করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারে বিশ্বজুড়ে খেলাধুলা বন্ধ ছিল প্রায় বছরখানেকের কাছাকাছি। বায়ো-বাবল তথা কঠোর জৈব সুরক্ষা বলয় মেনে দর্শকবিহীন ভাবে নানা অঙ্গনের খেলা ফিরতে শুরু করে মাঠে। কোভিড টিকা দেয়ার শর্তে মাঠে দর্শকদের প্রবেশাধিকারও মেলে একসময়। সবকিছু যখন ঠিকঠাক চলছিল, ফের চোখ রাঙানি মহামারী ভাইরাসের। বাতিল হয়ে যাচ্ছে অনেক আয়োজনই।
ডেল্টা ধরনে সব স্থবির হয়ে গিয়েছিল। নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তার ঘটছে দ্রুত। আক্রান্ত হচ্ছেন খেলোয়াড়রাও। স্থগিত হচ্ছে সিরিজ, ম্যাচ, টুর্নামেন্ট। ফুটবল, ক্রিকেট, সবধরনের খেলাই অনিশ্চয়তার দিকে আগাচ্ছে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
ইউরোপের নামজাদা ফুটবল লিগটিতে গত সপ্তাহের পরিসংখ্যান তুলে ধরছে ভয়াবহ চিত্রটা। খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ মিলিয়ে মোট ৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে সাতদিনে। যা লিগটিতে এপর্যন্ত সপ্তাহে সর্বোচ্চ করোনা শনাক্তের রেকর্ড। যার জেরে ইতিমধ্যেই স্থগিত করা হয়েছে মোট নয়টি ম্যাচ। স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আরও ৪ ম্যাচের। দলগুলো স্কোয়াড সাজাতে হিমশিম খাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্লাব আগামী একমাস লিগ স্থগিতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
প্রিমিয়ার লিগে করোনার ভয়াবহ শিকার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। মূল দলের কয়েকজন খেলোয়াড় আক্রান্ত হওয়ায় ৩দিন আগে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে লিগ ম্যাচে খেলতে পারেনি রেড ডেভিলরা। গতরাতে এসেছে আরও ভয়াবহ সংবাদ। খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফসহ আরও আধাডজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ব্রাইটন ম্যাচের আগে মূল দলের মাত্র ৭ জন খেলার পর্যায়ে ছিল। বিবৃতির মাধ্যমে ম্যাচও তাই স্থগিত করতে হয়েছে লিগ কর্তৃপক্ষ।
দলের সিংহভাগ খেলোয়াড় করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আসর চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের জায়ান্টদের জন্য। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দল কেন-সনদের টটেনহ্যাম। আক্রান্ত শনাক্তের তালিকায় সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সাউদাম্পটন ও নরউইচ সিটিও।
লা লিগা
স্প্যানিশ শীর্ষ লিগটির চলতি মৌসুমের শীর্ষ দলটাই করোনায় এলোমেলো হয়ে পড়েছে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা মদ্রিচ-ভিনিদের রিয়াল মাদ্রিদের মূল স্কোয়াডের ৬ জন এ মুহূর্তে পজিটিভ আসেন। আক্রান্ত শনাক্তদের নাম যখন লুকা মদ্রিচ, মার্কো আসেনসিও, রদ্রিগো, মার্সেলো, এন্ড্রি লুনি হয়, তখন দল সাজানোই মুশকিল। সহকারী কোচ ডেভিড আনচেলত্তিও ছাড়া পাননি সংক্রমণের থাবা থেকে।
রিয়াল এরপরও খেলা চালিয়ে যাবে কিনা সে ব্যাপারে ১৯ তারিখ টিম ম্যানেজমেন্টের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। স্প্যানিশ টেবিলের সাতে থাকা ভ্যালেন্সিয়ার দলেও করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সপ্তাহখানেক আগে পাকিস্তান সফরে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ছয় ক্রিকেটার এবং দুজন স্টাফসহ ৮ জন করোনায় আক্রান্ত। যাদের ৩ জন পাকিস্তানে আসার পরপরই পজিটিভ হন। তাদের আইলোসেশনে রেখে সিরিজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দুটি টি-টুয়েন্টি মাঠেও গড়ায়। শেষ টি-টুয়েন্টির আগে নতুন সংক্রমণের খবরে বিপাকে পড়ে উইন্ডিজ বোর্ড। উপায় না দেখে দুই বোর্ড আলোচনা করে ওয়ানডে সিরিজ স্থগিত করা হয়ে গেছে। ২০২২-এর জুনে হবে এই খেলা।
করোনার থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া অ্যাশেজের দিবারাত্রির ম্যাচে তিনি নামতে পারেননি। কোভিড প্রটোকলের ফাঁদে আটকে গেছেন। রেস্তোরাঁয় কোভিড পজিটিভ এক ব্যক্তির পাশের টেবিলে বসে ভাইয়ের সঙ্গে খাবার খেয়েছিলেন কামিন্স, এখন আছেন আইসোলেশনে।
বাংলাদেশ
নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে বাংলাদেশ দলও পড়েছে করোনার ঘেরাটোপে। দলের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ আক্রান্ত শনাক্ত বলে নিশ্চিত করেছেন বিসিবি অপারেশান্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান। জাতীয় দলের পাঁচজন স্টাফ এবং চার ক্রিকেটারের আইসোলেশনের সময় বাড়ানো হয়েছে।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের থাবায় আক্রান্ত জিম্বাবুয়ে থেকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলে আসা বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দুজন, আরেকজন ডেল্টায় সংক্রমিত। দুসপ্তাহ আইসোলেশনে থাকা মেয়েরা একদিন আগে বাড়ির পথ ধরতে পেরেছেন। আর ওই তিন ক্রিকেটার আছেন মেডিকেল দলের অধীনে। প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার টিকেট নিয়ে ফিরেছিল মেয়েরা। যে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব পর্যন্ত মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হয়েছে আইসিসিকে।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে চলা আসরের ক্রিকেটার পজিটিভ এসেছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে, ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক অনেক টুর্নামেন্টই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে ফের। চলতি খেলাগুলো ছাড়াও নতুন বছরে টেনিসে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ক্রিকেটে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ও যুব বিশ্বকাপের পরের আসরসহ অনেক খেলা ঘিরেই শঙ্কার মেঘ জমতে শুরু করেছে।