বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতা ইব্রাহিমের যোগ্যতা না থাকার পরও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৬তম বিসিএসে নন ক্যাডার পদে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, অবৈধভাবে আয় করা অর্থ দিয়ে খুলনায় বানিয়েছেন চারতলা বাড়ি। নড়াইলেও আছে তার আরেকটি ডুপ্লেক্স বাড়ি।
এসব তথ্য জানিয়ে সিআইডি বলছে, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও ইব্রাহিম বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, বিসিএস, ব্যাংক ও সরকারি চাকরির পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের জালিয়াতি চক্রের মোট ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সম্প্রতি এ চক্রের মূল হোতাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এই চক্রের মূলোৎপাটন হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
মোল্লা নজরুল বলেন, গত পাঁচ দিনের সাঁড়াশি অভিযানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিজিটাল প্রশ্নফাঁসে চক্রের মাস্টার মাইন্ড বিকেএসপি’র সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, বিএডিসি’র সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, ৩৬তম বিসিএসে নন ক্যাডার পদে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে সুপারিসপ্রাপ্ত ইব্রাহিম এবং ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ আইয়ূব আলী বাঁধনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে মূলহোতা ইব্রাহিম মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৬তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য সুপারিসপ্রাপ্ত হয়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও তার খুলনা এলাকায় চারতলা বাড়ি ও নড়াইলে ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। রাজধানীতে রূপালী মানি এক্সচেঞ্জ নামে তার একটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
আরেক হোতা অলিপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতির মাস্টারমাইন্ড। কয়েক বছরে সে জালিয়াতির মাধ্যমে তিন কোটি টাকা আয় করে। ইব্রাহিম, মোস্তফা ও বাঁধন বিসিএসসহ সকল নিয়োগ পরীক্ষার মূল হোতা। এদের চারজনের প্রায় ১০ কোটি টাকার নগদ অর্থ ও সম্পদের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি।
তিনি বলেন, এছাড়াও কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে প্রশ্ন সরবরাহের অভিযোগে রাজধানীর অগ্রনী স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ বাবুল, পিওন আনোয়ার হোসেন মজুমদার, নুরুল ইসলাম এবং ধানমন্ডি গভ. বয়েজ স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক হোসনে আরা বেগম ও পিওন হাসমত আলী শিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মোল্লা নজরুল বলেন, অলিপ, ইব্রাহিম, বাঁধন ও মোস্তফাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে জানিয়েছে, কেন্দ্র থেকে প্রশ্নফাঁসের পর আলিয়া মাদ্রাসা এবং ঢাবির এফ রহমান হলের দুটি কক্ষে বসে অভিজ্ঞদের দিয়ে সমাধান করে তা ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করতো।
‘গত কয়েক বছরে জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও সরকারি চাকরিতে শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে চক্রটি। জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজনের তথ্য পাওয়া গেছে।’
যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
মোল্লা নজরুল আরো বলেন, গত ১৯ অক্টোবর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলে অভিযান চালানো হয়। এরপর বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে নাটোরের ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসানসহ এ পর্যন্ত ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘এর আগে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলহোতারা ধরা পড়লেও ডিভাইসের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতির হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিলো। অভিযান শুরু পর আমরা এর শেষ দেখব বলেছিলাম। সর্বশেষ অভিযানে ৯ জনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে আমরা শেষ পর্যায়ে রয়েছি।’