শিল্প-সাহিত্য আর জমিদারির বাইরে গণমানুষের উন্নয়ন চিন্তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী
ছুটে বেড়িয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। গ্রহণ যেমন করেছেন নতুন নতুন ধারণা; সবখানে ছাপও রেখেছেন তার বহুমুখি উন্নয়ন দর্শনের। যা এখনও আলো ছড়াচ্ছে বিশ্ববাসীর সামনে।
কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আর নওগাঁর পতিসর, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এই তিন জমিদারি দেখাশোনার পাশাপাশি যে কাজটি জোরেশোরে করেন তা হলো পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এরই সফল বাস্তবায়ন ক্ষেত্র ছিল পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতন সংলগ্ন ৬০ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা শ্রীনিকেতন।
এখানে তার একান্ত সহকারী ছিলেন মার্কিনী কৃষি অর্থনীতিবিদ এলমহার্স্ট, যিনি বিয়ে করেন ব্রিটিশ ধনাঢ্য তরুণী ডরোথিকে। তারই অর্থানুকূল্যে যুক্তরাজ্যের ডেভনে সাড়ে ১২’শ একর জমির ওপর রবীন্দ্রনাথের উন্নয়ন চিন্তার আলোকে গড়ে ওঠে আরেক শ্রীনিকেতন, ডার্টিংটন হল।
ভারতীয় দার্শনিক সতীশ কুমার জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উৎসাহে গড়ে ওঠে এই ডার্টিংটন ট্রাস্ট হল। এই হলের প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত সহকারী লিওনার্ড এলমহার্স্ট। তিনি ভারতে তিন বছর কাটান রবীন্দ্রনাথের কিছু প্রকল্প তদাকরির কাজে। সেসময় তিনি শ্রীনিকেতনের খামারে কাজ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। ফেরার সময় রবীন্দ্রনাথ তাকে তাগাদা দিলেন শ্রীনিকেতনের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে কিছু গড়ে তোলার। যেখানে শিক্ষা কেন্দ্র, কলা কেন্দ্র, হস্ত শিল্প কেন্দ্র, কৃষি কেন্দ্র থাকবে।
কালেরসাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক’শ বছরের পুরনো স্থাপনা আর গাছগাছালিতে পূর্ণ সবুজ প্রাঙ্গন। যা বিশ্ববাসীকে এখনও চিনিয়ে দিচ্ছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের পল্লী উন্নয়ন দর্শনের পথগুলো।
ডার্টিংটন কলেজ অব আর্টসের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ পিটার বক্স বলেন, এলমহার্স্ট আমেরিকান হলেও ব্রিটিশ সমাজে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তার মাথায় এসেছিলো রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে। তিনি রবীন্দ্রনাথের মতো করেই ভাবতে চেয়েছিলেন। এই হিসেবে বলবো রবীন্দ্রনাথ এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
ডাটিংটন হলে বহুকাল ধরেই চলছে মানবিক শিক্ষার স্কুল। মানবতার পথে আত্মশুদ্ধি যারা চান তারা ছুটে আসেন এখানে। আবিস্কার করেন অন্য এক রবীন্দ্রনাথকে। সেখানে আসা একজন পর্যটক বলেন, জানি এখানে মানবিকতার শিক্ষা দেয়া হয়। এই স্কুলটি আমাকে টানে বেশি। কিন্তু ডার্টিংটন হলে কতখানি টিকে থাকছে রবীন্দ্রনাথ, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয়দের।
যুক্তরাজ্য ডেভন প্রবাসী প্রকৌশলী আবু এম আব্দুল্লাহ অভিয্গে করে বলেন, এখানে অনেকবার এসেছেন রবীন্দ্রনাথ। এখানে এসে তিনি অনেক ছবি আঁকতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় রবীন্দ্রনাথের বেশির ভাগ ছবিই নিলাম হয়ে গেছে।