লেখালেখিতেই তার সব আনন্দ। আর জীবনকে দারুণ বৈচিত্র্যময় বলেই জানেন বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। বাংলাদেশের প্রখ্যাত একজন সাহিত্যিক তিনি। পঞ্চাশের দশকে মুসলিম নারীদের জীবন যখন অনেক বিধি-নিষেধের বেড়াজালে বন্দী, তেমন সময়ে তিনি বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করেন একজন লেখক হিসেবে। ২০১৭ সালে সালে এসে সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য পেলেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’।
বৃহস্পতিবার ২০১৭ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। সাহিত্যে রাবেয়া খাতুনসহ এ বছর বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে পুরস্কার পাচ্ছেন একটি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ বিশিষ্টজন।
ছোট গল্প, শিশুসাহিত্য, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনী এবং আত্মজীবনীসহ সাহিত্যের সব শাখার সমান ভাবে বিচরণ করেছেন স্বাধীনতা পুরস্কারে মনোনীত রাবেয়া খাতুন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাবেয়া খাতুন চ্যানেল আইকে বলেন, ছোট বেলায় আমি অনেক গল্প শুনেছি, যখন আমি বড় হলাম এবং পড়তে শিখলাম, তখন পড়ে দেখি ওগুলো আমার সব জানা। সেটা খুব আনন্দের। কাউকে গল্প বলছি ও কারো জন্য গল্প লিখছি এটাই আনন্দ।
৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঢাকায় থেকে দেখেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের রোমহর্ষক সব ঘটনা। তার লেখা মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস ‘মেঘের পর পর’ নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। এছাড়াও মধুমতি, ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ অনবদ্য সব উপন্যাস নিয়ে পাঁচটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন খ্যাতিমান নির্মাতারা।
লেখালেখির জন্য ছোটবেলা থেকেই মেনে নিতে হয়েছে বকুনি আর তিরস্কার। লেখাপড়া ভালো লাগেনি কোনওদিনই। এসএসসি পাশ করার পর আর আগ্রহ ছিল না নিজের। পরিবারও আর জোর করেনি।
জীবনটাকে সবসময় বৈচিত্রময় হিসেবে দেখেছেন রাবেয়া খাতুন। চ্যালে আই অনলাইলকে তিনি বলেন, ‘জীবনটাকে আমার কাছে সব সময়ই বৈচিত্রময় মনে হয়েছে। এখনও তাই মনে হয়।’
রাবেয়া খাতুনের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর। তার প্রথম উপন্যাস মধুমতী তাঁতী সম্প্রদায়ের মানুষদের জীবনের দু:খগাঁথা নিয়ে রচিত। পরবর্তীতে এই উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
বড় বোনের কাছে ছোটবেলায় গল্প শুনতে খুব ভালো লাগত তার। সেখান থেকেই গল্পকে ভালেবাসা। ধীরে ধীরে নিজের আগ্রহ তৈরি হয় গল্প লেখাতে। বিভিন্ন পত্রিকায় ডাক মারফত লেখা পাঠানো শুরু সেই পঞ্চাশের দশকে।
এর আগে একুশে পদক, বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। লেখালেখি ছাড়া সাংবাদিকতা এবং শিক্ষকতাও করেছেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমীর কাউন্সিল মেম্বার। জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের গঠনতন্ত্র পরিচালনা পরিষদের সদস্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরীবোর্ডের বিচারক, শিশু একাডেমীর কাউন্সিল মেম্বার ও টেলিভিশনের ‘নতুন কুড়ি’র বিচারক। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জাতীয় বিতর্কের জুরীবোর্ডের বিচারক ও সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাবেয়া খাতুন যুক্ত আছেন বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিজ ক্লাব, বিজনেস ও প্রফেশনাল উইমেন্স ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কথা শিল্পী সংসদ ও মহিলা সমিতির সঙ্গে।
খাতুন ঢাকার বিক্রমপুরে তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে, তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় অবস্থিত ষোলঘর গ্রামে৷ তার বাবা মৌলভী মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ এবং মা হামিদা খাতুন।
১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই সম্পাদক ও চিত্র পরিচালক এটিএম ফজলুল হকের সাথে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের চার সন্তানের মধ্যেে রয়েছেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী।