দিন বদলেছে! সভত্যার নতুন আলো আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এখন শহর থেকে পৌঁছেছে দূরের গ্রামে। মেঠো পথের বদলে গ্রামীণ জনপদে এখন পিচঢালা পথ দৃশ্যমান। সেই সঙ্গে স্যাটেলাইট টেলিভিশন গ্রামের মানুষের সাদা কালো চোখে বহুমাত্রিক রঙিন জগত তুলে ধরছে।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ঐতিহ্য আর সরলতার ভাঁজে মোড়া আমাদের গ্রামগুলো বিদ্যুতের ঝকঝকে আলোর মাঝেই বিবর্ণ রূপে বদলে যাচ্ছে! সম্প্রীতির বন্ধন আর সামাজিক একাত্মতা গ্রাম থেকে ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে! হ্যাঁ, দেশের প্রত্যন্ত জনপদের গ্রামগুলো বহুরূপে বিভক্ত হয়ে গ্রামের এক একটি বাড়ির উঠান যেন এখন হয়ে যাচ্ছে বিচ্ছিন্নতার সাক্ষি!
বছর ঘুরে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসা খুশির ঈদ এখন গ্রামে অনেকটাই আনন্দশূন্য! আগে ঈদ নামাজের পর গ্রামের ছোট-বড় সবার মধ্যে কোলাকুলির যে অভূতপূর্ব দৃশ্য আমারা দেখতাম, এ বছর গ্রামে তার বৈপরীত্য লক্ষ্য করলাম। ঈদ নামাজের পর অর্ধেক মানুষকে কোলাকুলি করতে দেখিনি। হ্যাঁ, শহুরে ‘কর্পোরেট হ্যান্ডসেক’ একটু ভিন্নভাবেই এবার গ্রামে চোখে পড়লো।
এখানেই শেষ নয়। ঈদের দিনে আগে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি খাওয়া-দাওয়া করতে যাওয়ার যে রেওয়াজ ছিলো তা বর্তমানে একেবারেই কমে গেছে। পারিবারিক বিরোধ, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব আর ভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান গ্রামের মানুষকে বহুমাত্রিক কায়দায় বিভক্ত করে ফেলেছে। এক একটি বাড়ির বিশাল উঠান এখন পরিবারকেন্দ্রিক বিভক্তিতে টুকরো টুকরো হয়েছে। বাড়ির উঠানে দেখা যাচ্ছে একাধিক পরিবারের সীমানা প্রাচীর কিংবা বিভক্তির বেড়া!
গ্রামীণ জনপদে এমন সামজিক বিচ্ছিন্নতার অন্যতম কারণ হচ্ছে সু-শিক্ষার অভাব আর সম্পত্তিগত দ্বন্দ্ব। যার সমাধান আমরা প্রশাসনিক-সামাজিক কিংবা পারিপার্শ্বিক উদ্যোগে করতে পারি।
সবুজ-শ্যামল গ্রামকে সরলতার আবহে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব যে আমাদের। কারণ, ওই গ্রামই যে আমাদের প্রকৃত শেকড়।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)