশি। সিলেট সানরাইজার্সের হয়ে ওপেনিং করা এনামুল হক আছেন সাকিবের পর— সাত নম্বরে। ৯ ম্যাচে ৩১.১১ গড়ে করেছেন ২৮০ রান। আট নম্বরে ৯ ম্যাচে ২৫৫ রান করে আছেন ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।
নয়ে টাইগার ক্রিকেটের অন্যতম অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। আসরে খুলনাকে নেতৃত্ব দেয়া মুশফিক ১১ ম্যাচে ৯ ইনিংসে ৩৫.৮৫ গড়ে করেছেন ২৫১ রান। আসর সেরা দশজনের তালিকায় একমাত্র তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়। কুমিল্লার ব্যাটার ১০ ইনিংসে তুলেছেন ২৪৩ রান।