বই কাগজের তৈরি। তাই সেটা যদি একবার ভিজে যায়, কোনোভাবেই আর সেটাকে ঠিকঠাক করার উপায় থাকে না। গতকালও ঘটেছে তেমনটাই। ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতেই বিপন্ন পুরো বইমেলা।
গতকাল বুধবার সকালের এক পশলা শিলাবৃষ্টিতেই পানিতে সয়লাব পুরো বইমেলা। মেলার স্টলের উপর দিয়ে পানি ঢোকার সাথে সাথে নিচে পানি জমে ক্ষতি হয়েছে বই। সেই সাথে মেলা প্রায় পুরো একদিন বন্ধ থাকায় প্রকাশকদের বিক্রি-বাট্টাও বন্ধ ছিলো।
প্রকাশকদের দাবি তাই বইমেলার সামনের দিনগুলিতে আগেই এসব বিষয় নিয়ে একটু সচেতন থাকা। সেই সাথে বৃষ্টিতে প্রকাশকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রতিদিনের মেলার সময় দুই ঘন্টা বাড়ানোর কথাও বলেছেন তারা।
শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান বলেন, এবারের বৃষ্টিতে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মূলত দুই দিক থেকে। এক তো সিলিং ভেঙে পানি ঢুকেছে স্টলের ভেতরে, আবার নিচ দিয়েও পানি এসেছে। এতে নষ্ট হয়েছে অনেক বই। অনেক ক্ষতি হয়েছে প্রকাশকদের।
ভাষাচিত্র প্রকাশনীর প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, আমরা আগে থেকেই খানিকটা প্রস্তুত ছিলাম। পলি বিছিয়ে রেখেছিলাম নিচে। সেই কারণে অনেক কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তবে অনেকেই অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কারো কারো তো ৪-৫ লাখ টাকার বই নষ্ট হয়েছে।
নিজেদের ক্ষতির কথা জানান তাম্রলিপির প্রকাশক একে এম তারিকুল ইসলাম রনি এবং দেশ পাবলিকেশন্সের প্রকাশক অচিন্ত্য চয়ন। জানান এমন হঠাৎ বৃষ্টিতেই ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন তারা। আগেই প্রস্তুতি থাকলে এভাবে ভুগতে হতো না অনেক প্রকাশককে।
এমন সমস্যার সমাধানে আগে থেকে কোনো পরিকল্পনা না থাকায় বড় ক্ষতির কারণ বলে মনে করছেন প্রকাশকরা।
রবিন আহসান বলেন, কখনোই আগে থেকে পরিকল্পনা নেওয়া হয়না। অথচ এমন সব বিপর্যয় প্রতিবছরই দেখা দেয়। কয়েকবার বইমেলা আগুনের শিকার হয়েছে বলে সেই সমস্যার সমাধানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তাছাড়া আর কোনো দুর্যোগ প্রস্তুতি নেই। প্রস্তুতি থাকলে সমস্যার মুুখ দাঁড়িয়েও ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।
খন্দকার সোহেল বলেন, দেশের বাইরের কিছু বইমেলার আয়োজন দেখলে আমরা দেখবো সেখানে গুচ্ছ গুচ্ছ স্টল বানানোর পরিকল্পনা থাকলেও তা অনেক গুছানো। দেখা যায় নিচটা এমন করে বাঁধানো যেন পানিতে সমস্যা না হতে পারে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ করার আর কী উপায় থাকতে পারে?
প্রকাশক অচিন্ত্য চয়নও যোগ দেন অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকেই। তাম্রলিপির প্রকাশক একে এম তারিকুল ইসলাম রনি বলেন, আগে থেকেই প্রস্তুতির অভাবেই নষ্ট হয়েছে বইগুলো। প্রস্তুতি থাকলে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
এক ঘণ্টা বৃষ্টিতে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়েছে প্রকাশকদের। এই সমস্যা সমাধানে কিছু ছোট ছোট পথও বাতলালেন প্রকাশকরা।
অচিন্ত্য চয়ন বলেন, মেলার বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন। এই সময়ে এমন বৃষ্টি ক্ষতির মুখেই ফেলেছে প্রকাশকদের। মেলার আর বেশি দিন হাতে নেই এই সময়ে যদি বাংলা একাডেমি প্রতিদিনের মেলায় ২ ঘণ্টা করে বাড়িয়ে দেয়। সেটাও প্রকাশকদের জন্য অনেক ইতিবাচক হবে।
এবারের মেলায় যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েছেই। তবে আগামীবার যেন এমন কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সেটা যেমন আয়োজকদের নিতে হবে তেমনই অংশগ্রহনকারীদেরও নিতে হবে। বইমেলার লটারীটা যদি আর একটু আগেই করা যায় তাহলে স্টল গোছানোর জন্য প্রকাশকরা যথেষ্ট সময় পাবে। তাছাড়া গুচ্ছ স্টল করলে সেটা যেন পাকা অবকাঠামোর উপরে করা গেলেও কার্যকর হবে। স্টলটা ঠিকঠাক গোছানো থাকলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমে আসবে বলেই মনে করেন খন্দকার সোহেল।
তারিকুল ইসলাম রনি বলেন, মালিক ও প্রকাশকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। অনেক প্রকাশনীর সামনে নিচু থাকার কারণে বেশি পানি জমে গেছে। বালু বা মাটি ফেলে যদি বইমেলা প্রাঙ্গনটি সমতল করা যায় তাহলে পানি জমার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। ক্ষতির পরিমাণও অনেকখানি কমে আসবে।
রবিন আহসান মনে করেন, বইমেলায় বেশিরভাগ স্টলের সামনে ইটের রাস্তা নেই। সেটা একটা কারণ। আগামীতে যদি আমরা আগে থেকেই প্রস্তুত থাকি তাহলে এই সমস্যা সমাধান করা সহজ হবে।