ব্যাংক, নদী এবং ভূমি দখল এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এসব দখলের কোনো বিচার হচ্ছে না। এ কারণে দখলদারিত্ব উৎসাহিত হচ্ছে। আর এভাবে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের কারণে অর্থনীতিতে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে।
সোমবার মিরপুর বিআইবিএমের সম্মেলন কক্ষে বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।
কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, নদী আর ভূমি দখলের মতোই ব্যাংকখাতে দখল চলছে। এসব দখলের কোনো বিচার না হওয়ায় অর্থনীতিতে অসমতা বাড়ছে।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্ত রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দরকার। এছাড়া সবাইকে আর্থিক অন্তর্ভূক্তির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বিআইবিএম এর চেয়ার প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, অবৈধ লেনদেগেুলোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট কাজ করেছে। কারণ অন্তর্ভুক্তিমুলক ব্যাংকিংয়ের বড় বাধা হচ্ছে এসব অবৈধ লেনদেন। মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিং অন্তর্ভূক্তিমুলক ব্যাংকিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এখন তা গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অবৈধ আর্থিক লেনদেন অন্তর্ভূক্তিমুলক ব্যাংকিং-য়ের বড় বাধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছর মোবাইল কোম্পানিগুলো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। কিন্তু বিটিআরসি কতৃপক্ষের আর্থিক লেনদেনের অনুমোদন না থাকায় এ আবেদনে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ফোন কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়। যার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোবাইল কোম্পানিগুলোর আবেদন প্রত্যাখ্যান ছাড়া কোনও বিকল্প ছিল না। অন্তর্ভূক্তিমুলক অর্থনীতির জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব।
ইব্রাহীম খালেদ বলেন, আমাদের সংবিধানে আছে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালিত হচ্ছে মুক্তবাজার অর্থনীতি দ্বারা। এই মুক্তবাজার অর্থনীতি দ্বারা যত প্রভাবিত হবে তত লুণ্ঠন ও দখলদারিত্ব বাড়বে। এর ফলে তৈরি হবে সম্পদের অসমতা বা বৈষম্য। এজন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি জোরদার করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত ডিজিটালাইজড হচ্ছে, আবার সাথে সাথে এর সাইবার ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই এসব ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি তা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এসএমই খাত দারিদ্র দূরকরণে ভূমিকা রাখছে, তবে এই ঋণের সুদ হার আরও কমিয়ে আনা দরকার। একই সাথে দারিদ্র দূর করতে অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি জোরদার করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, আর্থিক অবকাঠামোতে দৃশ্যমান গতি আনতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের দিকে দেশকে এগিয়ে নেওয়া এর মূল উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, ডিজটাল আর্থিক সেবার কার্যক্রম গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে। ইতমেধ্যে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস এবং এজেন্ট ব্যাংকিং দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই আন্ত: ব্যাংক লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিং যুক্ত হয়েছে। এর ফলে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসছে। মোবাইল ব্যাংকিংকে বাংলদেশ ব্যাংক আরও গ্রাহক বান্ধব করতে চায়। এতে অন্তর্ভুক্তিমুলক র্অথনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। এজন্য স্কুল ব্যাংকিং ছাড়াও আর্থিক খাতের বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে “ডিজিটালাইজড” বা শতভাগ স্বয়ংক্রিয় করাই এখন প্রধান উদ্দেশ্য।