বিলুপ্তির নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে পৃথিবী। যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে আসা এ সিদ্ধান্তে অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে মানব প্রজাতিও বিলুপ্তির প্রথম শিকার হিসেবে অনুমান করা হয়েছে। স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন এবং বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেরুদণ্ডি প্রাণিরা সাধারণ সময়ের তুলনায় ১১৪ গুণ বেশি হারে হারিয়ে যাচ্ছে।
এই গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল গত বছর ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সাথে সামঞ্জ্যস্যপূর্ণ।
নতুন গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন গবেষক জানান, ‘আমরা এখন ষষ্ঠ ধাপের বিশাল গণ বিলুপ্তির পর্যায়ে প্রবেশ করছি।’
এরকম বিলুপ্তির আগের ঘটনাটি হয়েছিলো ৬৫ মিলিয়ন (৬৫০ লাখ) বছর আগে, যখন একটি বিশাল উল্কাপিণ্ড পৃথিবীকে আঘাত করায় ডাইনোসরদের বিলুপ্তি হয় বলে ধারনা করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে ডাইনোসরের মৃত্যুর সময়ের তুলনায় বর্তমান বিলুপ্তিকে অধিকতর ধারাবাহিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯০০ সালের পর থেকে ৪০ ‘রও বেশি মেরুদণ্ডি প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে। বিজ্ঞানীদের মতে সাধারণত এই পরিমাণ বিলুপ্তি ১০ হাজার বছরে একবার পরিলক্ষিত হয়।
প্রধান গবেষক জিরার্ডো কেবেলোস বলেন, প্রাণ ফিরে পেতে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এ ধরণের পর্যায়ে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়াকে যদি অনুমোদন করা হয়, তবে প্রথমেই আমাদের প্রজাতি হারিয়ে যাবে।
সায়েন্স এডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বিলুপ্তির কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ এবং বন উজাড় করাকে দায়ী করা হয়েছে। বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের বিষয়ে ইঙ্গিত করে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে মৌমাছির দ্বারা পরাগায়নের সুবিধাও মানুষের তিন প্রজন্ম অতিবাহিত হওয়ার পর আর থাকবে না।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল এরলিক বলেন, পুরো বিশ্বে অনেক প্রজাতির উদাহরণ রয়েছে যারা দ্রুতই মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে।
ফসিলের রেকর্ড মূল্যায়ন করে বিজ্ঞানীরা মেরুদণ্ডি প্রাণীদের বিলুপ্তির ঐতিহাসিক হার পর্যবেক্ষণ করেন। বিশ্ব গণ বিলুপ্তির ঘটনায় উপনীত হওয়ার সময়ের পূর্বের তুলনায় বর্তমান বিলুপ্তির হার ১০০ গুণ বেশি বলে তারা জানিয়েছেন।
প্রকৃতি সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন (আইইউসিএন) এর মতে, প্রতি বছর কমপক্ষে ৫০ টি প্রাণি বিলুপ্তির নিকটবর্তী হয়। ৪১ শতাংশ উভচর প্রাণি এবং ২৫ শতাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণি বিলুপ্তির হুমকির মুখে পড়ে।