ক্যারিয়ারের শুরুতে ব্যাটিং করতেন তিন নম্বরে। এই পজিশন ধরে রাখা অবস্থায় ব্যাটে-বলে জ্বলে ২০১৫ সালে পেয়েছিলেন টি-টুয়েন্টিতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের তকমা। এখন পর্যন্ত ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড়ও তার। অথচ ব্যাট হাতে সালমার দেখা মেলে কালেভদ্রে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এখন শুধুই বোলার!
সবশেষ ১১ ম্যাচে সালমা ব্যাট হাতে নেমেছেন মাত্র দু’বার। কুয়ালালামপুরে এশিয়া কাপের ফাইনালে ব্যাট হাতে সবশেষ নামা। ৯ নম্বরে নামায় কোনো বল মোকাবেলা করতে হয়নি, ছিলেন ননস্ট্রাই প্রান্তে। শেষ বলে জাহানারা প্রয়োজনীয় ২ রান তুলে নিলে এশিয়া সেরার মুকুট মাথায় ওঠে বাংলাদেশের মেয়েদের।
প্রথম ম্যাচে সালমা নেমেছেন ৭ নম্বরে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬ রান করে আউট হন টিম টাইগ্রেস অধিনায়ক। মাঝের চার ম্যাচে নামার সুযোগ থাকলেও নামানো হয়নি সালমাকে। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশের পড়েছিল ৪ উইকেট। ওই ম্যাচে পেসার জাহানারা আলম ব্যাট করেছেন ৬ নম্বরে। পরের তিন ম্যাচ যথাক্রমে নয়, সাত ও সাত উইকেটে জেতায় ব্যাট হাতে নামা হয়নি টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক সালমার।
এবার আয়ারল্যান্ড সফরে গিয়ে ব্যাটারের দায়িত্ব থেকে পুরোপুরিই সরে যেতে হয়েছে সালমাকে। শুক্রবার আইরিশ মেয়েদের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টুয়েন্টি ম্যাচে ১২৪ রান তাড়া করে ৪ উইকেটে জয়ের ম্যাচে সালমা ব্যাটিংয়ে নামেননি। আট নম্বরে নামেন জাহানারা আলম। আগের ম্যাচে ১৩৪ রান তাড়া করে ৪ উইকেটে জয়ের ম্যাচেও আট নম্বরে নামেন জাহানারা। প্রথম আট ব্যাটারের মধ্যে সালমার না থাকা বিস্ময়কর ঘটনাই।
এশিয়া কাপের আগে সাউথ আফ্রিকা সফরে তৃতীয় টি-টুয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের উইকেট পড়েছিল ৬টি। আট নম্বরে নেমেছিলেন পেসার পান্না ঘোষ। সালমা ছিলেন আটেরও পরে। প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচে উইকেট পড়েছিল ৫টি করে। দুই ম্যাচেই আট নম্বরে নামেন পান্না।
অথচ টি-টুয়েন্টিতে সালমার গড় ওয়ানডের চেয়ে ভাল। ওয়ানডেতে তার গড় ১৩.২৫, আর টি-টুয়েন্টিতে ১৭.৪৩। ৪২ ম্যাচে করেছেন ৪৬৮ রান। যা রান সংগ্রাহকের তালিকায় বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এক নম্বরে থাকা রুমানা আহমেদ ৪৩ ম্যাচে করেছেন ৫৬৫ রান, গড় ১৪.৪৮। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফারজানা হক ৩৭ ম্যাচ খেলে করেছেন ৫৫৪ রান, গড় ১৬.৭৮।
টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে বড় বিবেচ্য বিষয় স্ট্রাইকরেট। সেখানেও টপঅর্ডারে খেলা অনেক ব্যাটারের চেয়ে এগিয়ে সালমা। এ ডানহাতির স্ট্রাইকরেট ৮৫.৪০। রুমানার ৮১.০৬, ফারজানার ৭৩.৯৬।
পরিসংখ্যান উজ্জ্বল থাকার পরও সালমা কেন লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নারী দলের দেখভালের দায়িত্বে থাকা নাজমুল আবেদিন ফাহিম পারফরম্যান্সের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে বললেন, কেউ ভাল করলে তাকে ব্যাটিংয়ে কেনো সুযোগ দেয়া হবে না?
হাতে চোট পাওয়ায় ২০১৬ সালে আয়ারল্যান্ড সফরে যেতে পারেননি সালমা। ওই সিরিজে দুটি ওয়ানডে ও দুটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ মিস করেন। সেই চার ম্যাচ ছাড়া লাল-সবুজ জার্সিতে খেলেছেন দেশের পক্ষে বাকি সব ম্যাচ।
কেমন করছেন ‘বোলার’ সালমা?
২০১৬ সালের আগস্টে হাতের ইনজুরির কারণে দলের বাইরে চলে যান সালমা। ফেরার পর থেকেই ব্যাট হাতে কম দেখা যাচ্ছে তাকে। বোলিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে ব্যাটিংসত্ত্বাকে গুটিয়ে রেখেছেন এমনটিও নয়। সবশেষ ১১ ম্যাচে এ অফস্পিনার উইকেট নিয়েছেন ৯টি। টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৪২ ম্যাচে সালমা নিয়েছেন ৩৭ উইকেট। বোলিংয়ে মনোযোগ দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন এমনটিও নয়।
সালমাকে ছোঁয়ার চেষ্টায় রুমানা
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মুকুট হারিয়েছেন আগেই। শুধু বোলার হিসেবে খেলায় ক্রমেই নামছেন নিচের দিকে। অলরাউন্ডিংয়ে সালমা খাতুনের অবস্থান এখন ১১ নম্বরে। এক নম্বরে আছেন উইন্ডিজ অলরাউন্ডার দেন্দ্রা ডটিন। বাংলাদেশি আরেক অলরাউন্ডার রুমানা ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শিতা দেখিয়ে ছুটে চলেছেন সামনের দিকে। পারফরম্যান্সগুনে উঠে এসেছেন টি-টুয়েন্টির অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ের ১২ নম্বরে।
অলরাউন্ডার হিসেবে রুমানার এটি সেরা র্যাঙ্কিং। সালমার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন রুমানা। নিজের ব্যাটার পরিচয় থেকে নিজেকে দূরে রাখলে অবস্থান ক্রমেই নিচের সারিতে নামবে সালমার, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ম্যাচ বাড়ছে নারী দলের ক্রিকেটারদের। সুযোগ কাজে লাগিয়ে বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন তার সময়কার পেসার জাহানারা আলমও। দলে নবাগত শামিমা, নিগার, ফাহিমারা ব্যাট হাতে রাখছেন দারুণ অবদান। অথচ সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সালমাকে চেনারূপে পাচ্ছে না বাংলাদেশ।