মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান রোহিঙ্গাবিরোধী নির্মম সেনা অভিযান বন্ধ করতে দেশটির সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জাইদ রাদ আল হুসেইন। রোহিঙ্গাদের উপর চলমান হত্যাযজ্ঞকে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। জাতিসংঘ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাতিসংঘের নানা সমালোচনা থাকলেও অতীতে এই সংস্থার উদ্যোগে অনেক বিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর চলমান গণহত্যা বন্ধ করতে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে মূল ভূমিকা পালন করতে পারে এই সংস্থাটি। সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয়েছিল অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট। ৬৩ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। মূলত আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে। এমন অবস্থায় ইস্যুটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যদেশগুলো সভার আহ্বান করতে পারে। সভায় সমস্যার সমাধানের সুষ্ঠু পথ তৈরি করে মহাসচিবের মাধ্যমে তার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া উচিত। রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির উর্ধ্বে উঠে এই সমস্যাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। অর্থ ও ক্ষমতায় এগিয়ে থাকা দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানরাও এ বিষয়ে ভূমিকা পালন করতে পারেন। নির্বিচারে মানুষ হত্যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অবিলম্বে মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে এই গণহত্যার কারণে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। কেবল পিটিশন সাইন করে গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। জাতিসংঘ তার দায়িত্ব পালন করবে?