‘ভাষার কসম খেয়ে আমরা দাঁড়াবো ঘিরে/ আমাদের মাতৃভূমি জল অরণ্য জমিন’ এমন প্রতিপাদ্য ছিল আয়োজনের। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই অুনষ্ঠিত হল দিনব্যাপী রুদ্রমেলা। একক ও দলীয় কবিতা আবৃত্তি-নাচ-গানে মুখরিত হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুল চত্বর। এক বছরের বিরতি শেষে আবারো অনুষ্ঠিত হল এ মেলা।
সকাল ৯টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৭ তম রুদ্র মেলার। তবে বৈশাখি ঝড়ে মেলা পণ্ড হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু বেলা ১১টায় শুরু হয় মেলা। সংস্কৃতিজন সৈয়দ হাসান ইমাম মেলার উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, এর আগে রুদ্র মেলায় নানা ভাবে জড়িত ছিলাম। তবে উদ্বোধন করছি এই প্রথম। যা আমার জন্য সম্মানের। বাংলাদেশের বর্তমান তারুণ্যকে বুঝতে রুদ্রকে উপলব্ধি করা এখন ভীষণ প্রয়োজন। খুব প্রয়োজন এই মেলার বিস্তৃতির।
বিভিন্ন সময়ে রুদ্রমেলার উদ্বোধন করেছেন প্রখ্যাত শিল্পী এস এম সুলতান, কবি সুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রাহমান, রাহাত খান, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, শওকত ওসমান, ভাষাসৈনিক গাজীউল, সাবেক উপাচার্য এ কে আজাদ চৌধুরী, ফয়েজ আহমেদ এর মত ব্যক্তিত্ব।
মেলায় আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও রুদ্র সংসদের আহ্বায়ক আবদুল কুদ্দুছ, কবি নুরুল হুদা, কবি আবু আবু নাসের কামাল চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আবৃত্তিশিল্পী শাহাদাত হোসেন নিপু এবং রুদ্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী।
মেলায় একক গান, দলীয় এবং বাউল গান ছিল। একক গান করেন মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী রফিকুল আলম, মহিউদ্দিন আলম ময়না, শিমূল সাহা প্রমুখ শিল্পী। ৬টি দলীয় সঙ্গীত ৪টি বাউল সংগীত ছিল মেলায়। ১৫ টি আবৃত্তি দল মেলায় আবৃত্তিতে অংশ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে স্বনন, প্রকাশ প্রভৃতি দল। এছাড়া ৩টি নাচের দল মেলার অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
মেলা উপলক্ষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছকে আহ্বায়ক ও রুদ্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় নবীন প্রবীন কর্মীদের নিয়ে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সত্তর ও আশির দশকের কবিদের মধ্যে এক অনন্য প্রতিভার অধিকারী নিবেদিত প্রাণ। সাহিত্য ছাড়াও সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। সাহসী উচ্চারণ, অনন্য দেশপ্রেম ও মননশীল রচনার জন্য রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বর্তমান তরুণ সমাজেরও প্রিয় কবি।