একটি মাত্র ক্লিক। যে কোন মুহূর্তের স্মৃতিকে ধরে রাখা যায় চিরকাল। ফ্রেমে বন্দী করে রাখা যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দৃশ্য। আর এই দৃশ্য ধরে রাখার কাজটি করা হয় ক্যামেরা দিয়ে। এই যন্ত্রটি দিয়ে যে কেবল মানুষের ছবিই তোলা যায়, তা কিন্তু নয়। ব্যবহার করা যায় বিভিন্ন কাজে। পৃথিবীর চলমান ইতিহাস সংরক্ষণেও এ যন্ত্রটির ভূমিকা ব্যাপক।
প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার ফটোগ্রাফার তাদের মেধা ও মনন দিয়ে চলমান বিভিন্ন ঘটনা, যুদ্ধবিগ্রহের ছবি তুলছেন আর তা সংরক্ষণ করে রাখছেন প্রযুক্তির এই জাদুর বাক্সে।
ক্যামেরার কল্যাণেই আজ আমরা দেশ-বিদেশের হাজারো ঘটনার ছবি মুহূর্তেই দেখতে পাচ্ছি। সহজেই জানতে পারছি পৃথিবীর যাবতীয় ঘটনা। ছবি আজ সাংবাদিকতার এক অপরিহার্য অংশ। আর এ কাজের প্রধান যন্ত্রই হচ্ছে ক্যামেরা। মানুষ নিজেকে ভালোবাসে। সে তার কৃতিত্ব, কর্ম এবং স্মরণীয় মুহূর্তগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে চায়। প্রয়োজন হয়ে পড়ে একটি আলোকযন্ত্রের। মানুষের চোখের সঙ্গে নাকি আছে মস্তিকের সমন্বয়, যা কাজ করে ক্যামেরার মতোই। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তাই ক্যামেরার গুরুত্ব অপরিসীম। সব বয়সী মানুষের কাছেই এই যন্ত্রটির রয়েছে আলাদা দুর্বলতা।
আজ ২৯ জুন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই দিনটি পালন করা হচ্ছে ক্যামেরা দিবস হিসেবে। ক্যামেরার গুরুত্ব এবং এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। ছবি তোলার প্রতি মানুষের আকর্ষণ কিন্তু নতুন নয়। প্রাচীন যুগেও মানুষ নিজের প্রতিকৃতি, প্রিয়জন, পছন্দের কোনো বস্তু বা দৃশ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য যান্ত্রিক ব্যবস্থা উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়েছেন। জানা যায়, প্রায় পাঁচশ’ বছর আগে চাইনিজ এবং গ্রিক দার্শনিকরা ক্যামেরার মতো যন্ত্রের মূলনীতিও বর্ণনা করেছিলেন।
ফরাসি বিজ্ঞানী জোসেফ নিপসে ১৮২৬ বা ১৮২৭ সালে প্রথম স্থির আলোকচিত্র গ্রহণ বা ছবি তোলার ক্যামেরা আবিস্কার করেন। তিনি একটি কাঠের বাক্সের ভেতর এটি তৈরি করেন, যা দেখতে ছিল একটি ছোট্ট ঘরের মতো এবং দু’তিনজন মানুষ তার মধ্যে ঢুকে যেতে পারত। তবে অনেকের মতে, এরও দেড়শ’ বছর আগে ১৬৮৫ সালে জোহান জ্যান ব্যবহার উপযোগী ছোট বহনযোগ্য ক্যামেরা তৈরি করেন। আমেরিকার বিজ্ঞানী জর্জ ইস্টম্যান ১৮৮৮ সালে রোলফিল ক্যামেরা উদ্ভাবন করে ‘কোডাক’ নামে বাজারে ছাড়েন।
বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ডিজিটাল ক্যামেরায় ফিল্মের পরিবর্তে ব্যবহার শুরু হয়েছে ডিজিটাল মেমোরি কার্ড এবং এতে ছবি সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে। ক্যামেরা যন্ত্রটি একেবারে ছোট হলেও এর কাজের পরিধি ব্যাপক। খেলার মাঠ, সভা-সমিতি, চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, ভিডিও কনফারেন্সসহ বহু কাজে ব্যবহার হচ্ছে নানা ক্যামেরা। এমনকি মঙ্গলগ্রহেও রোবটের সঙ্গে সংযুক্ত ক্যামেরার মাধ্যমে আমরা পাচ্ছি মঙ্গলগ্রহের নানা ছবি।
তবে ক্যামেরার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বিনোদন ও সাংবাদিকতায়। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্বের নানা দিবসের মতো এ দিনটি গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও বিভিন্ন দেশের কিছু সংগঠন সাড়ম্বরে করে পালন এই ‘ক্যামেরা ডে’। এ উপলক্ষে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠানমালারও আয়োজন করা হয়ে থাকে।
এর মধ্যে রয়েছে পুরানো ক্যামেরা ও দুর্লভ ছবি প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, প্রবীণ চিত্রকরদের স্মৃতিচারণ ইত্যাদি। ‘ক্যামেরা ডে’ তে আলোকচিত্র শিল্পীরা নিজেদের পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ পান। আলোকচিত্রের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে প্রকৃত মননশীলতা সৃষ্টি এবং মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার জন্য দিনটি গুরুত্ব বহন করে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)