বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে উন্নয়ন কাজে আসবে না। তাই এ খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে, যত্নশীল হতে হবে। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যাংক খাত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শনিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ‘জাতীয় অর্থনীতিতে আবাসন খাত’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব ও সেন্টার ফর কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক (সিসেএন) যৌথভাবে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে গেলে চেকে উল্লেখিত পরিমাণ টাকা যদি ব্যাংক দিতে না পারে, তাহলে সেটা সমস্যা। ইসলামী ব্যাংক ছিল নাম করা একটি ব্যাংক। এখন সেখানেও টাকা পাওয়া মুশকিল। গ্রাহককে সেখানেও চেক জমা দিয়ে বসে থাকতে হয়।
অর্থনীতিতে আবাসন খাতের গুরুত্ব অনেক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে হবে। কারণ এ খাতের সঙ্গে অনেকগুলো ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ (সংশ্লিষ্ট ব্যবসা) জড়িত। আর বাসস্থান মানুষের মৌলিক অধিকার। সরকার এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট।
বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, আবাসন খাতে ১৫ শতাংশ নিবন্ধন ব্যয় থাকতে পারে না। এই খাত চাঙ্গা থাকলে লিংকেজ শিল্প আরো বিকশিত হবে।
অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এবার বাজেটে (অপ্রদর্শিত) কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে না। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় সঠিক পদ্ধতিতে প্রদর্শনের সুযোগ রাখা উচিৎ।
‘হঠাৎ করে এটা বন্ধ করা ঠিক হবে না। একে আমি কালো টাকা বলবো না। কারণ কোনও কারণে গ্রাহক হয়তো এ টাকার কথা জানেননি। যখন জেনেছেন তখন তিনি সেটা প্রদর্শনের সুযোগ পেতে পারে। সেটা যথাযথ নিয়মে হবে।’
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ। টিভি উপস্থাপক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন।
সভায় বিরোধী দলের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ব্যাংকে এখন লুটপাট হচ্ছে। আগে ব্যাংকের মালিক ছিল জনগণ। এখন উদ্যোক্তোরাই মালিক।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘রাজউকের আরেক দুর্ভোগ। ঘুষ দিতে পারলে ১৫ দিনে প্লান পাস হবে। আর না দিতে পারলে এটা নেই সেটা নেই বলে ১০ বছর লাগবে।’
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন বলেন, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংকের সমস্যার কারণে ইমেজ সংকটে পড়েছে ব্যাংকিং খাত। এ সংকট কাটানোর চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রী সিঙ্গেল ডিজিটে সুদের হার আনতে বলেছেন। চেষ্টা চলছে। তবে এটা সঙ্গে সঙ্গে করা যায় না।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ঋণের সুদ হার এক অংকে নামিয়ে আনতে হবে।’কিন্তু এখনও তা হয়নি।
রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি পার্শ্ববর্তী দেশে ৭ শতাংশের কম। কিন্তু বাংলাদেশে ১৪ শতাংশ। এটা ৭ শতাংশে কমিয়ে আনতে হবে। একই সাথে দ্বিতীয় বার ফ্ল্যাট ক্রয়ে নিবন্ধন ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। আবাসন মৌলিক চাহিদা হলেও এ খাত সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
গত অর্থবছর আবাসন খাতে বাজেটে ৩ হাজার ৬২০ কোটি বরাদ্দ রাখলেও তা শুধু সরকারি কর্মচারীদের জন্য রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের ৭০ শতাংশ ভবনের মালিক ২০ থেকে ৩০ শতাংশ লোক। এরাই চায় না সাধারণ মানুষের আবাসন ব্যবস্থা হোক। কারণ তারা ভাড়াটিয়া পাবে না।
রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ফ্লাইওভারে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। এটা প্লানিংয়ের সমস্যা। এত বড় দায়িত্ব রাজউকের একার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। এর জন্য আলাদা ক্ষমতা দিয়ে একটা ডিপার্টমেন্ট করতে হবে।
এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন বলেন, শুধু বহুতল ভবন তৈরি করলেই হবে না। সেখানে যেন গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ দেয়া যায় সেটা দেখতে হবে।
ভবন হলো অথচ বিদ্যুৎ নেই তাহলে সে ভবন দিয়ে কি হবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এখন বাসা বাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ। একই শহরে একজন গ্যাস পাবে আরেকজন পাবে না এটা কি করে হয়?
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, যারা প্রথমবারের মতো ফ্লাট কিনবেন তারা যেন ব্যাংক লোনের ব্যাপারে বিশেষ সুবিধা পায়। ভবন নির্মাণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হয়রানির কথাও উঠে আসে আলোচনায়।
বক্তারা আরও বলেন, বাড়ি বানাতে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াতে হয়। ১১টি মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এটাকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসে আনতে হবে। হয়রানি দূর করতে হবে। জমিন মূল্য ঠিক রাখার জন্য নীতিমালা করা ও জমি রেজিস্ট্রেশন ফি কমাতে হবে। ঢাকার বাইরেও আবাসন খাতকে প্রসারিত করে মৌলিক সুবিধার ব্যবস্থাসহ ভবনে স্বল্পমূল্যে জ্বালানীর ব্যবস্থা করতে হবে।