বাংলাদেশে তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা মিথ চালু আছে, সিনিয়রদের ছায়া হয়ে থাকেন তারা। এটি যে সবক্ষেত্রে ঠিক নয়, সেটি প্রমাণ করেছেন ইয়াসির আলি রাব্বি। বিপিএলে মোহাম্মদ আশরাফুলের বিকল্প হিসেবে খেলতে নেমে চিটাগং ভাইকিংসের তিন নম্বর জায়গাটা নিজের দখলে নেন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। ১১ ম্যাচে তিন ফিফটিতে ৩০৭ রান করার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে বহুগুণ।
ইয়াসির এবার টি-টুয়েন্টির ধারাবাহিকতা টেনে নিয়ে যেতে চান ৫০ ওভারের ক্রিকেটে। শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নামবেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে। এবারের লিগে থাকতে চান এক থেকে সেরা তিনের মধ্যে। আসতে চান স্বপ্নের জায়গা- জাতীয় দলে। চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে ইয়াসির জানালেন, বাংলাদেশ দলে যে সংস্করণেই ডাক আসুক সেরাটা দেয়ার মনচ্ছবি নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তিনি।
বিপিএল দারুণ গেছে। প্রিমিয়ার লিগের ওয়ানডে সংস্করণ নিয়ে কী ভাবছেন?
ভালো একটা মৌসুম শেষ করেছি। বিপিএল ভালো গিয়েছে, চেষ্টা থাকবে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার। আমাকে ঘিরে আমার ক্লাবের যে প্রত্যাশা থাকবে, সেটা ফুলফিল করা। আমার নিজেরও কিছু প্রত্যাশা আছে। এবার প্রিমিয়ার লিগে এক থেকে তিনের মধ্যে রানস্কোরার হতে চাইবো এবং চেষ্টা থাকবে ওভাবে খেলার।
দেশি-বিদেশি সেরা তারকাদের মঞ্চে ধারাবাহিকভাবে রান করার পেছনে কোন জিনিসটা বেশি ভূমিকা রেখেছে?
আমি বলব, আল্লাহর রহমত আর পরিশ্রম। পরিশ্রম না করলে ওই জায়গাটা, এলিট লেভেলে খেলা আসলে খুব কঠিন। মানসিক দৃঢ়তা অবশ্যই দরকার, তবুও এগিয়ে রাখব পরিশ্রমকেই।
বিপিএলে আশরাফুলের জায়গায় ব্যাটিংয়ের সুযোগকে কীভাবে দেখেছিলেন?
আশরাফুল ভাই আমার শ্রদ্ধাভাজন একজন বড় ভাই। উনি আমাকে খুব আদর করেন। আসলে এটা পেশাদার একটি জায়গা। কখনও মাথায় আসেনি আমি আশরাফুল ভাইয়ের জায়গায় খেলছি বা তাকে টপকে খেলছি। লক্ষ্য ছিল আমাকে যেখানেই সুযোগ দেয়া হোক, যেন সেখানেই ভালো খেলতে পারি।
দেশি-বিদেশি বড় বড় ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলে নিজেকে কতটা সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন বলে মনে হয়?
বিপিএল অনেক হাই-ইনটেনসিটির খেলা। সর্বোচ্চ লেভেলের ক্রিকেট বলতে পারেন। বিশ্বের নামী-দামি ক্রিকেটার খেলে গেছেন। প্রথমদিকে মাথার মধ্যে একটু সংশয় ছিল, আমি আদৌ পারবো কিনা! এদিক থেকে মানসিকভাবে সাহস দিয়েছে সতীর্থরা। দলে বিদেশি ক্রিকেটার যারা ছিলেন, তারা বলতেন তোমার ভেতরে কিছু আছে বলেই এখানে আছো, না থাকলে এখানে থাকা হত না। ওরা যদি বল করে উইকেট পেতে পারে তুমি চার-ছক্কা মারতে পারবা।
বিপিএলে সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা কোনটি। যা খুব কাজে দেবে সামনে?
মোটামুটি দলের সবার সাথেই কথা বলেছি। রবি ফ্রেইলিঙ্কের ক্রিকেটীয় জ্ঞান একটু অন্যরকম মনে হয়েছে। তার সাথে কথা বলে টেম্পারমেন্ট নিয়ে অনেককিছু শিখতে পেরেছি। ও আমাকে সবসময় একটা কথা বলতো, নিজেকে বিশ্বাস করো। যদি নিজেকে বিশ্বাস না করো, বুঝবে না তুমি কেমন খেলোয়াড়। আর তোমার ব্যাটিংয়ের শক্তিশালী দিক যেটি, সেটির মধ্যে থাকলেই সাফল্য আসবে।
আপনার ব্যাটিংয়ে শক্তির জায়গা কোনটি বলে মনে করেন?
সোজা ব্যাটে সামনে খেলতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। যেটাকে ‘ভি’ বললে সবাই বোঝে। সাইড শট আমার অত পছন্দ না।
আপনার দলের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। বেশ কয়েকটা ম্যাচেই তার সঙ্গে জুটি বেধে ব্যাটিং করেছেন। সে অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
মুশফিক ভাইয়ের ব্যাটিংয়ে একটা জিনিস সবসময় লক্ষ্য করি। আমি সাধারণত এক-দুইটা ডট বল হয়ে গেলে মারার চেষ্টা করি পরের বলটা, কিন্তু মুশফিক ভাই ওটা যদি মারার বল হয় তাহলে মারে, ভালো বল হলে এক নিয়ে জায়গা ছেড়ে দেয়। তার এই জিনিসটা মাথায় নিয়েছিলাম যে, কয়েকটা ডট হলেও সমস্যা নেই। উইকেটে যদি থাকি, আমার রান করার সক্ষমতা আছে। মাথা ঠাণ্ডা রেখে ওভাবেই খেলতাম। যেটি খুব কাজে দিয়েছে।
বিপিএলের অভিজ্ঞতা ঘরোয়া ওয়ানডে সংস্করণে কতটা কাজে লাগবে?
ওয়ানাডে ফরম্যাটে কাজে লাগবে সবচেয়ে বেশি। টি-টুয়েন্টিতে যদি মনে করতে পারি, একটা-দুইটা ডট হলেও সমস্যা নেই। তাহলে ওয়ানডেতে তো আরও বেশি সময় নিয়ে আরও আরামে খেলতে পারব।
বয়সভিত্তিক দলে আপনার ব্যাচের অনেকেই বাংলাদেশ দলে খেলেছেন, কেউ কেউ এখনও খেলছেন। আপনিও নিশ্চয়ই সে পথে যেতে চান?
অবশ্যই। জাতীয় দলের ভাবনাতেই আছি। যখন যে সংস্করণেই সুযোগ দেয়া হবে ওখানেই সেরাটা দেয়ার অপেক্ষায় আছি।
ব্যাটিং পজিশনে কোন জায়গায় নিজেকে দেখতে চান?
দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে তামিম ভাইকে অনুসরণ করি। দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়ার ডেমিয়েন মার্টিন। তিনি চার-পাঁচে ব্যাট করেন। আমারও চার-পাঁচে ব্যাট করার ইচ্ছা আছে।
ক্রিকেট নিয়ে পরিবারের উৎসাহ নিশ্চয়ই এখন বেড়েছে?
আমার পরিবার কখনোই আমাকে কম উৎসাহ দেয়নি। যখন থেকে ক্রিকেট শুরু তখন থেকেই পরিবারের সমর্থন পেয়ে আসছি। এখন তো আরও বেশি পাচ্ছি। মানসিক সাপোর্ট বাবা-মা’র কাছ থেকে সবসময় পাই। তারা আমাকে ইতিবাচক রাখতে চেষ্টা করে। বোঝায় আমি অন্যদের চেয়ে কম না। নিজের উপর আস্থা রাখতে বলেন সবসময়। আশা করি তাদের স্বপ্ন সত্যি করতে পারব।
এক নজরে ইয়াসির আলির ক্যারিয়ার
প্রথম শ্রেণি: ৪৬ ম্যাচ, ৭২ ইনিংস, রান-৩০১০, গড়-৪৯.৩৪, সেঞ্চুরি-৬টি, ফিফটি-১৯টি
লিস্ট ‘এ’: ৫০ ম্যাচ, ৪৭ ইনিংস, রান-১২৬৮, গড়-৩৩.৩৬, সেঞ্চুরি-১টি, ফিফটি-৯টি
টি-টুয়েন্টি: ২০ ম্যাচ, ১৮ ইনিংস, রান-৪৭০, গড়-২৬.১১, ফিফটি-৪টি, সর্বোচ্চ-৭৬