লোকসভায় পাস হওয়ার একদিন পর ভারতের বিতর্কিত ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল-২০১৯’ বুধবার দুপুরে দেশটির সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় উত্থাপিত হতে যাচ্ছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও বিলটি পাসের বিষয়ে আশাবাদী ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।
এনডিটিভি জানায়, রাজ্যসভায় এই মুহূর্তে মোট সদস্য সংখ্যা ২৪০ জন। বিল পাস করতে লাগবে ১২১। বিজেপি ও তার মিত্রদের রয়েছে ১১৬ জন সদস্য। তবে দলটি দাবি করছে, ১৩০ জন সদস্য এই বিলের পক্ষে ভোট দেবেন।
সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভারতের লোকসভায় ৩১১/৮০ ভোটে এই বিলটি পাস হয়। এখন তা রাজ্যসভায় পাস হলেই আইনে পরিণত হবে।
মূলত বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ। এতে বলা হয়, আগের অন্তত ১১ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর ভারতে থাকলে ওইসব দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য যার ভারতে গেছেন।
এর আগে সোমবার দুপুরে বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বিলটির পক্ষে নানান যুক্তি তুলে ধরেন।
তবে শুরু থেকেই বিলটির তীব্র বিরোধীতা করছে কংগ্রেস, বামসহ বেশ কয়েকটি দল। তাদের দাবি, এই বিল ভারতের সংবিধানের মূল চরিত্র ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত। ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে।
ভারতের সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হয়েছে মন্তব্য করে লোকসভায় প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, এই বিলের মাধ্যমে সংবিধানের সমানাধিকার সংক্রান্ত ১৪ ধরার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অমিত শাহ বারবার বলার চেষ্টা করেন, ভারতের মুসলিমদের সাথে এই বিলের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের কোনো ক্ষতি এই বিলে হবে না।
তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, এই দলটি ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ না করলে আজ এই বিল আনতে হতো না।
গত ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে নির্যাতিত হয়ে ভারতে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে ‘নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল-২০১৯’ অনুমোদন দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
বিলটি ভারতের সংসদের দুইকক্ষে পাস হলে প্রতিবেশী এসব দেশের হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সী এই ৬টি সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে।
এর আগে ২০১৬ সালে আনা ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ বিগত লোকসভায় পাস করতে পারলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে রাজ্যসভায় তা পাস করতে পারেনি মোদি সরকার। আবার ক্ষমতায় এসে নতুন করে তা পাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।