‘১৯৯০ সালে এসেছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা। তাদের ফেরত পাঠাতে সময় লেগেছিল ১৩ বছর। আর এবার এসেছে ১০ লাখেরও বেশি। এদের ফেরত পাঠাতে কত বছর লাগবে তা নির্ভর করছে মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছার ওপর।’ কথাগুলো বলেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ঢাকায় সফররত অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব সলিল শেঠির সঙ্গে বৈঠকে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে চুক্তি সম্পাদিত হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না।
এদিকে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়ক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী মহাসচিব উরসুলা ম্যুলার বলেছেন, মিয়ানমারের সংকটপূর্ণ রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এখনো সহায়ক নয়। তিনি আরও বলেছেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অবশ্যই রোহিঙ্গাদের জন্য চলাচলের স্বাধীনতা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, জীবনযাত্রা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
মিয়ানমার সরকারকে এতটা মানবিক ভাবার কারণ নেই। তারা ওপর দিয়ে অনেক মানবিক হওয়ার ভান করে বিশ্বকে জানান দিতে চায় তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। তাদের দিক থেকে কোনো প্রকার কার্পণ্য দেখাবে না রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবার ব্যাপারে। কিন্ত যখনই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ কথা বলে তখনই তারা নানা রকমের শর্ত জুড়ে দিয়ে বিষয়টিকে ধীর গতি করে দেয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা তো যাওয়ার সুযোগই পাচ্ছে না, উপরন্তু প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে বাংলাদেশে।
এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। কারণ আমাদের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারে গিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু সেই কথার কোনো অগ্রগতি এখন পর্যন্ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
আসছে বর্ষা মৌসুমে এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকার আরেকটি ঝামেলায় পড়বে। গত বছর পাহাড় ধসের কথা দেশবাসী ভুলে যায়নি। এবার পাহাড়ে তৈরি করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি। চাপ বাড়ছে পাহাড়ের মাটিতে। টানা বৃষ্টিতে সেই পাহাড়ের মাটি ভিজে গলে পড়বে। তখনই দেখা দেবে বিপত্তি।
এ বিষয়ে আমাদের সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ যদি পাহাড় ধসের ঘটনা এবারও ঘটে, তা হলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তাদের উপযুক্ত বাসস্থান গড়ে না দেয়ার ব্যাপারে বিশ্বের অনেক দেশ বেশ বড় বড় কথা বলা শুরু করবে। বাংলাদেশের অনেক ব্যাপারে যেসব দেশের নাক উঁচু ভাব রয়েছে তারা ঢোল পেটাতে শুরু করবে। সেই সুযোগ যেন না পায় সেজন্য এখনই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাকে এখনই দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য আগাম কর্ম পরিকল্পনা হাতে নিয়ে রাখতে হবে। যাতে বিশ্ববাসী জানতে পারে, প্রাকৃতিক দুর্যোগেও রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকার ও বেসরকারি সংস্থা কোনো কার্পণ্য করেনি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)