একই মঞ্চ। চোখে জল দুই প্রতিপক্ষেরই। কারো আনন্দঅশ্রু, কারো বিষাদের। বৃষ্টি ঝরে একাকার করে দিলো সব! যেনো বলতে চাইল, এই জয়-পরাজয় কেবল হিসাব-নিকাশ মাত্র! যে রোমাঞ্চের পসরা উপহার দিয়েছ তোমরা, জয়ী আসলে সকলেই।
এমন করে ভাবলেও ভাবা যায়। কিন্তু দিন শেষে কেবল এক দলকেই বলা হবে চ্যাম্পিয়ন, বাস্তবতা এটাই। লুঝনিকিতে ৪-২ গোলের মহারণের পর শেষবাঁশি বাজলে সেই বাস্তবতা বুঝছেন ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়-কোচরা। সেটার নিরিখেই বলছেন মনগহীনের কথাগুলো-
ফ্রান্সের যে যা বললেন-
দিদিয়ের দেশম (কোচ)
‘এটা সত্যিই সুন্দর। এটা বিস্ময়কর। আমরা দুর্দান্ত ম্যাচ খেলিনি ঠিকই, কিন্তু আমরা আমাদের শক্তিশালী মানসিক দিকটা দেখিয়ে দিয়েছি।’
‘আমরা চার গোল করেছি। এখানেই আমাদের যোগ্যতা। আমার দল নিয়ে আমি দারুণ খুশি। অনেকটা দূর হাঁটতে হয়েছে আমাদের, যা খুব একটা সহজ ছিল না। তবে সবাইকে ধন্যবাদ। আগামী চার বছর ধরে এই দলটাই বিশ্বের সেরা হয়ে থাকবে।’
অ্যান্টনিও গ্রিজম্যান (ফরোয়ার্ড)
‘আমি নিজেও জানি না আমি এখন কোথায়। এটা খুবই অসাধারণ, দারুণ খুশির। ফাইনালটা খুব কঠিন একটা ম্যাচ ছিল। ক্রোয়েশিয়া দারুণ একটা ম্যাচ খেলেছে। আমাদের শুরুটা ভয়ানক ছিল। আমরা জানতাম এটা বিশ্বকাপের ফাইনাল। এরপর আমরা গুছিয়ে নিলাম, কাউন্টার অ্যাটাক করলাম, পার্থক্য গড়ে দিলাম। শিরোপা উঁচিয়ে ধরে আমরা এখন সামনের দিকে এগোবো।’
অলিভিয়ে জিরুদ (ফরোয়ার্ড)
‘আমরা ড্রেসিংরুমে সবাই মিলে শিরোপা উদযাপন করেছি। এমনকি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ক্রোয়েশিয়ান প্রেসিডেন্টও আমাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন।’
কাইলিয়ান এমবাপে (ফরোয়ার্ড)
‘আমি আমার ও দলের সবার উচ্চাকাঙ্ক্ষা সবাইকে দেখাতে চেয়েছি এবং পেরেছি। তাই আমরা এখন বিশ্বসেরা। লম্বা একটা পথ ছিল। এই জীবনটাই আমরা চেয়েছি। ফ্রান্সের জনগণকে খুশি করতে পেরে আমরাও গর্বিত।’
পল পগবা (মিডফিল্ডার)
‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপ জয়। আমার বিশ্বাস সবাইকে আমরা খুশি করতে পেরেছি।’
‘খেলার আগে আমি দলের সবাইকে বলেছিলাম স্বপ্নপূরণের থেকে মাত্র ৯০ মিনিট দূরত্বে আছি আমরা। ইতিহাসে নাম লেখাতে আমাদের ৯০ মিনিট খেলতে হবে। বাচ্চা থেকে বুড়ো, ফ্রান্সের সবাইকে আনন্দিত করতে আমাদের এই ৯০ মিনিট নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে খেলতে হবে।’
‘ফাইনালে কেবল দুইটা দলই খেলে, আর একটা দল কাপ নিয়ে যায়। আমরা এই কাপ কাউকে নিতে দেবো না। একথাটাই আমি দলকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি।’
ইমান্যুয়েল ম্যাক্রো (ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট)
টুইটারে লিখেছেন- ‘ধন্যবাদ সবাইকে’
ক্রোয়েশিয়ার যে যা বললেন-
জ্লাতকো দালিচ (কোচ)
‘বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো ম্যাচে কখনোই আমাদের পেনাল্টির সুযোগ দেয়া উচিত হয়নি। ফ্রান্স সেটা ব্যবহার করেছে যথার্থই। আমরা পেনাল্টির পরই খেলা থেকে ছিটকে গেছি।’
‘আমরা দুটো সহজ গোল হজম করেছি। একটু আগে পরে আত্মঘাতী গোল আর পেনাল্টি। ফাইনাল ম্যাচে চার গোল হজম করার পর আর সেটা জেতা যায় না।’
‘আমরা বিশ্বকাপ জিততেই এসেছিলাম। শেষপর্যন্ত আমরা লড়েছি, কিন্তু আমাদের সঙ্গে ভাগ্য ছিল না।’
‘আমরা আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত হলেও আমরা গর্বিত। ছেলেরা চেষ্টা করেছে।’
লুকা মদ্রিচ (অধিনায়ক, মিডফিল্ডার)
‘আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি না, আমাদের মাথা উঁচুতেই রয়েছে।’
‘ফাইনালে দুটি উদ্ভট গোলে আমারা জয় থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তবে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি না, বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে আমরা প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই সেরাটা দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। আমাদের খাটো হওয়ার কিছু নেই। আমাদের মাথা উঁচুতেই রয়েছে।’
‘সত্যি বলতে আমি খুশী, সমর্থকরা এমনভাবে আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে তাতে আমি আরও বেশি ভালো করতে পেরেছি।’
‘আমরা বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের রানার্সআপ। আমাদের দেশের জন্য এ অর্জন কম নয়। আমরা ভালো খেলেছি। শেষপর্যন্ত এসেছি। যদি আমরা আসরের শুরুতেই বিদায় নিতাম তবে দুঃখ পেতাম।’
সিমে ভারসাল্কো (ডিফেন্ডার)
‘আমাদের দুঃখ নেই। আমাদের সমর্থকরা নিশ্চয় বিষয়টি বুঝতে পারছে। আমাদের এই অর্জনটা ইতিহাসে লেখা থাকবে, এবং আমরা এটা ভেবে গর্বিত হবো।’
ইভান রাকিটিচ (মিডফিল্ডার)
‘আমরা হয়ত বলে বোঝাতে পারবো না আমরা আসলে কত ভালো ফুটবল খেলেছি। তবে ছোট ছোট কিছু ভুল, যে কারণে ফ্রান্স আজ চ্যাম্পিয়ন। ফ্রান্সের গ্রিজম্যান যেমন বললেন সবশেষে জয়টাই আসল কথা। আমরা বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচটা খেলে শিরোপার খুব কাছে চলে গিয়েছিলাম।’
ডেভর সুকার (ক্রোয়েশিয়া ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি)
‘আবেগ, আবেগ ও অনেক কঠিন আবেগ। খেলা শেষে ফল দেখে মনে হচ্ছে এটাই উপযুক্ত ফল। ফ্রান্সের ফুটবলার, কোচকে অভিনন্দন জানাই। আমার মনে হয় সেরা দলটাই আজ বিশ্বকাপ জিতেছে।’