‘এই কি আমার গ্রাম, মধ্যরাতে যে আমাকে; করতো উন্মন, গাঢ়স্বরে ডাকতো আমার নাম ধরে?’। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আটকা পড়া বাংলাদেশি জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান আজ নিজ গ্রামে ফিরছেন। তবে গাঢ়স্বরে নাম ধরে ডাকলেও আজ তার কোনো সাড়া নেই। তিনি আজ নিষ্প্রাণ। যুদ্ধের কোনো অংশ না হয়েও তিনি এর শিকার হয়েছেন। নিজ গ্রামে ফিরছেন নিথর দেহে যুদ্ধের ধ্বংসলীলার সাক্ষর হয়ে।
হাদিসুরের চাচাতো ভাই সোহাগ হাওলাদার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন: ‘এবার দেশে এসে হাদিসুরের বিয়ে করার কথা ছিল। আমার ভাই ফিরল লাশ হয়ে।’ বিয়ের সাজ নয়, এখন তার গ্রামের বাড়িতে দাফনের আয়োজন। সেজন্যই হাদিসুরের খালা মমতাজের কণ্ঠে গগণবিদারী আক্ষেপ: ‘ওরে বাবা, কাফনের কাপড় পইরা তুই কেন আইলিরে? ওরে বাবারে, ওরে হাদিসুররে, এর আগে আসার পর কইছি তুই বিয়া কইরা যা। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে আমারে কয়, খালামণি, তুমি মাইয়া দেইখা রাইখো। আমি আর অমত করমু না। আমি আইসা বিয়া করমু।’
যুদ্ধ এখনও যেমন ধ্বংসের সাক্ষর রাখছে, অতীতেও তাই ছিল। ‘যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা, যুদ্ধ মানেই আমার প্রতি তোমার অবহেলা’, এটাই চিরন্তন সত্য। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নামক শত্রু শত্রু খেলাও অচিরেই শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমাদের আহ্বান: শুধু এ দু’দেশ নয়, সাম্রাজ্যবাদী সব শক্তিই নিজেদের সংবরণ করে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ করুক। বন্ধ হোক যুদ্ধের প্রেক্ষাপট।
ইউক্রেনে আটকা পড়া সেই জাহাজের খবর চ্যানেল আইসহ দেশীয় অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে আসার পর থেকে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কর্মতৎপরতা প্রশংসনীয়। ২৮ নাবিককে যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং নিহত হাদিসুরের মরদেহ ফিরিয়ে আনা এই কর্মতৎপরতারই অংশ। তবে সবাইকে জীবিত ফেরত আনতে পারলে আমাদের হৃদয়ের এই রক্তক্ষরণ হতো না। থাকত না ভাই হারানোর জ্বালা। সর্বোপরি যুদ্ধ না হলেই আমরা সবচেয়ে খুশি হতাম। অবশ্য এখনও সেই সুযোগ রয়েছে।
বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের নিহত তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুরের এ মৃত্যুর ক্ষতি কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। তবুও ক্ষতিপূরণসহ তার পরিবারের পাশে সরকারকে দাঁড়াতে হবে। সরকার সেই মানবিকতা দেখাবে বলেই আমরা আশাবাদী। একইসাথে যুদ্ধের কোনো পক্ষ না হওয়ার পরও কেন বাংলাদেশি জাহাজে হামলা হলো, সেই জবাবও বাংলাদেশকে পেতে হবে। ভবিষ্যতে যেন বাংলাদেশ এমন কোনো দুর্ঘটনার শিকার না হয়, আমরা সেই কামনা করছি।