চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বৃহস্পতির উত্তাপ ‘গ্রেট রেড স্পট’

সৌরজগতের দানব গ্রহ বৃহস্পতির লক্ষ্যণীয় এক বৈশিষ্ট্য হলো তার পেটে থাকা বিশাল একটি লাল দাগ, যার নাম গ্রেট রেড স্পট।

এটি আসলে একটি হারিকেন, ভয়াবহ এক ঘূর্ণিঝড় যা তিনটা পৃথিবীর সমান। তবে এই ঘূর্ণিঝড় শুধু বজ্রবৃষ্টি ঘটায় তা নয়। ঝড়টি তার ওপরে থাকা বায়ুমণ্ডলে তীব্র উত্তাপের সৃষ্টি করে।

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মিলিত একটি গবেষণা দল শক্তিশালী ইনফ্রারেড টেলিস্কোপের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখেছেন, গ্রেট রেড স্পটের ওপরের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা সবসময়ই প্রচণ্ড বেশি থাকে।

তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে তা ১৫শ’ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্তও চলে যায়, যা পুরো বৃহস্পতির অন্য যে কোনো জায়গার চেয়ে কয়েকশ’ ডিগ্রি বেশি।

গবেষকদের ধারণা, ঝড়টির ওপরের বায়ুমণ্ডলের পাতলা স্তরে ব্যাপক বজ্রপাতের মতো শব্দ তরঙ্গ বারবার সৃষ্টি হওয়া এবং আবার ঠিক পরেই আরেকটি বজ্রপাতের শব্দ তরঙ্গে তা ভেঙে যাওয়ার কারণেই এত উত্তাপ তৈরি হচ্ছে।

গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকৃতিবিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল নেচার-এ প্রকাশিত হয়েছে।

এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিলেন না সূর্য থেকে এত দূরে থেকেও কীভাবে বৃহস্পতির মতো গ্যাস দানব গ্রহগুলো তাদের বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে প্রচুর উত্তাপ ধরে রাখতে পারে। এই গবেষণাটির মধ্য দিয়ে সন্দেহ থাকলেও আপাতত এই আচরণের একটি ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া গেল।

যদি গবেষণাটি অনুসারে বিখ্যাত গ্রেট রেড স্পটের মতো নিজস্ব তাপ-উৎস সব গ্যাস দানব গ্রহের থাকে, তবে গ্যাস দানব গ্রহের টিকে থাকা ও তাপমাত্রা ঠিক রাখা নিয়ে বহু বছর ধরে চলে আসা ধাঁধার সমাধান হয়ে যাবে।

গবেষণার সহ-রচয়িতা ইউনিভার্সিটি অব লিসেস্টারের ড. টম স্টলার্ড বলেন, বৃহস্পতি গ্রহের তাপপ্রবাহ বিশ্লেষণের পেছনে দু’তিন দশকের প্রচেষ্টার পথে এটি একটি বিরাট পদক্ষেপ।

গ্রেট রেড স্পটের উত্তাপ ছাড়া বৃহস্পতির তাপপ্রবাহ ব্যবস্থার পেছনে আর কোনো যুক্তি থাকা সম্ভব নয় বলে জানান গবেষণাপত্রের মূল লেখক বস্টন ইউনিভার্সিটির ড. জেমস ও’ডনোগিউ।

বৃহস্পতির দুই মেরু প্রচুর তাপ উৎপন্ন করলেও তা পুরো বৃহস্পতি পর্যন্ত একই হারে ছড়ানো সম্ভব নয় যদি না আরও কোনো এলাকাভিত্তিক তাপীয় উৎস থাকে। সেই উৎস হিসেবে লালরঙা ঘূর্ণিঝড়টি কাজ করছে বলে দাবি এই বিজ্ঞানীর।