‘বিশ্বসুন্দরী লিখতে বসে টানা ৭ দিন পৃথিবীর আলো দেখিনি’
‘আমার গল্প দর্শকের মন ছুঁয়ে গেলে এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর হতে পারেনা’- ‘বিশ্বসুন্দরী’ নিয়ে আশাবাদী ছবির কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ রচয়িতা রুম্মান রশীদ খান
শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) দেশব্যাপী মুক্তি পেতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ‘বিশ্বসুন্দরী’। চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত, পরীমনি-সিয়াম অভিনীত ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবির কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ লিখেছেন রুম্মান রশীদ খান। পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী সিরিজের ২টি ছবির চিত্রনাট্যও তার করা। তৃতীয় ছবি ‘বিশ্বসুন্দরী’ মুক্তির ঠিক আগের দিন চ্যানেল আই অনলাইনের মুখোমুখি হন তিনি:
‘বিশ্বসুন্দরী’ মুক্তি পাচ্ছে ১১ ডিসেম্বর। কী মনে হয়, আপনার তৃতীয় ছবি দর্শক পছন্দ করবেন?
দর্শকের স্বাদ বোঝার ক্ষমতা পৃথিবীর কোনো নির্মাতা বা চিত্রনাট্যকারেরই হয়নি। তবে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে বললে, সর্বোচ্চ সততা দিয়ে আমি এ ছবির স্ক্রিপ্ট লিখেছি। দীর্ঘ ৩ মাস পরিচালক ও টিমের সাথে আলোচনার পর স্ক্রিপ্ট লিখতে বসি। টানা ৭ দিন পৃথিবীর আলো দেখিনি। আমার কর্মস্থলে যাইনি। ফোন অন করিনি। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকেও সাময়িক বিদায় নিয়েছিলাম। শুধু তাই নয়, আমি যাতে নির্বিঘ্নে লিখতে পারি, সেজন্য আমার স্ত্রীও আমাকে স্পেস দিয়ে মায়ের বাসায় চলে গিয়েছিল। কাকতালীয় শোনালেও সত্যি, ১১ সংখ্যাটি আমার জন্য বরাবরই সৌভাগ্যের। ১১ জুলাই আমার জন্মদিন, ১১ মে আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল দৈনিক প্রথম আলোতে, ১১ মে মাছরাঙা টেলিভিশনেও আমি যোগ দেই, ২০১১ সালে আমার বিয়ে হয়। জানিনা এবারের ১১ আমার জন্য কী ফল বয়ে নিয়ে আসবে। তবে আমি আশাবাদী।
চয়নিকা চৌধুরী খ্যাতিমান নাট্য নির্মাতা। প্রথমবার তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেন। আপনার লেখা স্ক্রিপ্ট পর্দায় কতটুকু ফুটিয়ে তুলতে পারবেন বলে আপনি মনে করেন?
ছোট পর্দায় তো চয়নিকা চৌধুরীর সাথে আমার বেশ কিছু জনপ্রিয় কাজ রয়েছে। চলচ্চিত্রেও নিশ্চয়ই তিনি ভালো করবেন। তবে আমি এখনো যেহেতু পূর্ণাঙ্গ ছবিটি দেখিনি, তাই মন্তব্য করতে পারছি না। যদিও সেন্সর বোর্ডের বেশ ক’জন সম্মানিত সদস্য ছবিটি দেখার পর আমার ফোন নম্বর যোগাড় করে ফোন দিয়েছেন। নাম ধরেই বলতে পারি, প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু ভাই ভবিষ্যদ্বানী করেছেন, এ ছবির বেশ ক’জন জাতীয় পুরস্কার পাবেন! এর মধ্যে তিনি আমার নামও উল্লেখ করেছেন। যদিও আমি পুরস্কারের আশা করছি না। সে বয়স বা যোগ্যতা আমার হয়নি। আমি শুধু চাই, দর্শক যাতে সিনেমা হলে থাকা পুরোটা সময় গল্পে বুঁদ হয়ে থাকেন। এমনিতেই অস্থির সময়, সিনেমা হলের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় চলে আসছে, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ভয়াবহ আকারে নিম্নমুখী। এমন সময় আমার গল্প দর্শকের মন ছুঁয়ে গেলে এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর হতে পারেনা।
সান মিউজিক এন্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেডের ছবি ‘বিশ্বসুন্দরী’। প্রযোজক হিসেবে তাদের কেমন দেখেছেন?
এমন প্রযোজক যে কোনো পরিচালক বা টিমের জন্যই আশীর্বাদ। এত বড় বাজেটের একটি ছবির প্রযোজক হবার পরও পরিচালক যতটা স্বাধীনভাবে কাজ করেছেন, তা অতুলনীয়। শুধু চয়নিকা চৌধুরী নন, মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘হাওয়া’ ছবির পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনও আমার সাথে একমত হবেন। বলতে দ্বিধা নেই, ‘বিশ্বসুন্দরী’ চলচ্চিত্রের নির্বাহী প্রযোজক অজয় কুমার কুন্ডুর কারণেই এ ছবিটির জন্ম। যদিও প্রযোজকের অন্তর্ভুক্তির আগেই পরিচালক কাহিনী, শিল্পী তালিকা নির্বাচন, ছবির নাম নিবন্ধন সহ ‘বিশ্বসুন্দরী’ নামটি গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তবে ৩০ মার্চ ২০১৯ প্রযোজক চূড়ান্তভাবে সম্মতি দেবার পর থেকে আজ অব্দি টিমের সবাইকে যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন, তা এ যুগে বিরল। আমি নিশ্চিত, ‘বিশ্বসুন্দরী’ সফল হলে সান মিউজিক এন্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেড সামনে নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রযোজনা করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং নির্বাহী প্রযোজক অজয় দা’র কাছে চিরকৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী, এ ছবির প্রত্যেক শিল্পী- কলাকুশলীর কাছে; স্পন্সর, পরিবেশক, হল মালিকদের কাছে।
আপনার লেখা প্রথম চলচ্চিত্র ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ ২০১৩ সালের সবচাইতে ব্যবসাসফল ছবি ছিল। জাতীয় পুরস্কার সহ বেশ কটি সম্মানজনক পুরস্কারও পেয়েছিল। সে ছবিতে শাকিব খান-জয়া আহসানের মত নতুন জুটিকে দর্শক পছন্দ করেন। ‘বিশ্বসুন্দরী’র নতুন জুটি সিয়াম-পরীমনিকে দর্শক কতটা পছন্দ করবে বলে আপনি মনে করেন?
‘তুই কি আমার হবি রে’ গানটির তুমুল জনপ্রিয়তা কিন্তু ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে, জুটি হিসেবে সিয়াম-পরীমনি কতটা সফল হতে পারে। ‘বিশ্বসুন্দরী’র গল্প শোনাবার পর পরিচালকের কাছে আমার প্রথম পরামর্শ ছিল, পরীমনি-সিয়ামকে লাগবে। এই গল্পে এমন এক জুটি দরকার ছিল, যাদের রসায়ন এর আগে দর্শক দেখেনি। ‘শোভা’ চরিত্রে এমন একজন দরকার ছিল, যিনি নায়িকার গ্ল্যামার ও অভিনেত্রীর অভিনয় সমান্তরালে ধারণ করতে পারবেন। পরীমনির ভেতর সেই স্ফূরণ আমি দেখেছিলাম। আর ‘স্বাধীন’ চরিত্রে গল্প এমন এক তারুণ্যদীপ্ত নায়ককে চেয়েছিল, যার ভেতর নায়কোচিত ‘এক্স ফ্যক্টর’ তো থাকবেই। পাশাপাশি তাকে দেখে যেন পাশের বাড়ির ছেলেও মনে হয়। এ ধরনের চরিত্রে সিয়ামের বিকল্প এ মুহূর্তে আর কে আছে? পরীমনি-সিয়াম দুজনই এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য নিজের সেরাটুকু দিয়েছেন। আমরা দুজনের কাছেই কৃতজ্ঞ।
গল্পকারের কাছেই জানতে চাই এ ছবির নাম ‘বিশ্বসুন্দরী’ কেন?
কারণ আমার গল্পের মূল চরিত্র ‘সুন্দর’। সৌন্দর্য আপেক্ষিক বিষয়, একেকজনের কাছে একেকরকম। তবে বাহ্যিক সৌন্দর্য চিরস্থায়ী নয়, ভেতরের সৌন্দর্যই বেঁচে থাকে অনন্তকাল। ‘বিশ্বসুন্দরী’ মানব প্রেমের গল্প। মানুষকে ভালোবাসার গল্প। দেশকে ভালোবাসার গল্প। অনেকেই এ ছবির নাম শুনে ভেবেছিলেন, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা নিয়ে ছবির গল্প। আবার কেউ ভেবেছিলেন নায়িকার সৌন্দর্যকে উপমা হিসেবে ব্যবহার করে ‘বিশ্বসুন্দরী’ নামকরণ করা হয়েছে। তবে আমাদের ছবির নাম ‘বিশ্বসুন্দরী’ কেন তা দেখতে ছবির শেষ দৃশ্যের শেষ সংলাপ পর্যন্ত দেখতে হবে। দর্শকের প্রতি অনুরোধ, আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে আসুন। সিনেমা ভালো লাগলে ভালো বলবেন, খারাপ হলে ভুল ধরিয়ে দিবেন। তারপরও প্রেক্ষাগৃহে আসুন। ‘বিশ্বসুন্দরী’ সহ নতুন ছবি ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ দেখুন। পাশাপাশি অন্যান্য বাংলা চলচ্চিত্রও দেখুন। মনে রাখতে হবে, সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব শুধু সরকারেরই নয়, ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্ট সকলের, এমনকি দর্শকেরও।