বঙ্গবন্ধু সেতুকে টপকে বিশ্বে দীর্ঘতম সেতু হিসেবে এগারো তম স্থান দখল করে নিয়েছে পদ্মা সেতু।পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন এবং মূল সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার প্রথমে জাজিরার নাওডোবা পয়েন্টে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। পরে মাওয়া পয়েন্টে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে সেতুর মূল কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালের মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। নিজস্ব অর্থায়নে এটি এ পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
সেতুটির জন্য খরচ হবে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এ সেতু নির্মিত হলে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণাঞ্চল। এই সেতুতে ট্রেনও চলবে। এশিয়ান হাইওয়ের পথ হিসেবেও সেতুটি ব্যবহৃত হবে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ ৫টি ভাগে বিভক্ত। এরমধ্যে রয়েছে; মূল সেতু, নদী শাসন, দু’টি লিংক রোড এবং অবকাঠামো (সার্ভিস এলাকা) নির্মাণ। এর মধ্যে মূল নির্মাণ কাজ পাইলিং ও নদীশাসন।
পদ্মা সেতুর অাগে অবস্থান থাকা বিশ্বের প্রথম দশটি সেতু-
ডেনইয়াং কুনশান গ্র্যান্ড ব্রীজ: বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুর তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে চীনের ডেনইয়াং কুনশান গ্রান্ড ব্রীজ। চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সাংহাই ও নানজিং এলাকায় দীর্ঘতম সেতুটি অবস্থিত।
চীনের ইয়াংজী নদীর উপরে ব্রীজটি স্থাপিত। সেতুর সঙ্গে রয়েছে রেল লাইনও। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৬৪ দশমিক আট কিলোমিটার। ২০১০ সালে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। সেতুটিতে খরচ হয় ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
তিয়াংজিন গ্র্যান্ড ব্রীজ: বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু তিয়াংজিন গ্র্যান্ড ব্রীজও চীনে অবস্থিত। সেতুটি লাঙফাং ও কুইংজিয়ান এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১১৩ দশমিক সাত কিলোমিটার। রেল সংযোগ ও রয়েছে সেতুটির সঙ্গে।
২০০৬ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় শেষ হয় ২০১০ সালে। জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০১১ সালে। পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু হিসেবে ওই বছরই গ্রীনিজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তোলে সেতুটি।
উয়েন্যান উয়েহ গ্র্যান্ড ব্রীজ: বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম সেতুটিও চীনে। উয়েহ নদীর ওপরে নির্মিত হয়েছে এই সেতুটি। এর দৈর্ঘ্য ৭৯ দশমিক ৭৩২ কিলোমিটার।
২০০৮ সালে সেতুটি নির্মিত হয়। ওই সময় পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতু ছিল উয়েন্যান উয়েহ গ্র্যান্ড ব্রীজ। ২০১০ সালে সেতুটির সঙ্গে দ্রুত গতির বেইজিং সাংহাই রেল লাইন যুক্ত হয়।
বেঙ্গনা এক্সপ্রেস ওয়ে ব্রীজ: বিশ্বের চতুর্থ দীর্ঘতম সেতু বেঙ্গনা এক্সপ্রেস থাইল্যান্ডে অবস্থিত। এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার।
ছয় লেনের এই সেতুটির সঙ্গে কোন রেল সংযুক্তি নেই।
বেইজিং গ্র্যান্ড ব্রীজ: বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম ব্রীজটি চীনে অবস্থিত। ব্রীজটির দৈর্ঘ্য ৪৮ দশমিক ১৫৩ কিলোমিটার। বেইজিং সাংহাইয়ের দ্রুত গতির রেল লাইন এই ব্রীজটির সঙ্গে সংযুক্ত।
২০১০ সালে সেতুটির নির্মান কাজ শেষ হয়। ২০১১ সালে জণসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
লেক পন্টচার্ট্রেন কসওয়ে ব্রীজ: বিশ্বের ষষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু লেক পন্টচার্ট্রেন কসওয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানার সেতুটি অবস্থিত। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৮ দশমিক ৪৪২ কিলোমিটার।ব্রীজটি চার লেনের তৈরী।
১৯৫৬ সালে ৩০ আগস্ট সেতুটির দক্ষিণসাইড খুলে দেওয়া হয়। ১৯৬৯ সালের ১০ মে উত্তরসাইড খুলে দেওয়া হয়।
মাঞ্চ সুয়াম্প ব্রীজ: বিশ্বের সপ্তম দীর্ঘতম সেতু মাঞ্চ সুয়াম্প। এই সেতুটিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানায় অবস্থিত।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৬ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার। ১৯৬৯ সালে সেতুটিতে যান চলাচল শুরু করে।
ইয়াংচুন ব্রীজ: বিশ্বের অষ্টম দীর্ঘতম সেতু ইয়াংচুন ব্রীজ চীনে অবস্থিত। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৫ দশমিক ৮১২ কিলোমিটার।
বেইজিং-তিয়াংজিনের ইন্টারসিটি রেল যোগাযোগ এই সেতুর মাধ্যমে হয়।
হাংজু বে ব্রীজ: বিশ্বের নবম দীর্ঘতম সেতু হাংজু বে চীনে অবস্থিত। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৫ দশমিক ৬৭৩ কিলোমিটার।
সেতুর নির্মান কাজ শুরু করা হয় ২০০৩ সালের ৮ জুন, কাজ শেষ হয় ২০০৭ সালের ১৪ জুন।
সেতুটি খুলে দেওয়া হয় ২০০৮ সালের পহেলা মে।
রানইয়াং ইয়াংজে রিভার ব্রীজ: বিশ্বের দশম দীর্ঘতম সেতুর নাম রানইয়াং ইয়াংজে। সেতুটি চীনে অবস্থিত। সেতুর দৈর্ঘ্য ৩৫ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার।
২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল সেতুটি খুলে দেওয়া হয়।