প্রান্তিক পর্যায়ে বা পল্লী অঞ্চলে বিতরণকৃত ঋণের ৬১ শতাংশ বিতরণ করা হয় এনজিও এবং মাইক্রো ফাইনান্স ইনস্টিটিউশন বা ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের ঋণের সুদহার ২৫ থেকে ১২০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসাইন প্রধানিয়া।
বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট বিআইবিএম এ আয়োজিত ‘ইম্প্যাক্ট অব ব্যাংক বেজড রুরাল অ্যান্ড আরবান ফাইন্যান্সিং অন ইকনোমিক গ্রোথ অব বাংলাদেশ’ বিষয়ক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান। এছাড়া ছিলেন, বিআইবিএম’র পরিচালক শাহ মো. আহসান হাবীব, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের মহাপরিচালক মহা. নাজিমুদ্দিন, বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর ড. বরকত-এ-খোদ, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
আলী হোসাইন প্রধানিয়া বলেন, গ্রামীণ পর্যায়ে মাত্র ৩৯ শতাংশ ঋণ সরাসরি ব্যাংক বিতরণ করে থাকে। বাকি ৬১ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে বিভিন্ন এনজিও এবং ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে হলে প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণকে স্বল্প সুদে সরাসরি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। তা না হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কখনই সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, ২০ বছর আগে যেসব গ্রাহক ব্যাংক থেকে ১৫ হাজার টাকা নিতেন এই মুহূর্তে তারা ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নিচ্ছেন। ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে কিন্তু নতুন গ্রাহক সৃষ্টি হয়নি। টেকসই উন্নয়নে পৌঁছাতে গেলে সকল পরিবারকেই অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসতে হবে।
দেশে সেক্টরভিত্তিক ঋণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক কোনো গবেষণা নেই মন্তব্য করে প্রধানিয়া বলেন, জানি না কৃষি সেক্টরে কি পরিমাণ ঋণ বিতরণ প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী সকল ব্যাংক মোট বিতরণের ২ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ করে আসছে। এই বিষয়টিও বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।
কৃষি ব্যাংকের এই এমডি আরো বলেন, ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে অন্যতম বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। তবে অন্যান্য সেক্টরের খেলাপি ঋণের চেয়ে কৃষি খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ খুবই কম। গড়ে ১০ শতাংশেরও নিচে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং ব্যাংক খাত রক্ষায় এই ঋণের বিতরণ আরো বৃদ্ধি করা যায় কিনা এ বিষয়ে ভাবার সময় এসেছে।
এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, যে কোনো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে পরিমাণগত দিক বিবেচনার চেয়ে গুণগত মান বিবেচনা করা অধিক জরুরি। পুরাতন গ্রাহককে বারবার ঋণ না দিয়ে দেশের ব্যাংকগুলোর প্রতি নতুন গ্রাহক তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, যেসব ব্যাংকের শাখা গ্রামাঞ্চলে নেই তারা অনেক সময় এনজিওর মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করতো। কিন্তু এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। গ্রামাঞ্চলে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে কোনো নীতিগত সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন এই ডেপুটি গভর্নর।
হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ধরণের কৃষি ভিত্তিক পদক্ষেপে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। এ কারণে বিদেশি ব্যাংকও গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং এবং ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব আর্থিক অর্ন্তভূক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ব্যাংকের একটি বড় অংশ অর্থায়ন হয় গতানুগতিক পণ্যে। এর পরিবর্তে কৃষি ভিত্তিক নতুন পণ্যে অর্থায়ন করলে ঋণ খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা কম। এর মধ্যে রয়েছে কুমির, কাঁকড়া চাষ, কচ্ছপ, কেঁচো, উটপাখি, সাপের বিষ এবং ব্যাঙ-এর পা। যা এরই মধ্যে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং খামারিরা লাভবান হয়েছে।