রাজধানীতে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। রাতে বিজয় সরণী মোড়ে অভিযানের অগ্রগতি দেখতে আসেন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।
প্রায় ৮ হাজার অবৈধ বিলবোর্ডে ছেয়ে আছে নগরীর আকাশ প্রকৃতি। উচ্ছেদ অভিযানে যোগ দিয়ে শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের দাবি, কোনো ভাবেই যেন মাঝপথে বন্ধ হয়ে না যায় এ অভিযান।
সোমবার রাতে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান পর্যবেক্ষণ করতে এসে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, গত রাতেও অভিযান চলেছে। আজ রাতেও তা চলবে। ঈদের জন্য দুই চার দিন বন্ধ হলেও এরপর আমরা আর্মি, নেভি, সিভিল এভিয়েশন, এয়ারফোর্স, রেলওয়ে, রাজউক, রোর্ডস এন্ড হাইওয়ে সবাই মিলে আমরা চেষ্টা করব।
তিনি আরোও বলেন, আমরা চাই অবৈধ বিলবোর্ড কোথাও না থাকুক। আমরা বিলবোর্ড এ্যাসোসিয়েশনের সাথে কথা বলেছি তারা সরাবে বলে কথা দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সে উদ্যোগ দেখছি না। সেজন্য আমরাই এখন অবৈধ বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলছি।
তিনি আরোও বলেন, আমরা চাই যারা এ ব্যবসা করে তারা আমাদেরকে সহোযোগিতা করুন। যেন আমরা পরস্পরকে ভাল অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি।
তবে বিলবোর্ড মালিকদের অভিযোগ, এই ব্যবসার সঙ্গে ছোট বড় প্রায় ৩১টি প্রতিষ্ঠান জড়িত। হঠাৎ এ অভিযান চালানোর ফলে সব ব্যবসায়ীরাই পথে বসবে। উচ্ছেদ অভিযানের সময় উপস্থিত থাকা উদায়ন আর্ট এন্ড পাবলিসিটির স্বত্বাধিকারী মারুফ রেজা বলেন, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে ১৫ জনের বেশি কর্মচারি আছে। আমাদের ঈদের সময় এমন অবস্থার সৃষ্টি করেলে পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় দাঁড়াবো? এখন ঈদের সময় আমরা বিলবোর্ড সামলাবো না ঈদের জন্য কিছু করব।
‘আমরা এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছি। আমরাও চাই এর একটা সুষ্ঠু সমাধান হোক। বিলবোর্ডগুলো এভাবে অপসারণ না করে আমাদের একটা সময় দেওয়া হোক।’
আরোও সময় দেওয়া প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, তারা বলুক প্রয়োজনে আরো দশ দিন সময় তাদের দেওয়া হবে। তবে এবার আর এই শহরের যত্র-তত্র বিলবোর্ড ঝুলতে দেওয়া হবে না।
উচ্ছেদ অভিযানে মেয়রের সাথে ছিলেন, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি বলেন, বিলবোর্ড ফুটপাথকে ঢেকেছে, গাছপালাকে ঢেকেছে, আকাশকেও ঢেকেছে। আমাদেরকে নিঃশ্বাস বন্ধের মতো অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সেখানে এই বিলবোর্ড যদি উচ্ছেদ হয়, আমরা আকাশকে দেখতে পারি, পুরো শহরকে দেখতে পারি। এরচেয়ে আনন্দের আর কিছু নাই।
আবু সায়ীদ আরো বলেন, আমি মেয়রকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, পরিবেশবাদিরা এবং ঢাকাবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে যে আবেদন জানিয়ে এসেছেন তিনি তাতে সাড়া দিয়েছেন। তিনি যে সাহস দেখিয়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী যে ঢাকাকে সাজাতে চেয়েছেন এবং নতুন মেয়র অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছেন এই জায়গা থেকে আপনার কি প্রত্যাশা এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, যারা নির্বাচিত হলেন এবং জনগণ যাদের নির্বাচিত করলো তাদের দায়িত্ব এটা, তারাই করবে।
মেয়রের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. আকতার মাহমুদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মেয়রকে সাধুবাদ। ঢাকায় বিলবোর্ডগুলো যেভাবে লাগানো হয়েছে তা শুধু কুৎসিত আর বিপদজনকই না তার অনেকগুলোর অনুমতি নেই।
গত ৩০ জুন রাজধানী বিলবোর্ড সরিয়ে নেওয়ার আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র আনিসুল হক বলেন, বেঁধে দেওয়া সময়ে কোনো কোম্পানি তাদের বিলবোর্ড সরিয়ে না নেওয়ায় সিটি করপোরেশন নিজে থেকেই বিলবোর্ড উচ্ছেদ করছে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অবৈধ বিলবোর্ড সরিয়ে নিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক।
সোমবার রাতভর বিজয় সরণি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সড়ক ধরে বিলবোর্ড উচ্ছেদ চলে মহাখালী পর্যন্ত।
এর আগে, ১২ জুলাই মেয়রের সভাপতিত্বে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, রেল, সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং ডিএনসিসি’র এক সমন্বিত সভায় সবাই একমত হন যে ঢাকায় কোন অবৈধ বিলবোর্ড থাকবে না।