চলতি বছর বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে জাপানের প্রধান নগরী ওসাকা, সেইসঙ্গে হংকং এবং সিঙ্গাপুরের নাম। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের আক্রমণে বিশ্বের এই ব্যয়বহুল শহরগুলো অনেকটাই জৌলুশ হারাচ্ছে। কারণ এসব শহরগুলোর মূল আয় ছিল তাদের পর্যটন থেকে, কিন্তু করোনার কারণে তা হ্রাস পাচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন শহরের জীবনযাত্রার মূল্যমান তুলনা করে দ্য ইকোনোমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রতিবছর এই জরিপ পরিচালনা করে থাকে। সর্বশেষ জরিপটি তৈরি করা হয়েছে গত বছরের নভেম্বর মাসে। তখনও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়নি। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে আখ্যা দেয়। ফলে ব্যয়বহুল শহর হিসেবে পরের বছর জরিপটি ভিন্ন হবে।
দ্য ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইইইউ) প্রধান অর্থনীতিবিদ সাইমন ব্যাপটিস্ট বিবিসিকে বলেন: যে সমস্ত শহর পর্যটনের উপর নির্ভর করে থাকে, করোনার প্রভাবে জীবনযাত্রার মান অনেকটা সংকুচিত হয়েছে। ফলে আগামীতে ব্যয়বহুল শহর হিসেবে সিঙ্গাপুর এবং হংকং সম্ভবত তাদের শীর্ষস্থানটি ধরে রাখতে পারবে না। সেখানে অন্য কোনো ব্যয়বহুল শহর যোগ হবে।
বিশ্ব অর্থনীতির জন্য করোনা ভাইরাস ইতোমধ্যে মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাইরাসটি চীন ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কাও করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা জানিয়েছেন, চীনের করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এতে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং পর্যটন খাতেও প্রভাব পড়ছে।
এছাড়াও তাৎক্ষণিকভাবে বড় আকারে আক্রান্ত হয়েছে পর্যটন, হোটেল, মোটেল ও ট্রাভেল ব্যবসা। কিন্তু অর্থনীতির সব শাখাতেই আঘাত ব্যাপক। পোশাক খাত চীননির্ভর, সেই চীন থেকে মূলধন যন্ত্র ও কাঁচামাল আসা প্রায় বন্ধ। ইউরোপ পোশাকের অন্যতম বাজার, সেখানে এখন লকডাউন।
গত তিন–চার মাসে দেশটির অটোমোবাইল শিল্পে ব্যাপক ধস নেমেছে। গাড়ি বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। চীন টেলিভিশন প্যানেল, এলইডি, চিপ, রেফ্রিজারেটরের কমপ্রেসার, এয়ারকন্ডিশন ইত্যাদির বৈশ্বিক যোগানদাতা। হুন্দাই চীন থেকে প্রাপ্ত কাঁচামালের অভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের সকল কারখানা বন্ধ রেখেছে। চীনা কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান সূচক গত ফেব্রুয়ারিতে ৩৫.৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ সূচক ৫০-এর বেশি না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হবে না।
বিশ্ব ট্যুরিজম ইকোনোমিক্স ধারণা করছে, ২০২০ সালে ভ্রমণ হ্রাস পাবে ৯.১ শতাংশ, যা বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সবোর্চ্চ।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে বিধিনিষেধ, আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাতিল, ক্রিকেট প্রিমিয়ার লীগ ও ফুটবল প্রিমিয়ার লীগ বাতিল করা হয়েছে। যার ফলে হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে রুম বুকিং বাতিল হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এমজিএম রিসোর্টস ইন্টারন্যাশনালের শেয়ার ১০ শতাংশ, মেরিয়ট ইন্টারন্যাশনাল ৮.৯ শতাংশ এবং এক্সপিডিয়ার ১০.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের সূত্র অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের কারণে চীনে বিমানযাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৮৪.৫ শতাংশ। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইজিজেট এবং নরওয়েজিয়ান এয়ার, কোরিয়ান এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট বিভিন্ন দেশে বাতিল ও সংকুচিত করেছে বলে ২০২০ সালে আকাশপথে ভ্রমণ ২৫ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।