টি-টুয়েন্টি সিরিজে একটি জয়, দুটিতে সম্ভাবনা জাগানো। টেস্ট সিরিজ ঘিরে বাড়িয়ে দিয়েছিল প্রত্যাশার পারদ! ইন্দোরে প্রথম দিনশেষে মেলেনি হিসাব। বিবর্ণ দিনের ব্যাটিংটা ভুলেই যেতে চাইবে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে শুরুতেই রোহিতের উইকেট তুলে নিতে পারলেও রাখা যায়নি ধারাবাহিকতা। ৬৪ রানে পিছিয়ে থাকা ভারত দাপটেই ঘোরাচ্ছে ছড়ি।
হলকার স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে চা বিরতির পরপরই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সফরকারীরা প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় মাত্র ১৫০ রানে। ফিফটি ছুঁতে পারেননি কেউই। ইনিংসে ফিফটি পেরোনো জুটি সবে একটা। সেই জুটির দুজন, মুশফিকের ৪৩ আর মুমিনুলের ৩৭-এর পর বলার মতো রান কেবল লিটনের ২১!
টাইগারদের অল্পতে থামিয়ে কোহলিকে স্বস্তি এনে দেয়ার পথে ৩ উইকেট নিয়ে দিনের সেরা মোহাম্মদ সামি। ২টি করে উইকেট নিয়ে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন ইশান্ত, উমেশ ও অশ্বিন।
বাংলাদেশ-১৫০/১০ (৫৮.৩), ভারত-৮৬/১ (২৬) (প্রথম দিন শেষে)
দিনের শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে আবার উল্টো চিত্র দেখাচ্ছে ভারত। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেখানে খাবি খাচ্ছিলেন, সেখানেই সাবলীল আগারওয়াল-পূজারারা। ৬ রান করা রোহিত শর্মাকে উইকেটের পেছনে লিটনের ক্যাচ বানিয়ে আবু জায়েদ রাহি যে ধাক্কাটা দিয়েছিলেন, তার পিঠে আর কেউ সহযাত্রী হতে পারেননি।
তাতে আর সাফল্যও মেলেনি। রোহিতের উইকেট হারিয়ে ৮৬ রান তুলে দিন শেষ করেছে ভারত। মায়াঙ্ক আগারওয়াল ৩৭ ও চেতেশ্বর পূজারা ৪৩ রানে দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন। খেলা শেষের আগে আগে স্লিপে আগারওয়ালের লোপ্পা ক্যাচটা ইমরুল না ফেললে, রাহি শুক্রবার নতুন ব্যাটসম্যানের বিপক্ষেই হয়ত বল করতে পারতেন!
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মুমিনুল। অধিনায়কের সিদ্ধান্তটা ঠিক প্রমাণ করতে পারেননি কেউই। শুরুর জোড়া ধাক্কার পর প্রথম সেশনেই তিন উইকেট হারিয়ে বিপদ ঘটে, পরের সেশনে উইকেট পড়ে আরও ৪টি। চা বিরতির পর নেমে তো অলআউটই।
এই টেস্ট দিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। তবে মাঠে নেমেই ইশান্ত শর্মা ও উমেশ যাদবের গতি-সুইংয়ের তোপে পড়ে টাইগাররা। নড়বড়ে হয়ে পড়েন ইমরুল কায়েস ও সাদমান ইসলাম। দুই ওপেনার দ্রুত সাজঘরে ফেরার পর বাঁচতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুনও।
প্রথমে ফেরেন ইমরুল। দেখেশুনে শুরুর পর ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে এসে তাল হারান। যাদবের সামান্য লাফিয়ে ওঠা বলে ডিফেন্স করতে যেয়ে ব্যাটের কানার খোঁচায় তৃতীয় স্লিপে ধরা পড়েন বাঁহাতি ওপেনার। থামে ১৮ বলে ৬ রানের কাঁপাকাঁপি।
আরেক উদ্বোধনী সাদমানও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তাকে সাজঘরের পথ দেখান ইশান্ত। স্বাগতিক পেসার রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে যেটা করাতে চেয়েছিলেন, সাদমান সেটাই করেছেন! পা না নড়িয়ে লেংথ বলে ড্রাইভ খেলতে যেয়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে জমা পড়েন ২৪ বলে ৬ রান করা বাঁহাতি ওপেনার।
তিনে নামা অধিনায়ক মুমিনুল ও মিঠুন শুরুর ধাক্কা সামলে নিচ্ছিলেন। যাদবের করা ইনিংসের ১৪তম ওভারে মিঠুনের প্যাডে বল লাগলে রিভিউ নিয়েছিলেন কোহলি। সেদফা বেঁচে গেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি মিঠুন। মোহাম্মদ সামির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ১২ করে, ৩৬ বলের ইনিংস তার।
লাঞ্চ বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই জীবন পেয়েছেন মুশফিক। অশ্বিনের ঘূর্ণি তার ব্যাটে ছোবল দিয়ে স্লিপে গেলে সহজ ক্যাচটি তালুবন্দী করতে পারেননি রাহানে। যাদবের বলে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে স্লিপে মুশফিককে জীবন দিয়েছেন কোহলিও। তার আগেই অশ্বিনের বলে স্লিপে মুমিনুলের ক্যাচ নিতে পারেননি রাহানেই। সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি টাইগার দলপতি।
যে অশ্বিনের বলে স্লিপে তার ক্যাচ ছেড়েছিলেন রাহানে। সেই অশ্বিনকে উইকেট দিয়েই সম্ভাবনার ইনিংসটা ফেলে এসেছেন মুমিনুল। ফেরার আগে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৬৮ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েছেন। বোল্ড হওয়ার সময় তার নামের পাশে ৬ চারে ৮০ বলে ৩৭ রান।
মুশফিকও বেশিদূর যেতে পারেননি। সামির বলে বোল্ড হন ৪৩ করে। তিনবার জীবন পাওয়া ইনিংসটি ৪ চার ও এক ছক্কায় ১০৫ বলের। একই ওভারে সামির পরের বলেই রানের খাতা খোলার আগে এলবিডব্লিউ মেহেদী মিরাজ। ক্যারিয়ারে প্রথমবার গোল্ডেন ডাক তার। টিভি রিপ্লে অবশ্য বলছিল রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন, সামির করা বলটি লেগস্টাম্প মিস করত!
তার আগেই অবশ্য সাজঘরে আরেক ভরসা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অবদান মাত্র ১০ রান। অশ্বিনের বলে স্টাম্প ভেঙেছে তার। ফিরেছেন তুলনামূলক দিনের সবচেয়ে বাজে শটে। অশ্বিনের নিরীহদর্শন একটি বলে সুইপ খেলতে যেয়ে বোল্ড। বল তার লেগসাইড দিয়ে যেয়ে আঘাত হেনেছে অফস্টাম্পে। তার কিছু আগে অশ্বিনের বলে দিনের সবচেয়ে পিচ্ছিল হাতের রাহানের মাধ্যমে পেয়েছিলেন জীবন। রাহানের যেটি তৃতীয় ক্যাচমিস এদিন!
মহাবিপদের মাঝেই চা পান থেকে ফিরে তড়িঘড়ি সাজঘরে হাঁটা দেন শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান লিটন দাস। ৪ চারে ৩১ বলে কুইক ২১ রানের ইনিংসটি থামে তার, ইশান্তের বলে কোহলিকে ক্যাচ দিয়ে। শেষদিকে তাইজুল হন রানআউট। আর ইবাদতকে বোল্ড করেন উমেশ।
মোস্তাফিজুর রহমানকে ছাড়াই এদিন একাদশ সাজিয়ে নেমেছে সফরকারীরা। খেলছেন দুই পেসার ইবাদত হোসেন ও আবু জায়েদ রাহি। ভারত খেলাচ্ছে তিন পেসার।
এই ম্যাচ দিয়ে ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ’ যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। নতুন চ্যালেঞ্জ, বাড়তি গুরুত্ব। ইন্দোর টেস্ট দিয়েই আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক হল টিম টাইগার্সের। অন্যদিকে টেস্টে ভারত এক নম্বর দল। চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর পর এপর্যন্ত খেলা পাঁচ ম্যাচেই জিতেছেন বিরাট কোহলিরা। ভারতে এসে সবশেষ সিরিজে দাঁড়াতেই পারেনি সাউথ আফ্রিকা। সেখানে প্রথমদিনেই নড়বড়ে অবস্থানে বাংলাদেশ!