২০১৭ সাল। ৭৫ বছর বয়সি প্রচ্ছদকন্যা হিসেবে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী দিলারা জামান। সে বছর ম্যাগাজিন ‘আইস টুডে’র আগস্টের ‘ওয়ার্ক অফ আর্ট’ সংখ্যাটিতে দিলারা জামান ছাড়াও স্পটলাইটে ছিলেন সারা যাকের, শম্পা রেজা, শামীম খান ও শারমিন লাকী। মাঝখানে এক বছর বিরতি নিয়ে ফের আলোচনায় প্রচ্ছদ কন্যা! এবার একা ৭৭ বছর বয়সী দিলারা। আগেরবার উপমহাদেশীয় সাজে তাকে পাওয়া গেলেও এবার পুরোপুরি ওয়েস্টার্ন লুকে হাজির তিনি। প্রচ্ছদ কন্যা হিসেবে তার অনুভূতি, সাম্প্রতিক কাজ ও ভাবনা নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন প্রবীন এই অভিনেত্রী:
আপা, কেমন আছেন?
ভালো আছি। তুমি কেমন?
ভালো আছি। আপনিতো আবার সাড়া ফেলে দিলেন…?
কীভাবে, কী হয়েছে আবার?
একটা ম্যাগাজিনের ‘প্রচ্ছদ কন্যা’ আপনি। খুব আধুনিক পোশাকে?
(ফোনের অপরপ্রান্তে হেসে উঠলেন দিলারা জামান)। আরে, এটা আর বলো না!
প্রচ্ছদে খুব দুর্দান্ত লাগছে আপনাকে, সবাই প্রশংসা করতে শুরু করেছে…
দুর্দান্ত না ছাই (বলেই ফের হাসলেন)!
এরআগেও ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে মডেল হয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এবারের ফটোশুট ও প্রচ্ছদ হওয়ার পরিকল্পনা কীভাবে হলো?
আগেরটায়তো আমি, সারা জাকেরসহ আরো কয়েকজন একসঙ্গে করেছি। এবার এটারও পরিকল্পনা আইস টুডের ওরাই করেছে। ওয়েস্টার্ন লুকে আমাকে কেমন দেখায়, এটার প্ল্যান থেকেই একদিন আমার সাথে কথা বলে। একটু ডিফারেন্ট লুকে কেমন দেখায় আমাকে, এগুলো ওদেরই পরিকল্পনা সব। একদিন দেখি আমার কাপড়ের মাপজোখ নিচ্ছে, পরে দেখি আমার জন্য প্যান্ট, কোট নিয়ে হাজির। বলে এগুলো পরে ফটোশুট করতে হবে। অন্যান্য কাজের মতো আমি নিজেও উপভোগ করেছি এ কাজটা। তবে এখনো কিন্তু আমি ম্যাগাজিনটা দেখিনি।
ফেসবুকে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদটা আজকে দিলো ‘আইস টুডে’। প্রচুর মানুষ ইতোমধ্যে শেয়ার, কমেন্ট করছে। এই বিষয়গুলো কীভাবে দেখেন?
মানুষেরতো আর কাজ নেই, উদ্ভট কিছু পেলেই এগুলোতে মেতে থাকে (আবারও হাসি)।
এগুলো আপনি এনজয় করেন?
এনজয়তো করিই, নাহলে কেউতো আমাকে আর জোর করছে না। এনজয় না করলে কিছু করা যায়? এগুলো করার পর অনেক প্রশংসা করে মানুষ। বলে, আপা আপনাকে অমুক ছবিতে দুর্দান্ত লাগছে, তমুক লুকে প্রাণবন্ত লাগছে। নানান জনের নানান মত, এনজয় করি এগুলো। ভাবি, কতো মানুষ কতোভাবে আমাকে চিনতে চায়, ট্রিট করতে চায়!
এবারের ছবিতেতো আপনি বেশ ইয়াং?
ইয়াং না! বুড়ো মানুষকে কি আর কেউ ইয়াং করতে পারে! একটু গর্জিয়াস লাগতে পারে হয়তো। দেখো না, ওয়েস্টার্ন বুড়িদের যেমন লাগে এরকম লাগবে আরকি আমাকে, এই প্রচ্ছদে! এটাই প্ল্যান ছিলো। ফারজানা শাকিলা আমার চুলটা বিদেশি বুড়ি মহিলাদের মতো উল্টা করে দিছে আরকি!
ছবিতে আপনাকে ইয়াং দেখানোর যে প্রয়াস, এগুলো দেখে কি আপনার তরুণী হতে ইচ্ছে করে কখনো?
নাহ্! মোটেও না। তখনকার বিউটি-ই আমাকে টানে বেশি। পায়ে আলতা পরতাম, কপালে একটা টিপ, কখনো একটা হাতখোপা, টাঙ্গাইলের একটা শাড়ি! এগুলো আমি খুব মিস করি। সনাতন একটা বাঙালিপনাকে আমি মিস করি। ওই জীবনটা, ওই সাদামাটা সাজটা কখনো কখনো খুব তাড়িত করে। এই বয়সেতো আর এগুলো লাগাতে পারি না, পরতে পারি না, কিন্তু খুব টানে আমাকে এই বিষয়গুলো। আমার জীবনে ফেলে আসা তরুণী বয়সের সেই বিশ-পঁচিশ বছরের সময়কে খুব মিস করি।
বর্তমানে আপনার বয়স কতো, এটা কি জানা যায়?
অবশ্যই, আসছে জুন মাসে আমার বয়স ৭৭ বছরে পড়বে।
এই যে ৭৬ বছর বয়সের একজন মানুষের মধ্য দিয়ে নানা জন নানান এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইছে, বা আপনাকে একটু গর্জিয়াস দেখাতে চায় এগুলো কীভাবে দেখেন?
সত্যি কথা বলতে, খুব এনজয় করি। দেখি, কে কীভাবে আমাকে দেখাতে চায়। এই বয়সে এসেও আমি সেটা পারি কিনা! চ্যালেঞ্জ থাকে একটা মনে মনে। দেখি, আরেহ আমিতো উতরে গেছি। লোকজন আমাকে খুব অ্যাপ্রিসিয়েট করছে।
২০১৭ সালের একটা ফটোশুটে প্রচুর সাড়া পাওয়ার পর এবার আরেকটা, সামনে আরো এমন ইচ্ছে আছে?
গতবারেরটাতো অনেক সাড়া পড়েছিলো। সেটা ভাইরাল হয়ে গিয়েছিলো। এবারেরটাতো কেবল আজকে ছাড়লো। জানি না এখনো এটার বিষয়ে। কিন্তু ‘আইস টুডে’ আমাকে তাদের অফিসে ডেকে কমপ্লিমেন্ট দিয়েছে, ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেছে। খুব প্রশংসা করেছে তারা সবাই।
বুড়ো বয়সে নতুন একটা শব্দের সাথে আপনার সাক্ষাৎ হচ্ছে কয় দিন পর পর। কেমন লাগছে?
কোন শব্দ?
ভাইরাল…
(প্রাণ খুলে হাসলেন দিলারা জামান। তারপর বললেন…) শোনো ‘ভাইরাল’ বিষয়টা আমি জানতামই না। এই শব্দের সাথে আমার পরিচয়ও খুব বেশিদিনের না। আমি প্রথমে মনে করছি কি, এটা ভাইরাস জাতীয় কিছু একটা! কিন্তু পরে আমার সাথে যে ছেলেটা কাজ করে সে বলে কি, আন্টি আপনিতো একটা ব্যাকডেটেড! পরে যখন ভাইরাল হওয়ার মানে বুঝলাম, তখন বলি দেখো আমি কি বোকা! আসলে আমার ফেসবুক নাইতো, এগুলোর খবরও খুব জানি না। এখনতো কতো প্রযুক্তি, যা মানুষকে কতো ভাবে উন্মাদিত করে, আলোড়িত করে! আমাদের জীবনেতো এগুলো কিছু ছিলো না। তবে এটুকু বুঝি, এগুলো ক্ষণিকের জন্য, খুব যে আজীবন মনে ধরে রাখার মতো তা কিন্তু না। এই একটু নাড়া দিয়ে যাবে, কাল বৈশাখি ঝড়ের মতো। আবার ভুলে যাবে সবাই।
সাম্প্রতিক কাজ কর্ম নিয়ে আপনার ব্যস্ততা কেমন?
আমার মেয়ে দেশে এসেছে। সে আমেরিকায় থাকে। সে দেশে আসায় আপাতত কাজ করছি না। আমাকে নিয়ে দিল্লী গিয়েছিলো ক’দিন আগে, দেশে একা থাকিতো! একসঙ্গে ঘুরে এলাম আমরা মা মেয়ে। সে আবার চলে যাবে এই মাসের ১৩ তারিখে। সে গেলে আবার কাজ কর্ম শুরু করবো।