প্রবীণ বৌদ্ধ ভিক্ষু ভদন্ত অমৃতানন্দ থেরোকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা।
শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতি মোর্চার নেতারা এ নিন্দা জানান।
যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন: এ হত্যাকাণ্ড পরিষ্কারভাবেই পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস। এ হত্যাকাণ্ডের পিছনে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার সুস্পষ্ট প্রয়াস বিদ্যমান।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, যে প্রক্রিয়ায় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করা হলো, তার আলামতগুলো লক্ষ্য করলেই এর পিছনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হবে। হত্যাকাণ্ডের শিকার ভদন্ত অমৃতানন্দ থেরো একজন ৭৫ বছর বয়সী বৌদ্ধ ভিক্ষু। ২৪ আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে ফেরার পথে ট্রেনের মধ্যেই তাকে হত্যা করে গোমতী নদীতে ফেলে দেয়া হয়। ২৫ আগস্ট তার মরদেহ নদীর পাড় থেকে উদ্ধার করা হয়। তার কাছে নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা থাকলেও তার একটি টাকাও হত্যাকারীরা নেয়নি। আর এমন একজন ইহজগতের লোভলালসার ঊর্ধ্বে ওঠা প্রবীণ ভিক্ষুকে হত্যার পিছনে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য প্রতীয়মান হয় না।
গভীর উদ্বেগের সাথে মোর্চার নেতারা বলেন: বাংলাদেশ যখন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শরণার্থীদের নিয়ে এক গভীর সঙ্কটকাল পার করছে, তখন হঠাৎ করেই বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। দুই বছর আগেও যখন মিয়ানমারের বৌদ্ধ প্রভাবিত শাসকদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে মুসলমান সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে এসেছিল, তখনো একটি গোষ্ঠী ওই ঘটনার জন্য বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর নানাভাবে হামলা-আক্রমণের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তখন এদেশের মানবতাবাদী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ মিয়ানমারের শাসকদের অন্যায় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে এখানে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
মোর্চার নেতারা বলেন: এটাই বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার প্রকাশ। মিয়ানমারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর দায় চাপানোর কোনো সুযোগ নেই। বরং রোহিঙ্গা সঙ্কটের চরম এই সময়ে এসে একজন প্রবীণ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমাদের আন্তর্জাতিকভাবেই প্রশ্নের মুখোমুখি করবে।
মোর্চার নেতারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবেই বিশ্ব মানবতা এবং বিশ্বশান্তির পক্ষে।বিশ্বের কোথাও কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক হানাহানি ও রক্তপাতের ঘটনাকে আমরা সমর্থন করি না। আমরা মনে করি, এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও যথাযথ তদন্ত করে হত্যাকারীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে কোনোভাবেই যেন কেউ বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শান্তি বিনষ্টের কোনো অপচেষ্টা পরিচালনা করতে না পারে, সেজন্য সরকার ও জনসাধারণকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’
জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চার আহ্বায়ক ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, প্রধান সমন্বয়ক এফ এম শাহীন ছাড়াও ওই বিবৃতিতে মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিক বাণী ইয়াসমিন হাসি, লেখক ও গবেষক ফারাবী বিন জহির অনিন্দ্য, সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট রবিউল ইসলাম রূপম, উন্নয়নকর্মী ও প্রাক্তন ছাত্রনেতা মুনতাহা নূর, রাজনৈতিক কর্মী কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, সাংবাদিক সাবিরা ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক খায়ের মাহমুদ, আইনজীবী ড. বদরুল হাসান কচি, সাংবাদিক মামুন রশীদ, আবৃত্তিশিল্পী ড. শাহাদাত হোসেন নিপু, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান রোমেল, সাংস্কৃতিক সংগঠক অনিকেত রাজেশ, প্রাক্তন ছাত্রনেতা অর্ণব দেবনাথ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক জয়নাব বিনতে হোসেন শান্তু এবং সমন্বয়ক বাপ্পাদিত্য বসু সাক্ষর করেন।