চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

দিনাজপুরে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু মাহমুদা

শাহ্ আলম শাহী: যে বয়সে হেসে খেলে বেড়ানোর কথা ৮ বছরের শিশু মাহমুদার, সেই বয়সে সারা শরীরে দগদগে ক্ষতের যন্ত্রণা নিয়ে অস্থির সে। বিরল এক রোগে হাত ও পায়ের ২০টি আঙ্গুলই গলে পড়ে গেছে তার। হাত দিয়ে সে যেমন কিছু ধরতে পারে না, তেমনি পায়ে ভর দিয়েও ঠিকভাবে হাঁটতে পারে না মাহমুদা। কিন্তু বিরল এই রোগে আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার দরিদ্র ভ্যানচালক বাবা বহন করতে না পারায় মেয়েকে হাসপাতালের বদলে মেয়েকে বাড়িতেই রেখেছেন। তাই নিরুপায় হয়ে তিনি সরকার ও বিত্তবান মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কামদেবপুর গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক আব্দুর রহিমের মেয়ে মাহমুদা। ৮ বছর আগে জন্মের পর থেকেই মাহমুদার শরীরে দেখা দেয় ফোসকা পড়া রোগ। পরে তা ঘায়ে পরিণত হয়। এখন তার সারা শরীরে দগদগে ঘা। দিনের পর দিন ঘা থাকার ফলে মাহমুদার হাত ও পায়ের আঙ্গুল গলে পড়ে গেছে। তাই হাত দিয়ে সে কিছুই ধরতে পারে না, আবার পায়ে ভর দিয়ে চলতেওে পারে না ঠিকভাবে। হেসে খেলে বেড়ানোর এই বয়সে সে সবসময় ব্যস্ত থাকে চুলকানো ঘায়ের যন্ত্রণায়। ঘা ও পুষ্টিহীনতার ফলে ঠিকভাবে বেড়েও উঠেনি সে।

শিশুটির মা সাহিদা খাতুন জানায়, জন্মের পর থেকেই মেয়ের এই ধরনের সমস্যা। অনেক চিকিৎসা করালেও কোন লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। এখন সহায়-সম্বল শেষ করে অর্থের অভাবে চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বড় মেয়ে মাহফুজা স্কুলে যায়, মাহমুদারও স্কুলে যাবার বয়স হয়েছে। কিন্তু এই অবস্থায় তাকে স্কুলে পাঠানোও যাচ্ছে না। মাহমুদার সারাদিন কাটে তার নিজ বাড়িতে ও বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পূনর্ভবা নদীর বাধের পাড়ে বাঁশের তৈরি মাচানের উপর বসে।

মাহমুদার বাবা আব্দুর রহিম জানান, ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মেয়ের জন্মের পর থেকেই শরীরে দেখা দেয় ফোসকা পড়া রোগ। দিনাজপুরে অনেক চিকিৎসা করালেও তাতে কোন লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় করতে পারেননি।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলুর রহমান জানান, বাবা-মা একই পরিবারের অর্থাৎ মামাতো-ফুপাতো ভাই-বোন হওয়ায় জেনেটিক সমস্যার কারণে মাহমুদা বিরল ‘এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা (Epidermolysis Bullosa)’ রোগে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। রোগে আক্রান্ত মাহমুদার হাত ও পায়ের আঙ্গুলে ঘায়ের কারণে নতুন করে চামড়ার আবরণ তৈরি হয়েছে। ফলে হাত দিয়ে যেমন কিছু ধরতে পারে না, তেমনি পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে না সে।

তবে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু মাহমুদার সরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে সে সুস্থ হয়ে অন্যান্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসী ও স্বজনদের।

মাহমুদার জীবন বাঁচাতে সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষ ও সরকারের প্রতি সাহায্য চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন তার বাবা-মা ও স্বজনরা। তাকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: ডিবিবিএল মোবাইল ব্যাংকিং- ০১৭৫১-৩০০১৭৮৩। আব্দুর রহিমের সাথে যোগাযোগের মোবাইল নম্বর-০১৭৫১৩০০১৭৮।