চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ব্যবসা হারানোর ভয়ে নতুন মার্কেটে যাবে না ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ান বাজারের পাইকারী কাঁচাবাজার তিনটি আলাদা জায়গায় স্থানান্তর হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো সরেনি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি বর্গফুটে ২৫ হাজার টাকা সেলামি দিয়ে কারওয়ান বাজার থেকে অন্য জায়গায় সরে গেলে তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন। এ কারণেই তারা নতুন জায়গায় যাবেন না।

সিটি কর্পোরেশন বলছে, যে কোনো মূল্যেই হোক তাদেরকে কারওয়ান বাজার ছাড়তেই হবে।

সরেজমিন কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা এই পুরানো স্থান ছেড়ে যাবেন না। এখান থেকে চলে গেলে তাদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি নিজেদের কর্তৃত্বও হারানোর আশাঙ্কা রয়েছে।

চিকেন মার্কেটে ২৭ বছর ধরে ব্যবসা করছেন নজরুল ইসলাম। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা এখান থেকে যেতে চাই না। কারণ হিসেবে বলবো প্রথমত: ছোট থেকে বড় হয়েছি এখানেই। সব কিছুই আমার পরিচিত। দ্বিতীয়ত: ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশঙ্কা আছে। তৃতীয়ত: এই মার্কেট হলো চালু মার্কেট আর ওখানে মার্কেট চালু হতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে। এই সময়টা তো আর আমরা লাভ করতে পারবো না।

তবে চিকেন মার্কেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘ইসলামিয়া শান্তি সমিতি’র সভাপতি মো. বাবুল মিয়া চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, যেতে চাই না এটা ঠিক না; আমরা শতভাগই যেতে চাই। কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ীরা ২০-২৫ বিঘা জায়গা নিয়ে ব্যবসা করে। তাই নতুন স্থানে আমাদের ৫-৭ বিঘার মতো জায়গা দিতে হবে।

মহাখালীতে ডিএনসিসি মার্কেট দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুট জায়গার জন্য সেলামি বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। কিন্ত টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরা যেতে রাজি নয়।

ব্যবসায়ী নেতা মো. বাবুল মিয়া বলেন, আমাদের দোকান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হোক। যদি দামের কথা ওঠে তবে তো যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের ব্যবসায়ীরা এই জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছে। এতে তারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। কারণ তারা ব্যবসায় বিভিন্ন কাষ্টমারের কাছে অনেক টাকা বাকী রেখেছেন।

তবে এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এটা নিশ্চিত যে তাদেরকে সরে যেতেই হবে।

ব্যবসায়ীদের দোকানের আকার বাড়ানোর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছি; তা হলো দোকানের পরিবর্তে দোকান দিতে হবে। আর আড়তের সাইজ ৪০০ বর্গফূট করতে হবে।

তবে আমরা কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য মহাখালীতে ৩৬০টি দোকান রেডি করেছি। ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কে কোথায় বসতে চান। তারা যেখানে যেতে চায় সেখানেই যেতে পারবে। এর বাইরে দামের ক্ষেত্রে তাদের জন্য ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সেলামি বা ছাড়ের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ী নেতা মো. বাবুল মিয়া বলেন, ফাইনাল কোনো ডিসিশন হয় নাই। তবে আলোচনা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কারওয়ান বাজারে চারদিক দিয়ে মালামাল নিয়ে ট্রাক আসতে পারে। কিন্ত মহাখালীতে গেলে তাদের এ উন্মুক্ত স্থান হারাবেন।

এ দাবি নাকচ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ওখানকার ব্যবসায়ীদের তিন দিকে যাবার অপশন আছে। তারা তো চাইলে মহাখালীতে যেতে পারবে; আবার ইচ্ছে করলে যাত্রাবাড়ী বা আমিন বাজারও যেতে পারে। যখন তারা তিন দিকে ভাগ হয়ে যাচ্ছে তখন তো ট্রাকগুলো তিন দিকেই যাবে। এজন্য তো ঝামেলা হওয়ার কথা নয়।

মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেট পুরো প্রস্তত কিনা জানতে চাইলে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, অবকাঠামো প্রস্তুত। তবে ইলেকট্রিক লাইনের কাজ পুরো শেষ হয়নি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মহাখালীতে ১১৬৩টি, আমিনবাজারে ৫৪৯টি এবং যাত্রাবাড়ীতে ৮৯৫ টি দোকান তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে মহাখালীতে ৩৬০টি দোকান শুধু মাত্র কারওয়ান বাজার ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ আছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা চাইলে আরো দোকান বরাদ্দ নিতে পারবেন। আর অন্য জায়গায় তাদের চাহিদা অনুপাতে বরাদ্দ দেওয়া হবে। মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেটটি ২১ বিঘা ১১ কাঠা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নিবার্হী কমিটি (একনেক) ‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ গ্রহণ করে। কৃষি পণ্যে বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের এবং কারওয়ান বাজারের যানজট কমাতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়।