চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বিশ্বকাপে নাকলবল স্পেশালিস্ট যারা

ফুটবলে আশ্চর্য সব ফ্রি-কিকের দেখা মেলে মাঝেমধ্যেই। বল অনেকটা বাঁক নিয়ে জালে ঢুকে যাচ্ছে, মোহনীয় এমনসব ফ্রি-কিকে দক্ষ যারা, তারা দক্ষতার আরো কয়েকধাপের সীমা পেরিয়ে যান বিশেষ একটি কায়দায়ও। তাদের নেয়া কিকের পথে তাকিয়ে গোলরক্ষক যখন ভাবতে থাকেন বলটা প্রায় বেরিয়েই যাচ্ছে সীমানা ঘেষে, তখন শেষমুহূর্তের বাঁকে সবাইকে হতবাক করে সেটি জালে ঢুকে যায়। যখন সত্যিকার অর্থেই গোলরক্ষকদের কিছু করার থাকে না। ফুটবলের ভাষায় গোল আদায়ের এই দক্ষতাকে বলে- নাকলবল।

যখন ফ্রি-কিক স্টাইলে করা কিকগুলো বাতাসে ভেসে যাওয়ার সময় গোলরক্ষকের সঙ্গে ঠিক প্রজাপতির মতো ছলনা করে, আর অধিকাংশ গোলরক্ষকই পরাস্ত হন, তখনই ফুটে ওঠে নাকলবলের মোহনীয় সৌন্দর্য। ফ্রি-কিক স্পেশালিস্টদেরও নাকলবল স্পেশালিস্ট বলা হয়। তবে নাকলবল রপ্ত করা খেলোয়াড় তাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনই।

নাকালবল স্পেশালিস্টদের একজন ওয়েলস ফরোয়ার্ড গ্যারেথ বেল তো বিশ্বকাপেই উঠতে পারেনি। পর্তুগাল অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো শারীরিক গঠনের কারণে বেলও নাকালবলে গোল দেয়ায় সুবিধা পান। তাদের দুজনের ফ্রি-কিক নেয়ার জন্য দাঁড়ানোর কৌশলটাই এমন শটের জন্য কার্যকরী।

লক্ষ্য করলে দেখা যায়, রোনালদো কিক না নেয়া পায়ে অন্যরকম ভাবে একটু ভর দেন, পরে অন্যপায়ে বুটের মাঝ থেকে বলের মাঝে বৈচিত্রপূর্ণ ফ্রি-কিক নেন। যা থেকে রোনালদো মাঝে মাঝে দর্শনীয় সব নাকলবল গোল আদায় করে নেন।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলের নেইমার, কৌতিনহো; আর্জেন্টিনার মেসি, দিবালা; ক্রোয়েশিয়ার মদ্রিচ, জার্মানির ক্রুজ, ফ্রান্সের গ্রিজম্যান, জিরুদ; উরুগুয়ের কাভানি, সুয়ারেজ; মিশরের সালাহ নাকালবলের ক্ষেত্রে দক্ষ।

দেখে নেয়া যাক রাশিয়া বিশ্বকাপে নাকলবলে বাজিমাত করতে পারেন কারা-

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ফ্রি-কিক থেকে নাকলবল শটে গোল করতে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞদের একজন পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ইংলিশ লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে থাকতে, আর বর্তমানে স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদেও অনেকবার নাকলবলে গোল করেছেন সিআর সেভেন। ২০১০ বিশ্বকাপে পর্তুগিজদের হয়ে ফ্রি-কিকে অসাধারণ গোল করেছিলেন। রাশিয়ায় নাকলবল মাস্টারদের মধ্যে চোখ থাকবে রোনালদোর দিকেও।

লিওনেল মেসি: নাকলবলের শটটা কতটা বাঁকানো যায় বরাবরই তার প্রমাণ রেখে চলেছেন বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠ মাতিয়ে চলা মেসি। গত বিশ্বকাপে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি-কিকে গোল করেছেন, এবারও নজর থাকবে আর্জেন্টাইন অধিনায়কের প্রতি।

নেইমার: বার্সেলোনার হয়ে সুযোগ মিলত খুব কম, তবে ব্রাজিল ও পিএসজির হয়ে ফ্রি-কিকে দুর্দান্ত করেছেন নেইমার। মাপা শটে তার নাকলবলও অসাধারণ। রাশিয়ায় ব্রাজিলের ভরসার কেন্দ্রে থাকবেন বিশ্বের সর্বোচ্চ দামি ফুটবলার। ফ্রি-কিকে গোল আদায়ে কোচ টিটের প্রথম পছন্দও নেইমারই। নাকলবল শটে অসাধারণ গোলের দেখা মিলতে পারে সেলেসাও তারকার পায়েও।

আন্থনিও গ্রিজম্যান: এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমণভাগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ফ্রান্স। যার নেতৃত্ব দেবেন স্প্যানিশ জায়ান্ট অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ জায়ান্ট অ্যান্টনে গ্রিজম্যান। লা লিগার অ্যাথলেটিকোর ফ্রি-কিকে নিজের জাত চিনিয়ে যাচ্ছেন। ফ্রেঞ্চ দলে গ্রিজম্যান ছাড়াও নাকলবলে গোল করতে সক্ষম পগবা, এমবাপে, জিরুদরাও।

ফিলিপে কৌতিনহো: বর্তমান সময়ে ফ্রি-কিকে অসাধারণ সময় কাটাচ্ছেন ব্রাজিলের আরেক তারকা ফিলিপে কৌতিনহো। গত মৌসুমে লেস্টার সিটির সঙ্গে দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে লিভারপুলকে জয় পাইয়ে দেন। রাশিয়া বিশ্বকাপে নেইমারের পাশাপাশি ইনজুরিতে ফ্রি-কিকের নাকলবল স্পেশালিস্ট হিসেবে দেখা যেতে পারে কৌতিনহোকেও।

জেমস রদ্রিগেজ: কলম্বিয়ান এ তারকা ফুটবলারের পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে থাকবে দেশ। ফ্রি-কিকে অসাধারণ প্রতিভা রিয়াল মাদ্রিদে থাকতেই দেখিয়েছিলেন। বর্তমানে বায়ার্ন মিউনিখে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো রদ্রিগেজ চলতি বছরের জানুয়ারিতে বেয়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে নাকলবল গোল করেন, যা ওই মাসে বুন্দেসলিগার শ্রেষ্ঠ গোল বিবেচিত হয়। বলাই যায়, নাকলবলে রদ্রিগেজ এবারের বিশ্বকাপে চমক দেখাতেই পারে।

টনি ক্রুজ: জার্মান দলের বিচক্ষণ ফ্রি-কিকার হিসেবে নাম আছে টনি ক্রুজের। বলের মুভমেন্ট ও বাতাসে বাঁক খাওয়াতে সিদ্ধহস্ত তিনি। সঙ্গে রয়েছেন থমাস মুলারের মতো এক্সপার্ট খেলোয়াড়। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দাপিয়ে বেড়িছে মধ্যমাঠ, বায়ার্নেও নিজের সেরাটা দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে হিসাব কসলে বিশ্বকাপে সেরা ফ্রি-কিক দাতাদের একজন হতে পারেন ক্রুজও।

পাওলো দিবালা: জুভেন্টাসের আর্জেন্টাইন তরুণ তারকা ফুটবলার গোল করা, করানোর পাশাপাশি ফ্রি-কিকেও অনেকটা পারদর্শী। জুভেন্টাসের হয়ে ফ্রি-কিকে দক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন ইতিমধ্যেই। যদিও মেসির পজিশনে খেলে থাকা দিবালার সেরা একাদশে থাকা নিয়েই সংশয় রয়েছে, তবে সুযোগ মিললে নিজের জাত চেনানোর ভালো সম্ভাবনাই আছে এ আলবিসেলেস্তে তারকার।