টেস্ট ম্যাচে ‘আক্রমণাত্মক’ বোলিংয়ের বিকল্প নেই। তাই বাংলাদেশের নতুন বোলিং সেনসেশন মুস্তাফিজুর রহমানকে টেস্টের জন্যই গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন জাতীয় দলের সাবেক পেসার জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা। বাংলাদেশী পেসারদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তনের পরামর্শও দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে একাদশের এই সদস্য।
গত ৮/৯ মাস ওয়ানডে ক্রিকেটে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সঙ্গে জয়ের পাশাপাশি পরে রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দেওয়ার পর টানা তিনটি হোম সিরিজে দুর্দান্ত ছন্দে আছে লাল-সবুজের দল। ঘরের মাঠে একে একে ঘায়েল হয়েছে পাকিস্তান (৩-০), ভারত (২-১) এবং সাউথ আফ্রিকা (২-১)-কে। বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ওয়ানডের সেরা দলগুলোর বিপক্ষে যোগ্যতর দল হিসেবেই এই আধিপত্য অব্যাহত রেখেছে মাশরাফির দল।
এমন ধারবাহিক সাফল্যের সঙ্গে আরেকটি বিষয়েও ধারবাহিকতা। ম্যাচ জিতলে পেসাররাই বাংলাদেশকে জেতাচ্ছেন। কয়েক বছর আগে যেটি অসম্ভব কল্পনা ছিলো এখন তা নিয়মিতই ঘটাচ্ছেন তারা। অন্তত গত ক’টি ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশর জয়ের ভিত্তি তৈরী করে দিয়েছেন কখনও রুবেল, কখনও মুস্তাফিজ কখনওবা তাসকিন।
ওয়ানডের সঙ্গে সঙ্গে এখন টেস্ট ক্রিকেটেও সফল হতে শুরু করেছে বাংলাদেশের পেস ডিপার্টমেন্ট। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে জয়ী হয়েছে বৃষ্টি। শেষ দুটি দিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। কিন্তু যতোটুকু খেলা হয়েছে তাতে বাংলাদেশ দলের সেরা পারফর্মার তরুণ পেস সেনসেশন মুস্তাফিজুর রহমান।
টি-টুয়েন্টি এবং ওয়ানডেতে রাজকীয় অভিষেকের পর টেস্টে ক্রিকেটেও বাজিমাত ঘটিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন সাতক্ষীরার এই বোলিং বিস্ময়। ক্রিকেটের নতুন এ যুবরাজকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ, স্বপ্ন দেখছেন তার পূর্বসূরি বাদশারা।
তাদেরই একজন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে দলের অন্যতম সদস্য, পেসার জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেছেন, পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ খেলতে আপনাকে আক্রমণাত্মক বোলিংই করতে হবে। না হলে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা আধিপত্য বিস্তার করবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে সেই সুযোগটা আমলা দুপ্লেসিদের নিতে দেননি মুস্তাফিজ। যে কারণে পার্টনারশিপ গড়তে চেয়েও সফল হয়নি সাউথ আফ্রিকা। মুস্তাফিজকে দারুণ প্রতিভাবান একজন উল্লেখ করে বাদশা বলেন, ছেলেটার বয়স কম, রান আপ পারফেক্ট, ডেলিভারি-রিদম সবই ঠিকঠাক এবং তা বিশ্বমানের। ওকে ঠিকমত যত্ন করলে সে বাংলাদেশের জন্য আগামীর সম্পদ হয়ে আবির্ভূত হবে।
মাঠে পেসারদের এমন সাফল্য অব্যাহত রাখতে উত্তরসূরিদের জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছেন এক সময়ের জাতীয় দলের অন্যতম সেরা এ পেসার। মুস্তাফিজ-তাসকিনদের বলেছেন, মাথা থেকে ১৪৫ কিলোমিটারে বল করার ‘উদ্ভট স্বপ্ন’ বাদ দিতে। ‘১৪৫-এর স্বপ্ন পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে হবে। আপনি ১৪৫ মারবেন, তবে তা প্রতি বলেই মারার চেষ্টা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু না। আর এটি মারতে না পারলে কেউ আপনাকে দোষি বলবে না।’
বাদশা বলেন, জোরে বল করার চেষ্টা করার চেয়ে একজন পেসার হিসেবে ব্যাটসম্যানদের ‘সমীহ’ আদায় করতে পারাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘদিন বাংলাদেশকে ‘সার্ভিস’ দিতে এবং নিজেদের ক্যারিয়ার আরও সমৃদ্ধ করতে রুবেল-মুস্তাফিজ-তাসকিনদের খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন আনাটা জরুরি বিষয় হিসেবে দেখেন জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা।
তিনি বলেন, আমাদের ক্রিকেটাররা কি খায় আমার জানা আছে। ফলমূলে তারা একেবারেই কম আগ্রহী। তবে এখন আমাদের পেসারদের ‘ফুড-হ্যাবিট’ পরিবর্তন করতে হবে। কারণ ক্রিকেটে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে হলে আপনাকে আগে নিজের ফিটনেস নিশ্চিত করতে হবে, সাফল্য আসবে এর পরে।
সাফল্যের হিসাবে ২০১৫ বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম সফল এক ‘ক্যালেন্ডার’ হয়ে গেছে। চলতি বছর আর কোন ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সূচি আপাততঃ নেই টাইগারদের। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠেই দুটি টেস্ট ম্যাচ বাকি।