ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেল হওয়া উচিত কি উচিত নয়- এর পক্ষে বিপক্ষে অনেক লেখাই দেখছি কদিন ধরে। পক্ষের লেখাই বেশি এবং সেগুলোতে যুক্তির চেয়ে বিপক্ষে যারা আছেন তাদের প্রতি, তাদের ধ্যান-ধারনার প্রতি আক্রমনটাই বেশি লক্ষ্যনীয়।
মেট্রোরেলের পক্ষে তারা উন্নত বিশ্বের উদাহরণ টেনেছেন। কোন কোন উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেট্রোরেল চালু আছে তার লিংকও দিয়েছেন। সব ঠিক আছে, কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো সেই সব দেশ আর আমাদের দেশের অবস্থা কি এক? সেইসব দেশে আইন ব্যবস্থা, আইনের প্রয়োগ, আইনের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাবোধ, আইন ভঙ্গকারীরকে কঠোর বিচারের সম্মুখীন করা- ব্যাপারগুলো সেখানে যেমন হয় আমাদের কি তেমন হয়? তাদের মানসিকতা আর আমাদের মানসিকতা কি এক? আমরা কি আইন মেনে চলি?
একটা ক্ষেত্রে উদাহরণ দিয়ে দেখান যেখানে আমরা ঠিকঠাকমত নিয়ম মেনে কাজটা করি! তারা সব ক্ষেত্রেই সঠিক নিয়মে কাজ করে। তাদের সাথে আমাদের তুলনা করলে তো চলবে না। শিক্ষার হারের পার্থক্য, দারিদ্রতা সহ আরো কিছু কারন তাদেরকে আমাদের থেকে আলাদা করেছে। সেখানে দেখেন কেউ কোন শব্দ করছে না, কোন চিৎকার, চেঁচামেচি, কাউকাউ নেই। সুশৃঙ্খলভাবে সবাই উঠছে, নামছে। আমাদের এখানেও কি তাই হবে?
বরং গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি বিরাট হাটবাজার বসবে, বিরাট একটা আড্ডাস্থল হবে। এগুলো দেখার বা নিয়ন্ত্রণ করার কেউ থাকবে না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার জায়গা দেখতে দেখতে মাছের বাজারে পরিণত হবে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে। শিক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা অতি প্রয়োজন। আগে আমাদের এখানে উন্নত দেশের মত পরিবেশ নিশ্চিত করুন, মানসিকতায় আমরা তাদের সমান হই, তারপর এই সব উপমা টানুন! তখন আর অস্বাভাবিক লাগবে না।
আবার অনেকে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে মিটিং, মিছিল হয় না? তাতে ডিস্টার্ব হয়না? মিছিল, মিটিং হয়, অবশ্যই ডিস্টার্বও হয় তাতে পড়াশুনার অনেক। তাহলে আপনার মতে ডিস্টার্বেন্সগুলো কমিয়ে বা বন্ধ করার চেষ্টা না করে বরং বাড়িয়ে দেয়া উচিত! মেট্রোরেলের রুট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে করলে ডিস্টার্বেন্স অনেকগুন বাড়বে যে তাতে কোন সন্দেহ নাই। তার উপর শুরু হবে রাজনৈতিক দখলদারিত্ব ও তা বজায় রাখার লড়াই — নতুন উপদ্রব!
বিশ্ববিদ্যালয়ে তো পড়াশুনা হয়ই না, যারা পড়াশুনা করেন তারা লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়েন। কাজেই মেট্রোরেলের বিপক্ষে যাওয়ার কোন যুক্তিই নেই– এমনও শুনছি কারো কারো মুখে! মানছি লাইব্রেরীতে যেতে হয়। বই পড়তে বা ভাল রেজাল্ট করতে যেতেই হবে। তাই বলে ক্লাসে পড়াশুনা হয়না তাও ঠিক নয় একদম। পড়াশুনার উপযোগী পরিবেশ বজায় রাখতে পারলে আরো ভালভাবে হবে।
অনেকে বলছেন যে, আন্দোলনকারীরা মেট্রোরেল না চেয়ে দেশকে যোগাযোগের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শতবছর পেছনে নিয়ে যাচ্ছে ! দেশের উন্নয়নের জোয়ার সহ্য করতে পারছে না আন্দোলনকারীরা, দেশকে পেছনে টেনে নিতে চাচ্ছে, হেন তেন…..!
কেউ কেউ উপহাস করছেন, কেউ রেগে রেগে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন…. । কিন্তু আপনারা কোথায় দেখলেন যে এরা মেট্রোরেলের বিপক্ষে, দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়ার বিপক্ষে কাজ করছে?
ছাত্র-ছাত্রীদের একটা অংশ শুধু এইতো চাচ্ছে যে, মেট্রোরেলের রুটটা শুধু পরিবর্তন করে দেয়া হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বুক চিড়ে না গিয়ে অন্য দিক দিয়ে যাক। একটা ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও পড়াশুনার পরিবেশ ব্যাহত না হোক। যৌক্তিকতার বিচারে এই আন্দোলন একেবারেই সঠিক। সরকারের উচিত সময় নিয়ে ভাল করে বিচার বিশ্লেষণ করে সঠিক একটা সিদ্ধান্ত নেয়া।
মেট্রোরেল চালু হলে আমাদের দেশের যোগাযোগ উন্নয়নে তথা দেশের সার্বিক উন্নয়ন চিত্রে অবশ্যই একটা নতুন মাত্রা যোগ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে না নিয়ে, রুট চেইঞ্জ করে অন্য দিক দিয়ে মেট্রোরেল চালু করলেও যোগাযোগ উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগের কৃতিত্ব এই সরকার ঠিকই পাবেন, দিতেই হবে। পরিশেষে বলতে চাই, স্বপ্নের মেট্রোরেল খুব তাড়াতাড়ি চালু হোক তা চাই, কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকতে চাই অগ্রগতির নতুন ধাপের সাথে, তবে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ব্যাহত হোক তা কিছুতেই চাইতে পারিনা।
রাজনৈতিক মতাদর্শের পক্ষেই বলতে হবে ভুল বা সঠিক যাই হোক না কেন তেমনভাবে না ভেবে দেশের জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যেটা সঠিক হবে তার পক্ষে মতামত দিন। আমি বলছিনা যে আমার সিদ্ধান্তই সঠিক। আমি বলছি যেহেতু এটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে আরো যাচাই বাছাই করে, বিচার বিশ্লেষন করে সঠিক সিদ্ধান্তে আসুন। একটা ভুল সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হয়ে গেলে পরে পস্তানোতে তো কোন লাভ হবে না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)