ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা অবসায়ন হয়ে গেলে আমানতকারীরা এক লাখ টাকা নয়, আমানতের পুরো টাকাই ফেরত পাবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
এ বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন হলো সরব সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম। দেশের অর্থনীতির নানা টানাপোড়েনের সাথে এই লাখ টাকার বিষয়টি জনমনে নানা ধরণের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য খুবই ইতিবাচক।
বাংলাদেশের তথ্যমতে, বর্তমানে বীমা তহবিলে সংরক্ষিত টাকার পরিমাণ অনুযায়ী ৯২ শতাংশ আমানতকারীদের হিসাব সম্পূর্ণ বীমাকৃত। মাত্র ৮ শতাংশ আমানতকারী ঝুঁকিতে রয়েছে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে প্রথম ৯০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এর পরের ৯০ দিনের মধ্যে ‘আমানত বীমা ট্রাস্ট তহবিল’ থেকে এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে। বাকি টাকা ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করে আনুপাতিক হারে দেয়া হবে।
এর বাইরেও ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৭৪ ধারা অনুসারে কোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়িত হলে উক্ত ব্যাংকের সম্পদ থেকে সব আমানতকারীদের পাওনা পরিশোধের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।
১৯৮৪ সালে আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় যে আইন করা হয় সেখানে আমানতের অর্থ ফেরত দেওয়ার পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার টাকা। পরে ২০০০ সালে আমানত বীমা আইন প্রবর্তন করে এক লাখ টাকা করা হয়। বর্তমানে এই আইনে আমানতকারীরা এক লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে। তবে সংশোধিত আইনে এটি বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আসলে এখান থেকেই এই আলোচনার সূত্রপাত।
নগদ টাকা ব্যাংকে রাখবেন কিনা, সরকারি ব্যাংক নিরাপদ নাকি বেসরকারি ব্যাংক, এই বিষয়ে জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়ে ব্যাংকিং সেক্টরের তারল্যে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও অনেকে ধারণা করছেন। কোন কোন ব্যাংক কী অবস্থায় আছে, আর কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে কিনা, তা নিয়েও নানা গুজব রয়েছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আর কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না। অন্যান্য দেশে ব্যাংক দেউলিয়া হলেও বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত এই ঝুঁকি নেই।
আসলে বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমেই খেলাপী ঋণের পাহাড় জমা ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়া হবার উদারহণের কারণে প্রচলিত কথা ও গুজবে জনগণ যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন। এই অবস্থা থেকে উত্তোলন খুবই জরুরি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহীতা আরও জোরদার করাসহ ঋণ আদায়ে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম এখন সময়ের দাবি।
আমাদের আশাবাদ, দায়িত্বশীল বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর মনোযোগ দেবেন। একইসঙ্গে গুজব বা শঙ্কা নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রকৃত তথ্যের প্রচারণা আরও বাড়াতে হবে।