চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বিশ্বকাপের বড় পাঁচ প্রশ্ন

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৯। বুধবার জাঁকজমকের সঙ্গে হয়ে গেছে ক্রিকেটের বিশ্বসেরা প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আয়োজক দেশ ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে সাউথ আফ্রিকা। মোট ১০টি দেশ দেড়মাস ব্যাপী প্রতিযোগিতায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অংশ নেবে। ১৪ জুলাই হবে ফাইনাল। তার আগে বড় পাঁচটি প্রশ্ন নিয়ে শুরু হচ্ছে এবারের আসর-

কোন দল কী ৫০০ রানের স্কোর করবে?
শুরু থেকেই বলা হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপ হবে ব্যাটসম্যানদের বিশ্বকাপ। যেখানে রানের ফোয়ারা ছুটবে। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪০০ রানের ইনিংস গড়া যে আর বিশেষ কৃতিত্বের নয়, সেটা আলাদা করে বলে দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ইংল্যান্ডে যে রানের ফুলঝুরি ফুটতে যাচ্ছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতেই। বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগে থেকেই কোন দল প্রথমবার ৪০০ ছাড়িয়ে ৫০০ রানের গণ্ডি স্পর্শ করবে, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গেছে।

ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় রানের ইনিংস গড়ার রেকর্ড রয়েছে ইংল্যান্ডের নামের পাশে। ১২ মাস আগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ট্রেন্টব্রিজে ৪৮১ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়েছিল ইংলিশরা। দুদিন আগেই বিশ্বকাপের দেশে প্রস্তুতি ম্যাচে শক্তিশালী বোলিং ইউনিটের দল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২১ রান করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

চলতি বিশ্বকাপেই ইংলিশ রেকর্ড ভেঙে নতুন নজির গড়তে চায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে দুর্দান্ত শতরান করা শাই হোপ নিজেও মনে করেন, ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫০০ রান করার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তিনি আশা করছেন, প্রথম দল হিসাবে এমন কৃতিত্ব অর্জন করতে পারেন তারাই।

হোপ বলেন, ‘এটা অবশ্যই একটা লক্ষ্য যেটা আমরা অর্জন করতে চাই। তবে প্রথম দল হিসাবে ৫০০ রানের গণ্ডি টপকাতে পারলে, সেটা দারুণ বিষয় হবে। ইতিহাসে স্থায়ী জায়গা করে নিতে চাই সবাই। আমার বিশ্বাস, আমাদের দলে সেই ব্যাটিং শক্তি রয়েছে।’

অস্ট্রেলিয়া সাবেক তারকা মার্ক ওয়াহও বলেছেন এই বিশ্বকাপে দেখা যেতে পারে ৫০০ রানের স্কোর। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া.এইউকে তিনি বলেছেন, ‘এটা শুনতে অবিশ্বাস্য লাগে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন ৫০০ রান হবে না। কিন্তু আমি মনে করি, হ্যাঁ পারে। আমি মনে করি, এই কাজ একটা দুর্বল দলের বিপক্ষে শক্তিশালী কোনো দল করে ফেলতে পারে।’

প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে ইংল্যান্ড?
ইংল্যান্ডের চেয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার মতো ভালো কোন দল আছে কি? অন্য দলগুলোর চেয়ে অনেক বেশি পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ইংল্যান্ড। ঘরের মাঠে টানা আটটি দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ জেতা একনম্বর দল ইংলিশরা বিশ্বকাপটাও খেলবে নিজের মাটিতে। তার উপর গত দুটি বিশ্বকাপই জিতেছে আয়োজক দেশ।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক অ্যালান বর্ডারের মতে, তাদের ব্যাটিং লাইনআপ তুলনাহীন, তাদের বোলিং আক্রমণ বিচিত্র ও বিস্তৃত এবং তাদের নেতা ইয়ন মরগান শীর্ষস্থানীয় তিনজন ওয়ানডে অধিনায়কের একজন। ফলে সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের হট-ফেভারিট ইংলিশরা নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ট্রফি উঁচিয়ে ধরার দাবিদার।

কিন্তু যখন প্রত্যাশা আসে তখন সাথে চাপও আসে। এখন দেখার বিষয় মরগান বাহিনী সেই চাপ কীভাবে জয় করে এবং সেটিও ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে দাঁড়িয়ে।

সাউথ আফ্রিকা তাদের ধাঁধা কাটিয়ে ফাইনালে যেতে পারবে?
গত বিশ্বকাপ প্রোটিয়াদের জন্য একটি দুর্দান্ত টুর্নামেন্ট ছিল। ২০১৫ সালে সাউথ আফ্রিকা দলটি যা অর্জন করেছিল তা হল- বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নকআউটে ম্যাচ জিততে পেরেছিল। কিন্তু এসসিজিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের কোয়ার্টার ফাইনালের জয় ১৯৯৯ সালের সেমিফাইনাল বা ২০১১ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে হারের স্মৃতি মুছে দিতে পারেনি। দুঃখজনকভাবে, অকল্যান্ডে ব্ল্যাক ক্যাপসদের কাছে সেমিফাইনাল হেরে যায় তারা।

২০১৯ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের মতো কোনো স্টেজ নেই। লিগপর্বের খেলা শেষে সরাসরি নির্ধারিত হবে সেমিফাইনাল। ফলে ফ্যাফ ডু প্লেসিসের দলকে সেরা চারে থেকে লিগপর্ব শেষ করতে হবে। লর্ডসের ফাইনাল নিশ্চিত করতে প্রোটিয়াদের তাই একটি মাত্র নকআউট ম্যাচ জিততে হবে।

২০১৫’র সেমিফাইনালে হারা ম্যাচে অর্ধেক ফিট ভারনন ফিল্যান্ডারকে ম্যাচে রেখেছিল সাউথ আফ্রিকা। পরে অবশ্য ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার প্রধান নির্বাহীটি জনসমক্ষে প্রকাশ করেন যে, ওই টুর্নামেন্টের সময় জাতিগত কোটা পূরণ করার জন্যই তাকে খেলানো হয়ছিল। তবে এবার তারা সেটা মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন। এই পরিবর্তনের সঙ্গে নকআউট পর্বের সেই ধাঁধা কাটিয়ে এবারের বিশ্বকাপে ফাইনালেও উঠতে চায় প্রোটিয়াররা।

স্মিথ এবং ওয়ার্নার কীভাবে আন্তর্জাতিক প্রত্যাবর্তন হ্যান্ডল করবেন?
বিশ্বকাপের সবচেয়ে কৌতূহলপূর্ণ প্লটলাইনগুলোর মধ্যে একটি হল, স্টিভেন স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নার কীভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উজ্জ্বলভাবে ফিরে আসবেন। বল টেম্পারিংয়ের অপরাধে যখন তারা পুরো এক বছর মাঠের বাইরে ছিলেন।

যদিও ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট খেলে নিজেদের ভালোভাবেই ব্যাট-বলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রেখেছেন স্মিথ-ওয়ার্নার। আইপিএলে সবচেয়ে উজ্জ্বল ব্যাটসম্যানদের একজন ওয়ার্নার। সেখানে সর্বোচ্চ রান স্কোরারও তিনি। বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বে মাঠে নামার আগে সবশেষ চারটি ইনিংসে আবার ৫০’র বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন স্মিথ। এরমধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ১০২ বলে ১১৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসও আছে।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, স্মিথ-ওয়ার্নার ইংল্যান্ডের বিশাল ভিড় থেকে মনোযোগ আকর্ষণ করবেন, কিন্তু সেই ভিড়ের মধ্য থেকে তারা কীভাবে পারফর্ম করেন সেটাই দেখা বিষয়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমএস ধোনির শেষ ছোঁয়া?
তিন বছর আগে মুম্বাইয়ে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পরাজিত হওয়ার পর, ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তার ক্যারিয়ারে আসলে যেসব অর্জন হয়েছে, তারপরও তিনি খেলতে আগ্রহী কিনা? নিজের অনন্য ভঙ্গিতে ধোনি সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য তিনি যথেষ্ট ফিট।

এখন তিনি ইংল্যান্ডে রয়েছেন এবং তরুণ তারকা ঋশভ পান্টও দলে নেই। বিশ্বকাপে ভারতের ভাবমূর্তি যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে মাস্টার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান দল থেকে চলে যাবেন কিনা তা বিবেচনা করার সময় হতে পারে। ধোনি যদি আসলেই তার ক্যারিয়ারের শেষ বলে দেন, তাহলে ভারতীয় ক্রিকেট তাদের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাদা বলের ফিনিশার, বিশ্বস্ত গ্লাভসম্যান ও অনুপ্রেরণীয় নেতাকে বিদায় বলবে।