গত তিনদিন ধরে দেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়, বিনাটিকিটে রেল ভ্রমণের দায়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের শ্বশুরকূলের ৩ আত্মীয়কে জরিমানা। এরপর শাস্তি হিসেবে মন্ত্রীর স্ত্রীর নির্দেশে সেই টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত।
ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গত ৫ মে রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ঈশ্বরদী থেকে বিনা টিকিটে এসি কামরায় রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে তিন যাত্রী ভ্রমণ করছিলেন। টিকিট না থাকায় তাদের জরিমানা করে এসি কামরা থেকে শোভন কামরায় পাঠিয়ে দেন টিটিই। বিষয়টি জানার পর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ওই টিটিইকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নির্দেশ দেন মন্ত্রীর স্ত্রী। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই মুঠোফোনে টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তর করা হয়। এমনকি তার বিরুদ্ধে উল্টো কিছু অভিযোগও আনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
স্বাভাবিকভাবেই বিষয় নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মন্ত্রীর স্ত্রীর এমন আচরণে অসংখ্য মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া জানান। নিজের কর্তব্য আটল থাকায় টিটিই শফিকুল ইসলামের পাশে দাঁড়ান তারা। এমনকি বিভিন্ন গণমাধ্যমও ঘটনার সমালোচনা করা হয়। এর মধ্যে আবার রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি তোলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এমন পরিস্থিতিতে ঘটনার তিনদিন পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। কোনো ভণিতা না করে সরাসরি নিজের স্ত্রীর করা ভুল স্বীকার করে নেন। বলেন, ‘মন্ত্রীর বউ হিসেবে তার এটা করা ঠিক হয়নি। রেলের বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সে আমাকে বললেই পারতো। যে প্রক্রিয়ায় ঘটনাটা ঘটেছে, তাতে কিছুটা ব্যত্য়য় হয়েছে। এ জন্য আমি বিব্রত।’
পাশাপাশি তিনি টিটিই শফিকুল ইসলামের সাময়িক বরখাস্তে আদেশ প্রত্যাহার করার কথাও জানান। শুধু তাই নয়, কোন প্রক্রিয়ায় টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিলো, সেটা জানতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শো’কজ করা হয়েছে বলেও জানান।
কোনো ভণিতা না করে রেলমন্ত্রী নিজের স্ত্রীর দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন, এ জন্য তিনি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু ক্ষমতার দাপট কি শুধু রেলমন্ত্রীর স্ত্রীই দেখিয়েছেন? এটা কি বাংলাদেশে নতুন কিছু? নিশ্চয়ই না। যে কেউ এই প্রশ্নের উত্তরে বলবেন, ক্ষমতার বৃত্তে থাকা অসংখ্য মানুষ প্রতিদিনই তাদের ক্ষমতা জাহির করেন। সেইসব ক্ষমতাবান মানুষের দাপটে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ।
ক্ষমতাধরদের কাছে এসব যে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, তা কিছুদিন আগেও একটি চায়ের বিজ্ঞাপনে তুলে ধরা হয়েছিল। ওই বিজ্ঞাপনে আমরা মাস্তান টাইপের এক ব্যক্তিকে বলতে দেখেছিলাম, ‘কী কইলেন? আমার ভাতিজার চাকরি যদি না হয়, আপনারে ওভারনাইট বান্দরবানে পাঠাইয়া দিমু।’
আমরা জানি, বিজ্ঞাপনের এমন চরিত্র দেশের সবখানেই রয়েছে। অনেকেই আছেন যারা কথায় কথায় নিজেদেরকে ‘জনগণের সেবক’ দাবি করেন, ‘ওভারনাইট বান্দরবানে পাঠাইয়া দিমু’ তাদের কাছে স্বাভাবিক ডায়লগ।
আমরা মনে করি, রেলমন্ত্রী আজ যে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন, অন্যরাও তা অনুসরণ করবেন; সেটাই সাধারণ মানুষের চাওয়া।