বিশ্বকাপের সময় ইংল্যান্ডের অপ্রত্যাশিত, আপাতদৃষ্টিতে শেষ হওয়া বৃষ্টি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। বৃষ্টির পর যদি অন্যকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে সেটা ইনজুরি। বিশ্বকাপের আগে দল ঘোষণার সময় চোট শঙ্কা থাকা খেলোয়াড়দেরও স্কোয়াডে রাখে অনেক দল। তাদের অনেকেই ফিট হয়ে ফিরেছেন, আবার অনেকেই ফিরতে পারেননি।
টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পর অনেকের ইনজুরি তো আবার বেড়েও গিয়েছে। একাধিক খেলোয়াড়কে দেশের বিমান ধরতে হয়েছে। নতুন করে চোটের খাতায় নাম যুক্ত হয়েছে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের দুই তারকার নাম, অধিনায়ক ইয়ন মরগান ও জেসন রয়। ফলে বিশ্বকাপে ইনজুরির হিট লিস্ট দিনকে দিন লম্বাই হচ্ছে।
ইনজুরির কালোমেঘ মাথায় নিয়ে যারা ইংল্যান্ডে পা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ডেল স্টেইন। তালিকায় ছিলেন- ইংল্যান্ডের মার্ক উড, ভারতের কেদার যাদব। কেদার এখন পর্যন্ত ভালোই আছেন, যদিও কঠিন কোনো মুহূর্তের জন্য এখনো ডাক পড়েনি তার। ইংলিশদের পরিকল্পনার একটা বড় অংশ উডও বেশ ভালো আছেন। কিন্তু বিশ্বকাপে একটি বলও না করেই দেশে ফিরতে হয়েছে স্টেইন গানকে। কাঁধের পুরনো চোট আবার মাথাচাড়া দেয়ায় বিশ্বকাপ স্বপ্নই শেষ প্রোটিয়া গতি তারকার। গত কয়েক বছর ধরেই এ ইনজুরি মাঠের বাইরে রাখছে তাকে। স্টেইনের জায়গায় প্রোটিয়া দলে নেয়া হয়েছে বিউরেন হেনড্রিক্সকে।
স্টেইনের মতো বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফিরতে হয়েছে আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদকে। যদিও তার ফেরা নিয়ে বেশ বিতর্কও হচ্ছে। মাত্র দুই ম্যাচ শেষে দেশের ফেরার পর রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে বোর্ডের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন শাহজাদ।
অন্যদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত অস্ট্রেলিয়া অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিস ও ভারতের ওপেনার শেখর ধাওয়ান। দুজনের কারো জন্যই পরিবর্তিত খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণা করা হয়নি। যদিও দুদলই কভারআপ খেলোয়াড় উড়িয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডে। স্টয়নিসের কভারআপ হিসেবে অজিরা নিয়েছে আরেক অলরাউন্ডার মিশেল মার্শকে, ধাওয়ানের জন্য ভারত নিয়েছে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ঋষভ পান্টকে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েন দুদলের এ দুই খেলোয়াড়।
খুবই গতিময় বোলার জফরা আর্চার, তবে হামিশ আমলার সামনে যেন সেই গতি আরও বেড়ে গিয়েছিল। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত ইংলিশ পেসারের বল হেলমেটে লেগে আঘাত পান আমলা। আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়ার পরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন, কিন্তু দলের হার ঠেকাতে পারেননি। ওই ইনজুরির কারণে পরের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে পারেননি আমলা। বাংলাদেশের কাছেই টানা দ্বিতীয় হার দেখতে হয় প্রোটিয়াদের। আমলাকে নিয়ে ইনজুরি শঙ্কাটা আছেই, তবু শনিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেছেন তিনি।
চোট সমস্যায় আছেন আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় তারকা রশিদ খানও। শনিবার সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে খেলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত খেলেছেন, দলের জন্য স্মরণীয় কিছু করতে পারেননি যদিও। ম্যাচে প্রোটিয়াদের কাছে ৯ উইকেটে হারে আফগানরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে লোকি ফার্গুসনের বাউন্সারে আঘাত পেয়েছিলেন রশিদ।
ইনজুরির কারণে দুটি ম্যাচের পুরোটাও খেলতে পারেননি সাউথ আফ্রিকার পেসার লুনগি এনগিদি। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পুরোটা খেললেও বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজ কোটার সব ওভার করতে পারেননি। দ্বিতীয় ম্যাচের পর থেকে আর মাঠেই দেখা যায়নি হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে থাকা এনগিদিকে। তিনি আসলে কবে ফিরবেন বা বিশ্বযুদ্ধের চলতি আসরে ফিরতে পারবেন কিনা সেটাও স্পষ্ট নয়।
শ্রীলঙ্কান পেসার নুয়ান প্রদীপেরও ইনজুরি আছে। যার আলোর কারণে জয়ের সুযোগ তৈরি করে শেষ পর্যন্ত অন্ধকারে যেতে হয়েছিল আফগানিস্তানকে। ইনজুরির কারণে প্রদীপ ছিলেন না বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচেও। যদিও ওই ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হয়ে যায়। তিনি দ্রুতই অ্যাকশনে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। সেটা কাটিয়ে শনিবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আবার দলে ফিরেছেন প্রদীপ।
বাংলাদেশ দলের জন্যও কম যন্ত্রণার নয় ইনজুরি সমস্যা। দলের সেরা দুই তারকা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল এই সমস্যার মধ্যদিয়ে যাচ্ছেন। মুশফিক, সাইফউদ্দিনেরও আছে হালকা চোট সমস্যা। সাকিবের মতো চোট সমস্যায় আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিগ হিটার আন্দ্রে রাসেলও। তবে কোনোমতে নিজেকে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ক্যারিবীয় পাওয়ারম্যান।
ইংল্যান্ড আসর একটি দুর্দান্ত বিশ্বকাপের সময়সূচি, যা সামগ্রিকভাবে একটি দুর্দান্ত ক্যালেন্ডারে থাকে। তবে তা সহজ না। আবহাওয়া কারণে খারাপভাবেই আঘাত পেয়েছে বিশ্বকাপে, সেটা পুষিয়ে নিতে শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের অবশ্যই অবশ্যই থাকতে হবে মাঠে। সেটা যেকোনোভাবেই হোক।