পুলিশের খাতায় পলাতক হলেও স্কুল মাদ্রাসা শিক্ষক হিসেবে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন পেট্রোল বোমা হামলার আসামী জামায়াত শিবির নেতারা। ওই সব স্কুল মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের বেতন-ভাতার বিলে প্রতি স্বাক্ষর করেছেন।
গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন নাশকতা ও পেট্রোল বোমা হামলায় অভিযুক্ত জামায়াত শিবির নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসায় কর্মরত অন্তত ১৬ জন। কেউ প্রতিষ্ঠান প্রধান আবার কেউ করেন শিক্ষকতা। এদের মধ্যে জামায়াত শিবিরের ঘাঁটি বলে পরিচিত পলাশবাড়ী উপজেলাতেই আছেন অন্তত ১৪ জন।
নাশকতার ২১ মামলা মাথায় নিয়ে পলাতক রয়েছেন মেরির হাট ফাজিল মাদাসার অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সেক্রেটারি মাওলানা নজরুল ইসলাম এবং শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে থাকা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী বেলাল উদ্দিন। পুলিশ তাদের খুঁজে না পেলেও খাতাপত্র বলছে, নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন তারা। বেতন ভাতা বিলে প্রতি স্বাক্ষর দিচ্ছেন সংসদ সদস্যের সুপারিশে সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা।
পলাশবাড়ী সিনিয়র মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম বলেন, এদের আগে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে। তবে তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। এতদিন ওইসব শিক্ষাক কিভাবে বেতন-ভাতা পেয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বেতন ভাতা কেনো ফেরত দিতে বলা হবে না তারও কারণদর্শাতে বলা হয়েছে।
নাশকতার দশ মামলার আসামী পলাশবাড়ী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু তালেব। পলাতক থেকে নির্বাচিত হন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। সে সময়েও হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করে বেতন ভাতা তুলেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা মোকসেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ বলেন, শুধু এই প্রতিষ্ঠানে না, আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারা কেনো ঐ সব জামায়াত নেতাদের বেতন-ভাতা দিচ্ছে তা পরিষ্কার না।
তবে গ্রেফতারের পর বেতন-ভাতা বন্ধ হয়েছে তিলকপাড়া মাদ্রাসার সুপার সদর ইউনিয়ন জামায়াত আমীর রফিকুল ইসলামের। আরও আছেন বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা মাথায় নিয়ে পলাতক থাকা পলাশবাড়ী সিনিয়র মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ জামায়াত নেতা আব্দুল মজিদ আকন্দও। ওই মাদ্রাসাটির পরিচালনা পর্ষদে আছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বেতন হচ্ছে তাদেিই স্বাক্ষরে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগে যিনি সভাপতি ছিলেন তিনি বেতন দিয়েছেন। তবে কিভাবে দিয়েছেন সেটা বোধগম্য না।
ঘটনার সত্যতা জানিয়েছেন গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুলিশ তাদের ক্রমাগত খুঁজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। এই সুযোগে তারা এসে বেতন-ভাতা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এটাতো হতে পারে না। এ ব্যাপারে গোপনে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানে হাজির না হয়ে গোপনে হাজিরা খাতা ও বেতন বিলে স্বাক্ষর করার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ক্রমাগত হুমকীর মুখে আছেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন কেউ কেউ।
পলাশবাড়ী উপজেলা জাসদের সভাপতি নুরুজ্জামান প্রধান এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে গিয়ে জামায়াত নেতাদের হুমকির মুখে পড়েছেন। নিরাপত্তা চেয়ে তিনি পলাশবাড়ী থানায় জিডিও করেছেন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে নুরুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পরও জামায়াত নেতারা যখন আওয়ামী লীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বেতন-ভাতা তুলে নেয় তখন বিষয়টাকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে পরস্পরবিরোধী মনে হয়।
পলাতক থাকা জামায়াত নেতারা কি করে বেতন-ভাতা তুলছেন তা ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের কাছে জানতে চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, যারা আসলেই অনুপস্থিত, তারা কিভাবে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন তা পুলিশের বিষয় না। আইন বা বিধিতে স্পষ্ট বলা আছে, সরকারি কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের কেউ যদি অভিযুক্ত হয়, তাহলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। পুলিশ সেটা জানিয়েছে।
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অাগে জামায়াত শিবিরের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হামলায় চালানো হয় পুলিশের উপর। ওইদিন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ বামনডাঙ্গায় দিনের বেলা পিটিয়ে হত্যা করা হয় ৪ পুলিশ সদস্য।