রাশিয়া বিশ্বকাপের ডামাডোলের সময়টাতে থেমে নেই ক্রিকেট। তবে একটু আড়ালে চলে গেছে খেলাটির উন্মাদনা। নিভৃতেই অবশ্য ব্যাট-বলের লড়াই জন্ম দিয়ে যাচ্ছে আলোচনা-সমালোচনার নানা খোরাক।
দেখে নেয়া যাক গত এক সপ্তাহের ক্রিকেটের হালচাল-
আফগানিস্তানের অভিষেক টেস্ট
অভিষেকেই টেস্টের কঠিন আঙিনাটা দেখে ফেলেছে আফগানিস্তান। বেঙ্গালুরুতে দুই সেশনে দুবার অলআউট হয়ে দুদিনেই ভারতের কাছে হেরে গেছে আফগানরা। কোহলিবিহীন ভারত জেতে ইনিংস ও ২৬২ রানের বড় ব্যবধানে।
শুরুতে ব্যাট করে ভারত তুলেছিল ৪৭৪ রান। লাঞ্চের আগেই শতক তুলে নেয়ার কীর্তি গড়েন ধাওয়ান। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়ে আফগানিস্তান। দ্বিতীয় ইনিংসেও বিপর্যয়, ১০৩ রানে থেমে শেষপর্যন্ত বড় হারই।
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে সিরিজ
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১৩ জুন মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। শুরুতে ব্যাট করে ৯০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও ৪৭ ওভারে ২১৪ পর্যন্ত এসে গুটিয়ে যায় অজিরা। জবাবে রুট-মরগানের ফিফটিতে ৩৬ বল হাতে রেখেই ৩ উইকেটের জয় তুলে নেয় স্বাগতিক ইংলিশরা।
স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে সিরিজে আরও এগিয়ে গেছে। কার্ডিফে জেসন রয়ের ১২০, আর বাটলার অপরাজিত ৯১ রানে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেটে ৩৪২ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ইংল্যান্ড। জবাবে কথা বলেছে কেবল শন মার্শের ব্যাটই, তার ১৩১ রানের ইনিংসটি আবার ম্যাচ বাঁচাতে পারেনি। ১৭ বল হাতে রেখেই ৩০৪ রানে গুটিয়ে অজিরা হারে ৩৮ রানে।
অস্ট্রেলিয়ার র্যাঙ্কিং পতন
দুই হারে ৩৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে নেমে গেছে অস্ট্রেলিয়া। তারা টেবিলের ৬-এ অবস্থান করছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কা টেস্টে তোলপাড়
সেন্ট লুসিয়া টেস্টের তৃতীয় দিনে খেলা শুরু হতে দেরি হয় ঘণ্টা দুয়েক। বল বদলানো নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের জেরেই এই বিলম্ব। বল বিকৃত হয়েছে দেখে আম্পায়াররা তৃতীয় দিনের শুরুতে সেটি বদলানোর সিদ্ধান্ত নেন। হাথুরুসিংহের শ্রীলঙ্কা প্রতিবাদে মাঠে নামতে অস্বীকৃতি জানায়। রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথ লঙ্কানদের বোঝানোর দায়িত্ব নেন। মাঠে ফেরে শ্রীলঙ্কা। তখন সফরকারীদের ৫ রান জরিমানা করা হয়। প্রতিবাদে আবার মাঠ ছাড়ে শ্রীলঙ্কা দল। পরে ফিরলে খেলা চলেছে যথানিয়মেই।
শ্রীলঙ্কার অভিযোগ, বলের অবস্থা দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষেই পরীক্ষা করে দেখেছিলেন আম্পায়াররা। তখন কোনো বিকৃতির কথা বলেননি। পরের কেন সেটা করা হল?
ম্যাচে মাঠের দায়িত্ব আছেন দুই আম্পায়ার আলিম দার ও ইয়ান গৌল্ড, তৃতীয় আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো।
টেম্পারিংয়ের অভিযোগ নিয়ে খেলছেন চান্দিমাল
ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি। বল বদলানো বিতর্ক নিয়েছে নতুন মোড়। যাতে দিনেশ চান্দিমালের দিকে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। ম্যাচ শেষে আনুষ্ঠানিক শুনানি হবে। লঙ্কান অধিনায়ক অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ইএসপিএন-ক্রিকইনফো লিখেছে, টেস্টের দ্বিতীয়দিনের শেষ সেশনে লঙ্কানদের বল ব্যবহারের পদ্ধতিতে প্রথম সন্দেহ প্রকাশ করেন আম্পায়াররা। তিন আম্পায়ার সম্প্রচারকদের কাছে ভিডিও ফুটেজ চেয়ে নেন। তৃতীয়দিন সকালে সেই ফুটেজ দেখেন।
ভিডিওতে এক পর্যায়ে আম্পায়াররা দেখতে পান, চান্দিমাল পকেট থেকে কিছু একটা বের করে মুখে দিচ্ছেন, পরক্ষণেই লালা লাগিয়ে দিচ্ছেন বলে, তারপর বল তুলে দেন লাহিরু কুমারার হাতে। সেটা দেখেই টেম্পারিংয়ের অভিযোগ আনেন।
আইসিসির আচরণবিধিতে লেখা, মাঠে লেভেল ১ এবং ২ মাত্রার অভিযোগ উঠলে, দিনের খেলা শেষ হওয়ার পর ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বা পরেরদিন খেলা শুরুর আগপর্যন্ত আম্পায়ারা অভিযোগ তোলার সুযোগ পাবেন। সেটা টেনেই আম্পায়াররা বলছেন, ভিডিও ফুটেজের জন্য অপেক্ষাতেই পরেরদিন সকাল পর্যন্ত গড়িয়েছে সিদ্ধান্ত।
ম্যাচে অবশ্য সুবিধাজনক অবস্থায় আছে শ্রীলঙ্কাই। প্রথম ইনিংসে তারা করে ২৫৩ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জবাবে করে ৩০০। চতুর্থদিন পর্যন্ত ৮ উইকেটে ৩৩৪ রান তুলে ২৮৭ রানের লিড নিয়ে বসে আছে সফরকারীরা।
নেদারল্যান্ডস-আয়ারল্যান্ড-স্কটল্যান্ড ত্রিদেশীয় লড়াই
ত্রিদেশীয় টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টে প্রথম দুই ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে বিপদে পড়া আয়ারল্যান্ড ৪৬ রানে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথম জয়ের দেখা পায়। পরের দিনই রোমাঞ্চকর টাই করেছে এ দুদল।
টাই ম্যাচে রোববার স্কটিশরা শুরুতে নির্ধারিত ওভারে ৪ উইকেটে ১৮৫ রান তোলে। জবাবে আইরিশরা করে ৬ উইকেটে ১৮৫ রানই। শেষ ওভারে আয়ারল্যান্ডের দরকার ছিল ৭ রান, হাতে ৫ উইকেট। অভিজ্ঞ কেভিন ও’ব্রায়েন স্ট্রাইকে থেকেও পারেননি। বোলিংয়ে এসে সাফইয়ান শরিফ দুর্দান্ত এক ওভার করেন।
পাকিস্তান-স্কটল্যান্ড টি-টুয়েন্টি
সিরেজের দুই টি-টুয়েন্টিতেই স্কটিশদের উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারে ৪ উইকেটে ২০৪ রান তোলে পাকিস্তান। জবাবে ৬ উইকেটে ১৫৬ রানের বেশি যেতে পারেনি স্কটল্যান্ড। ৪৮ রানের সেই জয়ের পর ৮৪ রানে দ্বিতীয় ম্যাচে জেতে পাকিস্তান। তাদের করা ১৬৬ রানের জবাবে ১৪.৪ ওভারে ৮২ রানেই গুটিয়ে যায় স্কটিশরা। সেখনে হেরেই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে খেলতে গেছে স্কটল্যান্ড।