দেশের প্রথম সারির ব্যাংক সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ছিলেন এবিবির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। ব্যাংকিংয়ের মারপ্যাঁচ, অর্থনীতির অলিগালি আর হিসাব নিকাশের খটোমটো জগতে কাটে তার দিনরাত্রি। মুদ্রাস্ফীতির ওভার থ্রোয়িং, খেলাপীঋণের হাই আর্ম অ্যকশন, আমানত আর বিনিয়োগের বডিলাইন বোলিংয়ের মতো কঠিন বিষয়কে অর্থনীতির ২২গজে তিনি দেখে শুনে হুক-পুল আর ক্লাসিক ড্রাইভে সীমানা ছাড়া করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। তিনি কর্পোরেট ব্যাংকিংয়ে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, নতুন প্রজন্মের খ্যাতিমান ব্যাংকার, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন। যিনি কেবলমাত্র দেশের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাই নয় একই সাথে তিনি সাহিত্য অঙ্গনে সময়ের আলোচিত এক নাম। সমকালীন সাহিত্যে তার সৃষ্টি সমসাময়ীক বাংলা কথাসাহিত্যে নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে। স্বকীয় ধারায় সৃষ্ট তাঁর সাহিত্যকর্ম সাহিত্যাঙ্গণে কথা বলেছেন উত্তরাধুনিক ধ্রুপদী সুরে। কথা সাহিত্যে দেশ এবং বিশ্বসাহিত্যর ছোঁয়া, ভ্রমনোপান্যাস, ছোটগল্প, ইতিহাস প্রতিটি ধারায় এরই মধ্যে তিনি অনবদ্য। অন্যদিকে দেশ সেরা ব্যাংক সিটি ব্যাংকের নেতৃত্ব ও পরিচালনাতেও তিনি দেখিছেন সুপরিকল্পিত নেতৃত্বের ঝলক। একই সাথে ব্যনিজ্যিক ব্যাংকের চৌকষ শীর্ষ কর্মকর্তা অন্যদিকে সাহিত্যে সাহসী পদচারণা, বুদ্ধিদিপ্ত সৃষ্টিশীল সফলতায় তার দুটি অঙ্গণই যেন একে অন্যকে কুর্নিস করছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখক এবং ব্যাংকার মাসরুর আরেফিনের শুরুর গল্পটাও এখনকার মতোই সাফল্যমন্ডিত। জীবনের প্রতিটি অঙ্গনেই তিনি সফলতার ছাপ রেখে একের পর এক সাজিয়ে গেছেন একেকটি অধ্যায়। প্রতিক্ষেত্রেই শীর্ষস্থানে থাকা এই সফল ব্যক্তি সাফল্যকে নিজের পথ চলার অংশ বানিয়ে গেছেন আজ অবধী।
মাসরুর আরেফিনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বৃহত্তর বরিশালে হলেও পরবর্তিতে পরিবারের সাথে চলে আসেন খুলনায়। এসএসসি এবং এসএসসি শেষ করেন দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বরিশাল ক্যাডেট কলেজে। ক্যাডেট কলেজের সুশৃঙ্খল শিক্ষাপর্ব শেষে মাসরুর আরেফিন ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত এবং ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্যে সম্মাণ পর্বে অধ্যায়ন শুরু করেন। পরবর্ততীতে মাস্টার্স শেষ করেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ফ্রান্সের ইনসিয়াডবিজনেস স্কুলে উচ্চতর ব্যবস্থাপনায় কোর্স করেছেন।
১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এমবিএ সম্পন্ন করে মাশরুর আরেফিন অস্ট্রেলিয়ার এএনজে গ্রাইন্ডলেইজ ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। যথারীতি সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে মাসরুর আরেফিন স্বল্প সময়ে ব্যাংকটির হেড অফ কনজ্যুমার ফিনেন্স, বাংলাদেশে এর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক কাতার,-এ নিযুক্ত হন।
পেশাগত জীবনের অন্যতম উৎকর্ষতায় তিনি অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকের ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। ছিলেন সিটি ব্যাংক এন,এ ‘তেও। পরবর্ততে কনজিউমার ব্যাংকিং এর প্রধান হিসেবে ইস্টার্ণ ব্যাংকেও কর্মরত ছিলেন মাসরুর আরেফিন।
মাসরুর আরেফিন ২০০৭ সালে সিটি ব্যাংকে হেড অফ রিটেইল ব্যাংকিং হিসেবে সিটি ব্যাংকের কর্মজীবনে নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। সিটি ব্যাংকের সাথে সেই থেকে শুরু। এরপর এক এক ব্যাংকটির চিফ কমিউনিকেশন অফিসার এবং চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি প্রত্যেক ডিপার্টমেন্ট হাতে ধরে তৈরী করেছেন আরো কার্যকর করে। দক্ষতা ও মেধার স্মাক্ষর রেখে তিনি ২০১৯ সালে সিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশের অগ্রনী এই ব্যাংকার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজস্ব স্বকীয়তা দেখিয়েছেন। সিটি ব্যাংকেও তিনি নিজের ডায়নামিক ব্যক্তিত্ব এবং তুখোড় ব্যাংকিং মেধায় নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। আধুনিক ধারার ব্যাংকিং, রেমিটেন্স প্রবাহ নিশ্চিতকরণ, প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন সর্বোপরি ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করণে মাসরুর আরেফিন ব্যাপক অবদান রাখেন।
চলতি বছর নতুন মেয়াদে সিটি ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বহী কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রপ্ত হবার পূর্বে আগের মেয়াদের তিন বছরে তিনি ব্যাংকটিকে ভিন্নতর উচ্চতায় নিয়ে যান। এই সময়ে ব্যাংকটির বার্ষিক আয় ৩৫ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করে এবং পরিচালন মুনাফা ৬১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার কোটি টাকা মুনাফার ক্লাবে প্রবেশ করে। যে অর্জন সিটি ব্যাংক সহ বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে একটি অনন্য নজির।
একইসঙ্গে গত তিন বছরে ব্যাংকটির আয় ও ব্যয়ের অনুপাত ৫৯ শতাংশ থেকে ৫০.৫% শতাংশ নেমে আসে এবং বৈদেশিক বাণিজ্য বার্ষিক ৩.৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬.৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। তার নেতৃত্বে সিটি ব্যাংক মূলত আর্থিক অর্ন্তভুক্তির এজেন্ডা মাথায় নিয়ে একটি শহরভিত্তিক ব্যাংক থেকে গণমানুষের ব্যাংক হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি ব্যাংকে ডিজিটাল ন্যানো লোন এবং প্রথাগত ক্ষুদ্র ও মাইক্রো ফাইন্যান্সের সূচনা করেন। যা দেশের ব্যাংকিংখাতকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ডিজিটাল ক্ষুদ্র ঋণের যুগে নিয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তিনি সার্বিকভাবে অন্তর্ভূক্তির অথনীতিতে দেশের ব্যাংকিং খাতকে পথ দেখাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘আমরা ছোট ও ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা যুক্ত করে দিয়েছি। ফলে এজেন্টরা গত এক বছরে ২ হাজার ১৪৩ গ্রাহককে ২৩৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এজেন্টরা এখন সাধারণ মানুষের কাছে বড় আকর্ষণ। কারণ, দেশের অসংখ্য মানুষ কিছু না কিছু করছেন। কেউ হাঁস-মুরগি পালন করছেন, কেউ দোকান বা ছোট ব্যবসা করছেন। তাঁদের ঋণের প্রয়োজন। আবার অনেকেই বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখতে চান। সে ক্ষেত্রে এজেন্টদের কাছে টাকা জমা রাখছেন। আবার গ্রাহকেরা ঋণও পাচ্ছেন, আবার তা শোধও করছেন। বড় কথা হলো, মানুষ এখন বাড়ির পাশেই এসব সেবা পাচ্ছেন। তাই সেবাগুলোয় ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিং আমানতে খরচ কম। ফলে আমরা বড় অঙ্কের মুনাফা পাব। অন্য আমানতে যেখানে খরচ সাড়ে ৫ শতাংশ, সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে তা আড়াই শতাংশ। ১ শতাংশ কম খরচ মানে অনেক বড় মুনাফা। তাই আমরা সহ সব ব্যাংক এদিকে জোর দিচ্ছে।’
একই সাথে তাঁর পরিকল্পনায় সিটি ব্যাংক অ্যাসিস্টেড মডেল চালু করতে যাচ্ছে। ফলে কারও সহায়তা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এজেন্ট ব্যাংকি হিসাব খোলা যাবে। এ ব্যবস্থা চালু হলে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
মাসরুর আরেফিন টেলিকম ও বড় এফএমসিজিগুলোর মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করছে। ফলে সার্বিক এজেন্ট ব্যাংকিং আরো সহজতর হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এজেন্টদের দিয়ে লেনদেন ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা আছে আমাদের। এজেন্ট পয়েন্টে আমরা কিউআর কোড ও পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) যন্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। এজেন্টদের দিয়ে আমরা ক্রেডিট কার্ড সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। হিসাব খুললে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে নগদ টাকার ব্যবহার কমে গ্রামেও কার্ডের ব্যবহার বাড়বে। ছোট ছোট লেনদেনও ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। এভাবে একদিন ডিজিটাল পদ্ধতির লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে। লেনদেন ব্যবস্থায় চেঞ্জমেকার হবে এজেন্টরা। চীনের গ্রামগুলোতে যেভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে ছোট ছোট লেনদেন হচ্ছে, বাংলাদেশেও একদিন তা হবে।’
দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে মাসরুর আরেফিন যেভাবে সারা দেশে ব্যাংকিং অর্তনীতি ছড়িয়ে দিচ্ছেন সেভাবেই দেশের সমকালীন সাহিত্যও রাখছেন সমান অবস্থান। একজন ব্যস্ত, পুরোদস্তুর ব্যাংকার বা কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও মাসরুর আরেফিন কাফকার মতো বিশ্বসাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম অনুবাদ করেছেন। কাজ করেছেন এমন একজনকে নিয়ে যিনি দারিদ্রতা, জীবনের সাথে প্রবল সংগ্রামের মাঝে সৃষ্টি করেছেন বাস্তবতার কঠোরতায় আঁকা একের পর এক বিশ্ব কাঁপানো সাহিত্য। অনুবাদ করেছেন হোমারের ‘ইলিয়াড’। যা বংলাদেশের অনুবাদ সাহিত্যে একটি মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত। তার প্রকাশিত প্রথম বই কাব্যগ্রন্থ ঈশ্বরদী, মেয়র ও মিউলের গল্প (২০০১), যা প্রথম আলোর সে বছরের নির্বাচিত বইয়ের অন্তর্ভূক্ত। তাঁর উপন্যাস আগস্ট আবছায়া ব্যাপক আলোচিত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে মর্মান্তিক হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাসরুর লিখেছেন ‘আগস্ট আবছায়া’ উপন্যাস। ২০২০ সালে প্রকাশিত উপন্যাস আলথুসার। ‘আলথুসার’ তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। সেখানেও মাসরুর আরেফিনের বিশ্বসাহিত্য প্রিয়তার নমুনা পাওয়া যায়। ‘দমন-পীড়নমূলক রাষ্ট্রযন্ত্র’ তত্ত্বের জনক মার্ক্সবাদী ফরাসি দার্শনিক লুই আলথুসারকে বাংলায় তিনি এমনভাবে নির্মাণ করেছেন, যা অবশ্যই বিশেষ মনোযোগ দাবি করে। তাঁর কাব্যগ্রন্থ ঈশ্বরদী, মেয়র ও মিউলের গল্প, পৃথিবী এলোমেলো সকালবেলায়, আগুন হয়ে আছে সাহিত্যের ধারায় তাঁর অনন্য উপস্থিতির স্মারক হয়ে আছে। ‘আড়িয়াল খাঁ’ তার ব্যাপক আলোচিত উপন্যাসের একটি।
ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র মাসরুর আরেফিন ১৯৯০ সাল থেকে তার সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। তাঁর অনূদিত ‘ফ্রানৎসকাফকা গল্পসমগ্র’ ২০১৩ সালের ‘ব্র্যাক সমকাল সাহিত্য পুরস্কার’ ও বাংলা একাডেমির ‘বছরের সেরা প্রকাশনা’ পদক অর্জন করেন। ২০১৫ সালে তার অনূদিত ‘হোমারের ইলিয়াড’ ও পাঠক মহলে প্রশংসিত হয়।
মাসরুর আরেফিনের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রখ্যাত কবি ও ঔপন্যাসিক হাসনাত আবদুল হাই বলেন, ‘আমি মাসরুর আরেফিনকে আমাদের সময়ের সবচেয়ে আধুনিক মনস্ক লেখক বলে মনে করি। সমকালে সব লেখকই সমকালীন, আধুনিক। মাসরুর সমকালকে অতিক্রম করে ভবিষ্যতে পা রেখেছেন। ভবিষ্যতের রূপরেখা তার লেখায় উঠে এসেছে। শুধু প্রতিভা দিয়ে কেউ লেখক হয়ে ওঠে না, তার সঙ্গে প্রয়োজন পঠন এবং বিশ্নেষণ। মাসরুর দেশে-বিদেশের সব প্রধান প্রধান লেখকের লেখা পড়েছেন। তাঁর তিনটি উপন্যাসই আপাতদৃষ্টিতে পৃথক, তবে সূক্ষ¥ দৃষ্টিতে সবগুলোর বিষয়বস্তু ক্ষমতা। ক্ষমতার কুৎসিত ব্যবহার দেখানোই মাসরুর আরেফিনের লেখার উদ্দেশ্য।,
উপন্যাসের ধারা, সমসাময়ীক সময়, নির্মণশৈলী, বিশ্বসাহিত্যের নিরিখে নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘সাহিত্য ও লেখার আমার লেখাকে স্ট্যান্ডার্ড লিটারির ফিকশন হিসেবে ধরা হলেই আমি বরং উল্টো দম আটকানো এক বোধের মধ্যে গিয়ে পড়ি। তখন মনে হয়, এই তো আমাকে একটা নির্দিষ্ট বর্গে আটকানো হচ্ছে, একটা নির্দিষ্ট পাঠক-প্রত্যাশার মধ্যে বেঁধে রাখতে চাওয়া হচ্ছে। আমি সাহিত্যিক উৎকর্ষে ভরা লিটারারি ফিকশন এবং কম উৎকর্ষের নন-লিটারারি ফিকশন- এসব অ্যাকাডেমিক কথায় ভরসা রাখি না। আমি আসলে ইন্টারেস্টিং, সিম্পল আবার কমপ্লেক্স, গদ্যের চাল-ভাব-ভঙ্গি রাজসিক, অভিব্যক্তি কিছুটা জার্নালিস্টিক তবু লিরিক্যাল এবং গল্পটা লেয়ারড, পরতে পরতে খোলে এমন; আবার সবকিছু নিট বা পরিচ্ছন্ন না, বরং কিছুটা অগোছালো, কিছুটা পথ হারানো, আর সেই পথ অবশ্যই বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন, কিন্তু তাতেও হঠাৎ হঠাৎ নন-বারোক গদ্যে জীবনের আলোকেও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা আছে- আমি এমন এক হিউম্যান কন্ডিশন তুলে ধরা, সোশ্যাল-পলিটিক্যাল কমেন্টারিকে কিছুটা মেটাফিজিক্স ও কিছুটা অ্যাবসার্ডিটি দিয়ে মুড়ে দেওয়া, টোনের দিক থেকে একদমই আবেগে ভরা নয়, বরং নিরাসক্ত ও আবছায়া ঘেরা, মুডের দিক থেকে কিছুটা অসহায়, কিছুটা বিষাদময়, কিছুটা স্যুডো-চিন্তাচ্ছ্বন্ন- এমনই। সাহিত্য বিজ্ঞান না, কিন্তু অ্যাকাডেমিক পরিমন্ডল এটাকেও বিজ্ঞানের মতো তত্ত্ব দিয়ে ভরতে চায়, যেন- পয়েন্ট লাইন ধরে ‘এ’ যদি বাম দিকে বাঁকা হাঁটে তো ‘বি’ এসে ‘এ’-কে শুধু উদ্ধারই করবে না, সে বিষয়টাকে ‘সি’-র কাছে নিয়ে গিয়ে পাঠকের মনে জ্ঞানের বোধের-বুদ্ধির-আধ্যাত্মিকতার আলোও জ্বালাবে। আমি এসবে নেই, মানে এড়িয়ে চলি। এই এড়িয়ে চলি বলতেই একটু ফকনার- ঘেঁষা, একটু সল বেলো-ঘেঁষা, একটু অমিয়ভূষণ-ঘেঁষা যে মানসম্মত কথাসাহিত্য আমার সংজ্ঞায় খাড়া হয়ে যায়, সেটাই আমাকে বলে দেয় যে, এড়িয়ে চলার কথাটা এখানে সজ্ঞানে বলছি বলেই এক্সপেরিমেন্টেশনের দিকে যাওয়ার একটা পক্ষপাত আমার মধ্যে আছেই।’
‘নো চ্যালেঞ্জ, নো গ্রোথ’ কথাটিকে উপজিব্য করে এগিয়ে চলা মাসরুর আরেফিন দেশের ব্যাংকিং খাতকে যেমন দক্ষ, তিক্ষè অথচ গভীর ব্যাংকিং মেধায় নিয়ে যাচ্ছেন নতুন ধারার ধারার ব্যাংকিংয়ে; তেমনি সাহিত্য অঙ্গনেও আন্তর্জাতিক সাহিত্যের পথে হেঁটে চলা, কাফকার বিষণ্ন গভীরতা নিয়ে বাসকরা মানুষটি সমকালীন বাংলা সাহিত্যকে নিয়ে যাবে করবে নতুন অঙ্গণে, প্রত্যাশা এমনটাই।