বিনাটিকিটে ভ্রমণ করায় রেলমন্ত্রীর আত্মীয়কে জরিমানা করে আলোচনায় আসা ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে এসে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
কোন প্রক্রিয়ায় টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিলো সেটা জানতে চেয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শো কজ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, যেভাবে টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে সেজন্য আমরা বিব্রত। অভিযোগ মিথ্যা হলে টিটিইকে পুরস্কৃত করা হবে। তার প্রমোশনও হতে পারে। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইতিমধ্যে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
‘‘যে প্রক্রিয়ায় ঘটনা ঘটেছে সেটা অনভিপ্রেত। রেলযাত্রায় শৃংখলা আনতে একজন টিটিইর যা দায়িত্ব তিনি সেটাই করেছেন। তবে যাকে বরখাস্ত করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে অতীতে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘যে টিকেট ছাড়া ভ্রমণ করেছে তাকেও রেলের স্বার্থ দেখতে হবে তেমনিভাবে যাত্রী হয়রানিও করা যাবে না। টিটিইদেরও আচরণ ঠিক করতে হবে। মন্ত্রী, সচিব, রেলকর্মী ছাড়া কারো টিকিট ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ নেই। যাত্রী হতে যে শর্ত আছে সেসব পূরণ করেই যাত্রী হতে হবে।’
টিটিইকে বরখাস্তর কারণ হিসেবে এক যাত্রীর হাতে লেখা একটি অভিযোগপত্রের কথা জানান পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন। ৫ মে ঘটনার দিন ইমরুল কায়েস নামের এক যাত্রী অভিযোগটি দিয়েছেন। টিটিই শফিকুল ইসলামকে ওই দিনই বরখাস্ত করা হয়েছে।
৫ মে রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে বিনা টিকিটে তিন যাত্রী ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তারা ট্রেনের এসি কামরায় বসেছিলেন। তাদের কাছে ভাড়া চাইলে টিটির সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে ওই তিন যাত্রী নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে এসি কামরা থেকে শোভন কামরায় পাঠান। ওই তিন যাত্রী শোভন কামরাতেই ঢাকা পৌঁছান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে মুঠোফোনে টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তর বিষয়টি জানানো হয়।
অভিযোগপত্রে ওই যাত্রী দাবি করেন, তিনি ৫ মে দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে ট্রেনে ওঠেন। এরপর টিটিই এসে তাদের কাছে টিকিট চান। তিনি টিকিট পাননি বলে জানান।
পরে টিকিট দিতে বললে টিটিই তিনজনের ভাড়া বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেন। ৩০০ টাকার টিকিট ৫০০ কেন জানতে চাইলে তিনি ৩ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হবে বলে জানান। এত টাকা দেওয়া সম্ভব না বলাতে টিটিই খেপে যান। তিনি বকাবকি করেন।
ওই যাত্রীর দাবি, টিটিই মাদকাসক্ত ছিলেন। তিনি তার শাস্তি দাবি করেন।